শাহীদ লোটাসের ৮ কবিতা
জলছবি
জানি কথা ছিল না ,তবুও যেন
তুমি কথা দিয়েছিলে আমায়
আমার অপূর্ণ জীবনের দ্বারে দাড়িয়ে।
সবাই দেখেছিল ভালোবাসার প্র লিপ্ত জীবন
কি করে এত হাসে ?
এখনো শুনতে পাই তুমিই বলে ছিলে ।
উদাস পৃথিবী কেন এত চঞ্চল ?
দূরের নীলিমায় বিবর্ণ আকাশ।
অনুগত একদল দুঃখ অগ্রাহ্য করে বলে
সব মিথ্যে,
তুমি মিথ্যেবাদী।
ঘুম হারা হৃদয় আমার কত বার দণ্ডিত হল
অপমানে অবনত হল
আমি লাঞ্ছিত হই।
হঠাৎ পরাজিত জীবনের পাশে পৃথিবী বলে
বুঝি কথা ছিল এমনি ।
স্তব্ধ জ্যোৎস্নার রাতে মেঘের স্রোতে চলে
ঐ চন্দ্র
তাকিয়ে দেখি আকাশের বুকে আকাশ
রূপ রূপ খেলায় মেতেছে,
আমি শুনতে পাই অনুগত হৃদয়ের ডাক,
এ হৃদয় তোমারেই।
এ তোমারেই প্রতিশ্রুতি ,গোপন ভালোবাসা!
জলকাক চিৎকার করে নিঝুম পৃথিবীকে
কেন এত অস্থির করে তুলছে ?
গাংচিল একা একা আকাশে উড়ে
জলছবির হৃদয় আমার।
যে হৃদয় দিশেহারা, এ হৃদয়ের জন্য
যে চোখের জলে প্রত্যাশা স্নান করে
এ চোখের জন্য,
যে জীবন তোমার অনুগতে ম্লান
এ জীবনের জন্য, তুমি কি পার না ?
অনেক বৃষ্টি হয়েছে আজ, বৈশাখী নয়
কাল বসন্তী বাতাসী ঝড়ে উড়ে গেছে
পাখির বাসা, এখন সব শান্ত।
আলো আসে বৈকালিক শ্যাওলা পৃথিবীর রং
গাছের শীষ শস্য মঞ্জরী সব শ্যাওলা সবুজ।
আমার গায়ে পড়েছে শ্যাওলা পৃথিবীর দীপশিখা।
তুমি এসে দাঁড়ালে, তোমার চোখ, চুল, আঁচল
কি এক কারুকার্য
প্রতিদিনেই তুমি আস, আমার অন্য জগতে
ঝগড়া হয়, ভালোবাসা হয়, মধুমাখা ঠোঁট তোমার।
সকল হিসেব ভুলে তুমি আমাকেই ভালবাসবে
এমনি কথা হয় তোমার আমার।
কেন তুমি আজ পর হয়ে যাও ?
স্বপ্নের ঘোরে কাটে রাতের পরে রাত
অজস্র ধারা বর্ষী অশ্রু আমাকে ভিজিয়ে যায়,
তুমি আঁচল দিয়ে মুছে দাও জল
অতঃপর
তুমিও ভিজে যাও, অতন্দ্র আমরা
আঁধারে কাটাই রাতের পর রাত,
আসে রাঙা প্রভাতের আলো, তুমি হারিয়ে যাও
নিষ্ঠুর আলোর জ্বালায়
আমি আবার একা হই
নরম আলো আমাকে আদর করে বলে
তুমি কথা রাখবে,
সবুর কর আসছে মহোৎসব ক্ষণ।
তুমি আর আস না।
ব্যাকুল আনন্দ অশ্রুর স্রোতে ভাসে
হৃদয় নগরী প্লাবিত হয়, অনুভব করি
সত্যিই আমি একা।
কত গোধূলি সন্ধ্যায় তাকিয়ে থাকি
রাতের আঁধারে চারদিক অন্ধকার
প্রদীপ জ্বলে না আমার কোঠরে
আঁধারে নিঃসঙ্গ হই ঠিক পূর্বের মত।
দয়াশীল চন্দ্রের ক্ষীণ আলো
আমার ক্ষুদ্র গৃহ খানি আলোকিত করে।
আমিতো আলো চাইনি ।
অভিমানী মন উদ্দেশ্যহীন কাউকে বলে ওঠে,
আর কতকাল প্রতীক্ষায় কাটাবো ?
