শাহীদ লোটাস-এর ১০০ কবিতা
চুনুরি শাড়ী
চুনুরি শাড়ীর অববাহিকা বন্ধনের অভাব,
আবাসিক নাগরিক যৌবনে ইলিমিলি ইচ্ছে গুলো
লাঙ্গলের দণ্ডে একের পর এক কষ্ট খুড়ে
উড় জীবন ক্ষুধায়,
অতঃপর
শ্বেতবর্ণ হরিণে সওয়ার হয়ে
দেখি একদার নিষ্ঠ শতেক শতেক পাপীদের হাসি,
এই জন্মের পারলৌকিক আর পরম্পরাগত প্রেম,
ঔরস্যে জীবিকার পথ।
কংসবণিক দেখুন কড়াইয়ে শুভ সমাপ্তি,
অভিজাত সবজি, অবসন্ন প্রেম,
কড়াই অদৃশ্য আলোতে হারিয়ে যায় ফিরে এসে আবার।
গৃহিণীর আসঙ্গ আবদারে রক্ত ঝরে,
প্রেম ক্ষুধা ক্লান্তির পর প্রেমে মজে গাছ সংক্রান্ত ইতিহাস লিখতে বসেছে
আমাদের অন্ধ ছাগল ছানা
আমাদের ইতিহাস করে,
এভাবেই চুনুরি শাড়ীর জীবনকাল।
চিলেকোঠায় আজ আমাদের অসংখ্য চিলেঘুড়ি উড়ন্ত উজ্জীবন।
দারিদ্র্য
পৃথিবী গভীর স্তব্ধতার আবছায়ায়
এসেছে ওপার থেকে সব প্রাণ।
আলো-আঁধারি প্রাণ গুলো
রই রই করে খুঁজে আমাদের।
এখন আলো-আঁধারি প্রাণ এক আমার সম্মুখে!
ভাঁজে ভাঁজে অজস্র চোখ তার
কালো না ফর্সা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না
তার নীল চোখে দেখছে আমায়।
প্রাণ খোর ক্ষুধার্ত প্রাণী এ।
স্তব্ধ পাখিরা
যেন লুকিয়ে গেছে কোথায়
ব্যাঙ প্রহরী হয়ে সতর্ক করে চারদিক,
বনে গেছে আলেয়ার পৃথিবী!
আলো-আঁধারি প্রাণী এভাবে তাকিয়ে আছে কেন ?
ঝলমল করে নীল চোখ তার
নগ্ন সে।
সে এগিয়ে আসছে,
ভয়ে চোখ বুজে রইলাম আমি,
তবুও দেখতে পাচ্ছি
তার বুকে কালিমাময় অসংখ্য খোলা মুখ
ভিতরের লতানো চোয়াল,
আমি দেখতে পাচ্ছি তার সব ।
আমি চোখ মেলে তাকালাম
সত্যিই সে এগিয়ে আসছে সমান্তরালে,
মৃদু বাতাস আমার ঘামে ভেজা গায়ে
উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আধারে অদৃশ্য সব!
মুখো-মুখি সে আর আমি,
আবারও চোখ বুজলাম,
হয়ত এ মনের ভুল
নিঝুম রাত্রিতে ।
আমার সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে,
আমি শোনতে পাচ্ছি ক্রমাগত ঝর ঝর শব্দ,
ঘুঙুরের ঝমঝম,
নূপুরের আওয়াজ, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি বুঝতে পারছি
অবিশ্রান্ত ঝি ঝি আমাকে ঘিরে ফেলেছে।
চোখ মেলে তাকালাম আবার,
চোখের মাঝে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,
দেখি তার বুকে আমি
আমাকে ছুঁতে চলেছে তার অসংখ্য চোয়াল
তার চোখ আমার চোখ ঢেকে রেখেছে এখন।
পোড়াও সমাজ
সন্ধ্যা ধূমায়িত অন্ধকারে তুমি
এলিয়ে দিলে ভালোবাসার নগ্ন কাহন।
বাঁশবনের ক্ষণভঙ্গুর পাখিগুলো
লালিমার সমাপ্তিতে স্তব্ধ হয়ে আছে
হয়ে আছে বোবা!
