শাহীদ লোটাস এর কবিতা
কাঠুরিয়ার কাঠ কাটা
কাঠুরিয়া কাঠ কাটে, পাখিরা উড়ে যায় গাছের সীমানায়।
এভাবেই মৃত্যু হয় গাছ ও মানুষের
মানুষ মূলত নিজরাই নিজেকে কাটে কাঠুরিয়া হয়ে।
ঘাম ঝরে ঝরে কালো লৌহ জাতিয় দেহ কাঠুরিয়ার সম্পদ
কুড়ালের ধার কাঠুরিয়ার ভালোবাসা, করাতের সান কাঠুরিয়ার প্রেম,
গাছের চিৎকার কাঠুরিয়ার বাদ্য,
কাঠুরিয়া কাঠ কাটে ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
ব্যস্ত শহরের বুকে বিকেলের রোদ্দুর ?
আলোর সকালে সাদা গ্রাউনের ফুটন্ত হাসি ?
চশমার আড়ালে লুকিয়ে দেখা
চিলতে আকাশ ?
তবে কি সে ভালো বেসে ছিলও
মায়াবী রাতে চাদের বুকে নিজেকে দেখে
চাদরে জড়ানে চিবুকের ঘ্রাণ!
মমের লজ্জা ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
শহরের উপর মেঘলা আকাশ ?
কবিতা পড়ার দিন ?
বৃষ্টির ছন্দে, অঝরে ঝরা জল ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
চাদের আলো রুপালী জলে ভেসে আসা কেউ
মায়াবতী রাতে রূপসী হয়ে রূপসীর মত!
নিদ্রার গান, ভোরের আলোয় নির্জন শহরে
নরম পাখার সাদা হাসের ছিটানো জল,
ফাল্গুনের উদাসী মনে ঘুম ঘুম চোখ
অচেনা ভালোবাসায় হৃদয়ের কান্না ।
আমাদের উঠোনে এমনি তুমি এসে ছিলে
অনন্ত কাল প্রেয়সী হয়ে প্রেয়সীর মতন ।
ডাঃ ফান্না
ডাঃ ফান্না বিষণ্ণ বিকেলে জলের ছায়া
তারা ফোটা আকাশের নিস্তব্ধ রাত্রি
মাঘের ঘুমন্ত দিনের নিস্তেজ দুপুর।
হাসির ফাকে যে ফুল
ঝরে পড়ে বিষাদের মত
সে আলোয় অসংখ্য কায়ায় হেঁটে যায়
সমস্ত বেলা ।
ডাঃ ফান্না অফুরান পাখিদের ভিড়ে
গোধূলি বেলার নীরব আলো,
রৌদ্র ঝলমলে আকাশের বুকে
উড়ন্ত একাকী পাখী।
পিচ ঢালা পথে পাশ বেয়ে একাকী যে বালিকা
হেঁটে চলে শতাব্দী ধরে
তাদেরেই বুকে জেগে রয় এমনি হৃদয়,
হাসির আড়ালে যে স্রোত অশ্রু পতনের
শ্বাসে মিশে থাকে জীবনের স্মৃতি
বিষাদের পর জেগে উঠে
বসন্তের মেঘলা দিনে,
তাদেরেই অনুলিপি ডাঃ ফান্না।
ডাঃ ফান্না সাদা গ্রাউনে আবৃত্ত অফুরান প্রেম ।
কবিবর
ক্ষুদ্রাকার কবিতা বলি আর পদ্যই বলি
সকল রচনা বালিকার দেহ মঙ্গলের স্নান রত ফোটা ফোটা জল।
এমনি কবিতা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক লেখেন মেহনতি চাষার মতো
পাশে থাকে তার নগ্ন বালিকার সবুজ ঘ্রাণ ।
কমবেশি কালিজিরা আমরা সবাই খাই
পকেট থেকে মৌমাছিরা হারিয়ে গেলে
আবার স্বপ্ন অথবা সঙ্গমের পর লেখতে বসি
বাইবেল, গীতা, কোরানের তাফসির।
এখানে কিছুই নেই
পাখিদের চোখে লেখা আছে রোদেলা আকাশ,
ও ঈশ্বরের বন্দনা ।
আমি ঠিক ঠিক যুক্তি বিন্ধায় দার্শনিক হয়ে
চলে যাই শিয়ালে ডাক শুনে ইস্টিশনে
ট্রেনে আসে ঘুমটা পড়া মাসি পিসি ও দিদি ।
‘ ফনি–মনসার বিকেল বেলায়
দেখি নাগ নাগিনী পাশে,
কোলে তার বিশ্ব মঙ্গল
সেথায় সর্প জননী হাসে । ‘
লেখতে লেখতে সিগারেটে টান দিয়ে ভাবি,
আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে
আকাশ পানি আর মগজ মায়ায়,
বৃষ্টি সাতারে আসবে
হীম ঘরে জেগে থাকা ফুটফুটে বিকেল।
এমনি বিকেল অথবা সকালে
আমাকে লিখতে হবে অনেক কবিতা,
পরিশেষে
এই কবিতা পড়ে পাঠক কিছু বুঝুক আর নাই বুঝুক
পাঠকের কেমন কেমন লাগতেই হবে,
পাঠকের মেজাজ ও মাথা কেমন কেমন না করলে