ঘুরে ফিরে আসে প্রভাত, দুপুর, সন্ধ্যা,
গরুর হট হট, পাখির নীড়ে ফিরা
ধোয়া ধোয়া প্রকৃতি, আমি টের পাই
তোমার পৃথিবীতে আমি আর নেই
অচেনা হয়েছি সেই কবে, যেদিন
রাতের আঁধারে পালিয়ে আসার মত
মার হাত ধরে এসেছি আমি
সে ক ত দিন হল,
রাতের আঁধার।
অচেনা আমার জন্য
ভালোবাসা থাকার তো কথা নয় তোমার।
কত ফুলের কুঁড়ি উন্মাদনায় ফুটল
মালা হবার লোভে নক্ষত্রের আলোতে
হল মলিন, মলিন মালা নীরবে
শুকিয়ে গেল লাঞ্ছনায়,
সব মিথ্যে।
পশ্চিম আকাশে শেষ আলোক ছটায়
সাঁঝের বাতি জ্বলে আকাশে
উদিত হয় শুকতারা, ক্রমাগত পাখির দল
ডানা মেলে উড়ে যায় স্বপ্নের দেশে।
তুমি কথা রাখনি
জীবন সন্ধ্যা আমার।
যে প্রেম ঢেউ খেলে অপ্রেমের স্রোতে
কেমন সে প্রেম ?
তোমাকে ভুলব বলে কতবার রৌদ্র ঝরা
মরুর বুকে চিৎকার করে বলেছি
তুমি চলে যাও, শূন্য আকাশে এক গাংচিল
মৃদু বাতাসে খবর পাঠায়
তুমি আসবে,
তুমিও বল তাই।
দিনের পর দিন থাকি আমি, আশা
মিটে না এই পিপাসা।
অবসন্নতা নিয়ে হেঁটে যাই অনেক দূর
এ পথেই তুমি হঠাৎ শুনতে পাই
বাজে তোমার পায়ের নূপুর।
আর কত দূর যাব আমি একা ?
হেমন্তের নবান্ন হল শেষ
ফসলের ঘ্রাণ মিশে গেল বাতাসে
তুমি কথা রাখনি।
কেউ কেউ দুঃখের মায়াজালে পরে রয়
আমি না হয় রইলাম দুঃখ পাওয়ার দলে
না হয় যন্ত্রণা আমায় কুড়ে কুড়ে খেল
কি আসে যায় তাতে এই পৃথিবীর কার।
চলে যায় কত কত দিন।
আবার তোমার দৃষ্টি লুকিয়ে এসে চঞ্চল করে
বুঝতে পারি তুমি আছ।
নরক গতি থেকে জেগে উঠি আবার
তুমি আমায় কথা দিচ্ছ,
আবার প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষিত হই।
আমি জানি এ তুমি নয়
তোমার হয়ে আমি আমাকেই দিচ্ছি এ কথা।
কাব্যের প্রথম প্রেমিকা
ছন্দের গাত্রোত্থানে অপরূপ কায়ায় উত্তেজনা প্রাপ্ত হয়ে
আজ শত শত কামুক কবির উত্তরোত্তর বীজ
সাদা পাতার কালো কালিতে
গদ্যের উপকূলে ঠিক ভালোবেসে ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত হেঁয়ালি হৃদয়
আমি তারই উত্তরসাধক
তরঙ্গময় আকাশ পানি আর বালুর মিশ্রণে
রূপকথার পৃথিবী
প্রারম্ভ আরম্ভ যে করেছিলেন তার প্রাপ্ত অভিশাপে আজ
আমাদের শায়িত ইন্দ্রিয় বিলাস
স্বপ্নের ঠিকাদারিতে শতশত সাদা-কালো প্রাসাদ
গড়ে উঠে দিনের পর দিন
কফিনে প্রেমিকা স্বর্ণ শতদল
কবিত্ব কাবিনে তাকে হারাতে হল
স্বেচ্ছা বিহারীর কামিজ বোতামে
কালো দেশে মলিন বালিকা কাব্যের কৌশলে
কয়েদি হয়েছে অনন্তকালের
ধোয়া উড়ে সাদা সাদা
কালমেঘ, বৃষ্টি, রৌদ্র,
তাকে উপাসনা করে আমাদের কাব্যের প্রেম পাত্রী ।
বিশ্বাস
ফাল্গুনী বাতাসে উড়ে যায় অভিমান
জীবন জলাঞ্জলি দিব বলে ভালোবাসি আগুন
ফিকে হলুদের দেশে গিয়েছিলে তুমি।
তুমি যা গ্রহণ করলে অজান্তেই বর্জন হল অনেক
আকাশ স্পর্শ করবে বলে উঠছ উঁচুতে
মাটি দুরে যায় অনেক আমাকে সঙ্গী করে,
আর কত দূরে চলে যাবে তুমি ?