নগ্ন বধূ তোমার দেহ ঢেকেছে
সোহাগে ঝলসানো দেবতার চাবুক,
রক্তাভ চোখে কার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছ একা ?
এখানে, অস্থিচর্মসারে,
নগ্ন অভিলাষে,
কত কত নগ্নতায় কাটাও রাতের পরে রাত।
তুমি কি জানো না আধো-আধো প্রেমে
কুকুরের দল জলাতঙ্ক ছড়াবে বলে
মিছিলে নেমেছে পতিতার বাজারে,
এই,
এই!!!
চারদিক রাঙা
পৃথিবী অন্ধকার!
তুমি কোন পথে উড়িয়েছ তৃষ্ণার আঁচল ?
এক, দুই, তিন…
চন্দ্র এলিয়ে যায় বিশুদ্ধ পরিতাপের নগ্ন সময়ে,
তুমি শীৎকারে পোড়াও সমাজ।
ধৈর্য
হতাশায় আকাশটাকে মনে হয়
বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দেই
চোখের নোনা জলে ভিজিয়ে দেই
স্বার্থপর পৃথিবী।
আমাকে দেখে উনি তো চিন্তিত নন
মোটেও চিন্তিত নন, উনি আমার আপন জন
গুরু, বয়োজ্যেষ্ঠ, উনি কেন নির্বিকার ?
ঘৃণা করব না অভিমান করবো বুঝতে পারছি না,
উনি হাসলেন।
বললেন, ধৈর্য ধর!
জীবনের আরও কিছুটা সময় পার করে বুঝলাম,
আসলে চলতে চলতে ওনারা বুঝে গেছেন
জীবন কখনো এক জায়গা থেমে থাকে না।
প্রতীপ
একটি রাত প্রতীক্ষায় আছে আমাদের!
আলো নেই, আঁধার নেই, অপেক্ষায় বিবর্ণ বাতাস ।
মহাজ্ঞানী ঠিক স্বার্থ বুঝে চলে
কিন্তু বুঝতে পারেনা তারা অন্ধ,
এঁটেল মাটির দেশে আলু ফলাব বলে
চাষ করি রাতের পর রাত দিনের পর দিন
ঘামে সিক্ত হই জমি
সিদ্ধি গাছ গুলো ঠিক বেড়ে ওঠে ।
কতশত দিন চলে যায় রাতের আয়না।
প্রাসঙ্গিক
প্রেতাত্মার নির্বাসনে
রচিত হল আজকের এই কবিতা ।
মুমূর্ষু রাত মন্থর গতি নিয়ে এগিয়ে আসছে
পাতার চাবুকে প্রথম প্রহর চমকে উঠে
আকাশের কিনারায় ঘুমিয়ে থাকা চোখে,
নিরুপায় আলো শেষ দৃশ্য দেখবে না আর
প্রতি সেকেন্ডের মূল্য হয়ে আছে সহস্র শতাব্দী।
এখন ঘুমিয়ে যাওয়া ভালো।
প্রেতযোনি বসে আছে চুপচাপ
কি করবে তাই যেন ভাবছে আমাকে নিয়ে ।
ভৌতিক শব্দ
ভৌতিক শব্দের নিরবচ্ছিন্ন মুহূর্তগুলো
আমাকে আজো কাঁদায় দিনভর,
অলৌকিক স্মৃতির ক্যানভাসে দুপুরের কড়া রোদ
ঝলসানো ছায়াছবির একের পর এক দৃশ্য,
ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে চা-স্টলের ভাঙ্গা চুলোর লালায়িত আগুন
স্পর্শ করে প্রিয়তমার নীল ঠোঁট,
চুরুট জ্বালাবার আগেই তার সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যায় এক ফাল্গুনী বাতাস।
চুমুর বিষে অবশ হয়ে আছে সে
কোন এক বীর রাজাকার
তাকে বীরাঙ্গনা করে চলেছে কত কত দিন,
সে ভূমিষ্ঠ করে স্বাধীন বাংলার স্বাধীন সু-পুরুষ ।
দিয়াশলাইয়ের আগুন চাই
বিনা টিকিটের যাত্রী হয়ে এলাম তোমাদের শহরে;
সোনার হরিণেরা কারবার করে কারিগরি মমতায়
স্রষ্টার কৌশলে কবুল করেছি মোকাম করেছি ধৈর্যের।
ঘামে ভেজা টাকার নোটে সুখ আছে মায়ের, বাবার স্বস্তির নিঃশ্বাস।
ভুঁইচাপা কতো কতো রাত আমাকে দিয়েছে ভালোবাসা ;
ভাতের ত্রাসে ভুলেছি সব,
বাবার চোখ তাকিয়েছিল চৈত্রের অনাহারী দুপুরে
মা ঠিক তার পাশে।
কোরান বা বাইবেল পড়ার মতো শিক্ষিত আমি নই,
শুনেছি
রিজিকের মালিক স্রষ্টা।
তুমি কি তাহলে সেই ?