আমার লেখা কবিতা কোন কবিতাই হলো না আর ।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
স্বাধীনতার স্বপ্ন যখন আমাদের মগজে বাসা বাদে,
সর্বত্রই দেখি প্রেমিকার দল,
মাটির কলসে রেখে দেওয়া শীতল জল,
হাত পাখা, উনুনে ভাতের ফেন,
আর যুগ থেকে যুগে নকশীকাঁথার নির্ঘুম রাত্রি ।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
বা স্বাধীনতার কথা মনে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে
সর্বত্রই দেখি মায়ের আদর,
লাঞ্ছিত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিস্ফারিত রক্ত,
আঁচলে লুকানো অশ্রুর ফোটা।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
সর্বত্রই দেখি বাবার ভয় জাগানো চোখ,
দিশেহারা আপ্রাণ মিনতি, নিরুপায় দৃষ্টি ।
আমরা যখন একটি স্বাধীনতার কথা ভাবি
তখন যুবক কিশোর আর বৃদ্ধরাও এক হয়ে যাই।
হে রাজনৈতিক নেতা
আপনাকে বলছি,
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
তখন কাউকেই ভয় করিনা ।
আমাদের ধান খেত
সোনালী সকালে রুপালী ঢেউয়ে পাখি উড়ে এক ঝাঁক
আমি আর মায়াবতী দেখি প্রতিদিন এমনি অবাক।
ধানকুটনির চোখ ঝিলমিল করে আবাদি পৌষ মাস
জাগ-গান শেসে সকালের শিশিরে জেগে আছে ঘাসের পরে ঘাস।
অমৃতলোকের পথে
অমৃতলোকে যাবার পথে দেখি লাঙ্গলের সুখে রাখাল
জেগে আছে মাঠের পরে মাঠ, নৈসর্গিক সুখে খেলা করে ইষ্টিকুটুম
বৌভাতের বিকাল বেলায় নেমে আসে কদম ফুলের বর্ষা।
আমার চোখে জেগে থাকে পাতল পুরি!
স্বপ্নজালে উসকানো প্রেমে গোলা ভরে আছে আমার হৃদয়,
বৃহৎ তরঙ্গে রুপালী নাউড়ে আমি হেঁটে যাই
সবুজ সঙ্গীত যাত্রায়, আমার অমৃতলোকের আনন্দোৎসবে
শাড়ি পড়া রমণীরা শান্তির স্বপ্ন দেখায়,
দেখি জলে জলে শাপলা ফুল, দেখি মেহনতি চাষারা শান্ত্রিসেপাইয়ে
সাদা পায়রা উড়িয়েছে, কষ্টিপাথরের পরিণয়ে চাষিরা খেলা করে
নির্ঘুম ভালো বাসায়।
চন্দন মাখা সন্ধ্যায় জিরবো বলে ঘাসের উপর হৃদয় এলিয়ে দেই,
বিরান প্রান্তরে গোধূলি গোখুরের আওয়াজে মিশে আসে হট হট
রাখালের যাত্রা, পিপীলিকার ডানায় হাওয়া উড়ে যায় !
দেখি মেঠো পথে ভেজা কাপড়ে বাড়ি ফিরে কিশোরী বধূ,
ফোঁটা ফোঁটা অজস্র জল তৃষ্ণা মেটায় তার পেছনের মেঠো পথ ।
মুয়াজ্জিনের আযানে দাদা জান হেঁটে যান মসজিদে ধীর পদে।
তাকিয়ে দেখি আকাশের বুকে আকাশ,
পাখির ঝাঁকে খেলা করে রুপালী ঢেউয়ে সোনালী মায়া।
আমি সেই মায়া অমৃতলোক খোঁজে পাই,
আমাদের গ্রাম, আমাদের মেঠো পথ, আমার মা,
এইতো অমৃতলোক ।
চিলেকোঠার কবিতা
দ্রোহিতায় চিলে কোঠা আমার,
দরজা খোলা,
এত ধোয়া এত ঝানঝট জনঝট পর্বত প্রমাণ,
শিল্প প্রয়োগ কৌশলে হাড়িয়ে ফেলেছি গামছা,
চলে গেছে প্রমুদিত শিয়াল,
দই চিড়া দুধ মিষ্টান্ন ফাঁকি দিয়ে
চলে গেছে প্রয়াত কবরে,
জামদানি জীর্ণ হয় প্রাসাদে আমার,
কোথায় ঘুঘু ঢাকে ? শিরো লিপি আঁকি প্রহেলিকায়
হৃদয়রূপ আকাশে…
জ্যৈষ্ঠ আম পাকে, পাকে কাঁঠালও ওড়ে প্রজাপতি অফুরান,
পতিত জমির বুকে কুয়াসা মোড়ানো নাটক সংলাপ,
কলঙ্কিনী বধূর সাদা কাপড়ের কালো পার,
তোলপাড় দর্শক,
শীতল রাত্রির নৃত্য,
বৈঠকখানার কোলাহল ।
আজ শহরে শহরে গ্রাম পতনের ধ্বনি
নবীন যুবতীরা আঙ্গিনা হাঁটে না চকিত চাহনির মায়ায়,
জানতে ইচ্ছে হয় উঠানে ফোটে কি কেশের শোভা
নারীর কুন্তল বৃষ্য ?