বিষকে বিশ্বাস করা যায়
প্রেমিকাকে নয় ।
উহ্যমান
আমিতো দেখিনা তাকে
হয়ত সতের পেরিয়ে গেল বছর
দেখা হয়েছিল তার আমার
তবুও কেন
কুঁড়ে কুঁড়ে কাঁদায় আমায়?
তখন পৃথিবী ছিল সবুজ
ট্রেন যেত প্রতীক্ষার পর
ঝক্ ঝক্… ঝক্…
আমরা পাশা-পাশী, কত উল্লাস।
বাতাসে তখন মকুলের ঘ্রাণ ছিল
কুড়ি ঝরে যেত দিনের পর দিন।
আকাশে এখন রৌদ্র ফুটে
দিগন্ত আর খুঁজি না আগের মত
সময় চলে যায়
রূপকথা বড় ফালতু মনে হয়
মনে হয় পাগলের প্রলাপ।
আচ্ছা আমিতো দেখিনা তাকে।
শৈশব হারিয়েছি সেই কবে
তাকে হয় না দেখা কত কত দিন পেরিয়ে গেল
তবুও কেন
কুঁড়ে কুঁড়ে কাঁদায় আমায়?
সে কি ঘাস হয়ে গেছে
এই পৃথিবীর বুকে ?
তার দেহ থেকে
ঘষি শুষে নিয়েছে নিজেদের জীবন ?
সে কি মাটিতে একাকার ?
আমিতো দেখিনা তাকে
তবুও কেন জেগে ওঠে সে
সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে ।
আমিতো দেখি না তাকে।
বিবর্ণ বাতাসে
মরীচিকার বিবর্ণ বাতাসে
স্বপ্ন গুলো ধূসর আকাশে উড়ে একা ।
হিমাগারে রাখা ভবিষ্যৎ
এক দুই শত লম্ফে ছুঁয়ে যায়
জীবনের আকাশ ।
ফাল্গুনী বাতাসে উড়ে যায়
ফিকে হলুদ পাতা
জীবন জলাঞ্জলি দিবে বলে
ভালোবাসে ছাই।
ফিকে হলুদের দেশে গিয়ে ছিলে তুমি ?
প্রতীক্ষায় মৃত্যুর স্বাদ
চুইয়ে চুইয়ে পড়ে আমাদের মাটির ঘরে
আলো নেই বলে খুঁজি না রঙ
রঙ্গিলা মানুষ গুলো
কালো জীবনে মুঠো মুঠো স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়।
আকাশের উপরে আকাশ ।
স্বপ্নের ঝাঁক উড়ে যায়
মরীচিকার বিবর্ণ বাতাসে
বিবর্ণ বাতাসে
বাতাসে..,
তোমার জন্য
যদি তুমি ভূমণ্ডল চাও,
তোমাকে দিব
ঐ জ্যোতির্মণ্ডলের সমস্ত অধিকার।
যদি তুমি জোনাকির ক্ষীণ আলোতে উল্লাস খোঁজ,
তোমাকে দিব
নক্ষত্র ভরা তারার জ্যোৎস্না।
যদি তুমি জল চাও,
তোমাকে দিব এমন প্রেম,
যেখানে তুমি-আমি মরিমরি করেও
ভালবাসবো দু-জন দু-জনারে।
অন্য বসন্ত
এখানে বসন্ত ম্লান হয়ে আছে
কমলা রঙের শুকনো পাতায়,
ঝরে ঝরে উলঙ্গ হয়ে আছে প্রকৃতি।
দূরের রোদ্দুর আকাশে
দৃষ্টি মেলে আছে কে ?