এই শহরে রমণীরা নারী হয়ে আছে,
বাবুই পাখিকে কারুশিল্পী করে আঁকে কবিতায়,
কাজল বর্ণ প্রেয়সী কাঁচা মমতায় তরুণ হয়ে যায় দিনের পর দিন।
এখানে ঋতু চক্রে চৈত্রমাস আসে,
আমার প্রিয় মধুমাস ইট পাথর কোলাহলে কোথায় হাড়িয়ে গেছে ?
প্রিয় বট তলার মেলা বাঁশি নাড়ু চরকের আনন্দ রাত্রি
বুঝি পুরাণে বেধেছে বাসা।
চিলোকাঠা আমার ভোরোর কাক কোকিল হয়ে ঢাকে
বর্ষার জলধারা বিষন্নতায় ভেজায় ইট পাথর দামী ঘারি
আমি গ্রাম দেখি না, দেখি সরল মানুষ এখানে পাথর হয়ে গেছে।
আউশ আমন সোনালী ধানের তালে হাওয়া ওড়ি না কতো দিন!
আমার চিলেকোঠায় ।
কুপ্যশালা
এখানে কুপ্যশালা ছিলও,
তামা কাঁসা জাদুঘরে
চলে যাবার পর সোনা রুপা
শহরে শহরে এমনকি গ্রামেও
জয় ঝংকার এগিয়ে গেছে।
আমার দাদীর কাসার দুইটি জলপাত্র ছিলও
আরও ছিলও থালা গ্রাস বাটি
প্রতিদিন গোসল বেলায় তা সাফ করে নিতো সে
চকচক করতো রোদের আলোয়, ঘরের মেজেতে,
আজ দাদী নেই,
পাত্র গুলোও যেন কোথায় হাড়িয়ে গেলো
তিনি চলে যাবার পর পরেই।
আজে এই কুপ্যশালার গলিতে গলিতে প্লাস্টিকের বিষাক্ত গ্যাস
আমরা সোনা রোদে এই গ্যাসে জল পান করি ।
রাজনৈতিক নেতা
নেতা আজ কথা বলবেন রাজনীতিমূলক বা বিষয়ক কিছু কথা, দেশ কাল পাত্র আমরা অনেকেই বুঝি না নেতা তা ঠিক ঠাক বুঝেন, দেশজ শাক সবজি আর শরীর ডাকার জন্য সকল খবরেই আছে নেতার কাছে,দেশদ্রোহ নেতার মাঝে একদম নেই, নেতা সব সময় দেশধর্ম নিয়ে থাকেন, দেশের আচার বা ব্যবহার নিয়ে নেতা উৎকণ্ঠিত, দেশ বিখ্যাত হয়েছেন তিনি নারীবাদী সোচ্চার মানুষ বলে,নেতা দেশ বন্ধু মানুষ, সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র আমাদের নেতা, দেশহিতব্রত, দেশ হিতৈষী,স্বদেশের কল্যাণ সাধন রূপ, এমন সব উপমাই দেওয়া যায় নেতাকে।এখানে যা যা লেখা হল সব কথাই রাষ্ট্রিক, রাষ্ট্রিয়, রাষ্ট্রীয় এবং রাষ্ট্র সংক্রান্ত ।
নেতার পি,এস লেখা গুলো ধরিয়ে সংবাদিকাকে বললেন, ভেতরে যান নেতার সঙ্গে দেখা করুন, আর আগামী কালের খবরের পাতায় এই কথা গুলো ছাপিয়ে দিবেন ।
নেতা ও সংবাদিকা এক কামরায়, সংবাদিকা তাকিয়ে আছেন তার নিয়ে আসা শূণ্য কাগজ কলমের দিকে, আর নেতা তাকিয়ে আছেন সংবাদিকার স্তনাগ্রের দিকে। আজ কাল নারী দেহের বক্ষঃস্থলের গ্রন্থিবিশেষ বেশ আকর্ষণীয় হয়ে যাচ্ছে, স্তনের অগ্রভাগের বোঁটা নেতা মুগ্ধ হয়ে দেখছেন ।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