নিরস ছন্দে চঞ্চল তার মন
সে তো রূপসী নয় তবুও মনে হয়,
শুষ্ক ঠোঁট তার বিড়বিড় করে
হাওয়া উড়ে গায়ের মলিন আঁচল
গুপ্ত অভিলাষের নীরস খেলায়
চুল উড়ে তার, নির্জন নীরবতায়
ভাসে ভারী কান্নায় ফুলে উঠা অশ্রুর শ্বাস।
নিঃসঙ্গ শঙ্খচিল রোদ্দুর স্নান করে
চিৎকারে আতংকিত করে চারদিক।
ফিকে হলুদ ফাল্গুনী হাওয়া
উদাস পৃথিবী আজ।
কোন বৃক্ষ থেকে আসছে
ব্যর্থ কোকিলের করুণ সুর।
শুকনো বাতাসে উড়ে কিশোরীর অভিলাষ।
ঊষার পৃথিবী আছে, পাখি আছে,
হিমেল রাত্রি আছে, সব চলে
ঠিক আগেরই মত।
তবুও জেগে উঠেছে স্বাদহীন মনের অশান্তি
পূর্বাহ্ণ মধ্যাহ্ন অপরাহ্ণ চলে পৃথিবীর নিয়মে
আসে কাল আসে ঋতু আসে বসন্ত
এই বসন্তের সব, কিশোরীর অশ্রুতে ভেজা।
সাফা
প্রস্তর পাহাড়ে সহবত
আছি অনেক অনেক দিন হল।
স্তব্ধ পাষাণ পাথর সূর্য আলোতে
চিক চিক করে জলের স্রোতের মত
যেন বইছে সত্যিই জল আর জল।
তুবড়ি বাজিয়ে কে সাপ ধরতে যায় ?
মনের বিষাক্ত সাপ ব্যথিত আজ।
কারা ঐ ঘোরতর কোলাহলে হাঁটে ?
না, কেউ নয়, মনের সাদৃশ্য।
প্রখর রৌদ্রে মিশে আছি
সাদা সাদা পাথরে।
তোমরা কি কথা কও ?
প্রাণ আছে ?
তোমরাও কি ভালবাসতে পার মানুষের মত ?
বিরহে কি কাঁদ বিচ্ছেদের পর ?
প্রথম এ রকম নানান কথা
বলেছি পাথরের সনে
পাথর তো বলেনি কথা,
স্তব্ধ পাষাণ পাথর।
অনেক দিন হল,
মনে পরে যখন মানুষ ছিলাম,
নির্বাক বুকের ভেতর পিপাসায় কাতর
তৃষ্ণা পীড়িত মন দৃষ্টি নিয়ে এলো পাথরের স্তূপে।
পিপাসা মেটাবো বলে দ্রুত উঠি চূড়ায়
দেখি চারদিক শূন্য ।
দূরে দূরে যতদূর দৃষ্টি যায় সর্বত্রই বিশালতা
বৃক্ষলতা হীন মরু মরীচিকা সব
মরুর লূ হাওয়া টের পেয়েছিলাম
মৃত্যুর হাতছানি।
আকাশ-মরুর মিলন, মাঝে বইছে বালুকা ঝড়
আমি প্রথম বুঝতে পারলাম মৃত্যুর ঘ্রাণ
জনাকীর্ণ এই বুকে আমি একা।
অশান্ত মরুর বুকে উঠেছে ঘূর্ণিবায়ু
অদৃশ্য করছে এই ঝড়
শন শন শন রব উঠেছে চারদিকে ।
পাথর গুলো শান্ত,
আমি টের পাই, আমার শ্বাসরোধ হয়ে যায়
মৃত্যুর দূত আমাকে ছুঁয়েছে
আমি টের পাই পাথরের গায়ে লুটে পড়ছে
আমার শক্তিহীন দেহ,
আমি টের পাই।
দূর থেকে বালুর ঝড় আছরে পরে
আমাদের গায়ে,আমাকে ঢেকে দিয়েছে
পাথর-আমি আমরা মিলে মিশে হলাম একাকার
সেই বুঝি হয়েছিল অপূর্ণ জীবনের বাসর আমার।
অনেক অনেক দিন হল।
আলো-বাতাস-তারা-নক্ষত্র অনেক পেয়েছি।
এলোমেলো ধূলিরাশি ছেয়ে যায় আকাশ বাতাস
আমাদের ডেকে যায় আবার প্রকাশ করে,
জ্যোৎস্নার রাতে ঘুমিয়ে থাকে আমাদের দল।
পাথরের ঠোঁটে মিশেছে আজ আমার ঠোঁট
পাথরের দেহে মিশেছে আজ আমার দেহ।
সূর্যলোক অথবা চন্দ্রলোকে আমরা ব্যাকুল নই
আমাদের আলোতে আমারা সাজাই
আমদের জগৎ।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