নিকারের আকার ?
মায়ের মমতা?
বোনের হাসি?
বাবার চোখের ঘুম?
সব তোমার কাছে বন্দি ?
তুমি কল্পিত প্রভুর ব্যাখ্যা ?
অতৃপ্ত ক্ষুধা নিয়ে ভবিষ্যৎ রসায়ন প্রতিদিন আমার!
আমি তোমাদের শহরে!
আমার বিবর্ণ মুখে তাকিয়ে দেখ,
তুমি কি একবারও ভাববে না,
অপরাধী তুমি ?
আজ আকাশ হয়তো ভারী, কাল হবে স্বচ্ছ রৌদ্র রাঙা
তোমরা জাগবে তখন ।
অনেক অনেক দিন পর,
আমার বোনের আঁচল পুড়ে যাবে তোমাদের আগুনে,
মায়ের ক্ষুধা যন্ত্রণা বাবার আকাশ হবে ভারী
আকাশে মেঘ জমবে বৃষ্টি হবে আবার
তোমরা কেউ দেখবে না,
সেই বৃষ্টিতে হবে তোমাদের মঙ্গল স্নান।
আমি দেখবো ওপার থেকে !
চিঠি
বেনামী চিঠিটা আকাশে বিপ্লব ঘটিয়ে
আমাদের উঠোনে যখন এলো তখন বৈকাল,
হর্ন বাজিয়ে রিক্সা ওয়ালারা ঘুরে যাচ্ছে
পাখিদের সন্ধ্যা ভোজন তখনো শেষ হয়নি
বাকি আছে ফড়িং আর মৌমাছির বৈঠক কাল,
আমাদের তখনো চিঠিটা খোলা হয়নি
যখন মেয়েটা আর্ত চিৎকার করে বলল তাকে ধর্ষণ করেছে চারজন বেঈমান,
ও একজন প্রেমিক,
আজকাল দৈহিক মিলনের জন্য রাত্রি প্রয়োজন হয়না
বলেছেন এদেশের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ,
তবুও রাত বেকার আবরণে আমাদের ঘরে আসে বার বার,
আমার প্রেমিকা নেই!
বুদ্ধিমান মেয়েগুলো ঠিক বুঝে গেছে আমি বোকা ।
বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি,
যখন নর্দমায় ডুবে থাকা খাদ্য তুলে খায় বেনামী মানুষ
তরল ঝোলের মতো টপটপ ঝরে নোনা জল।
বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি
যখন সব মহিলারা তেঁতুল হয়ে যায়
আমার বান্ধবী সহ ।
বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি
যখন ৫২’৭১ এর সব দালাল কেঁদে কেঁদে বলে,
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি ।
মুরলী
কয়েকটি অনুচিন্তা থেকে অবুঝ দিদির ভালোবাসায়
হরহামেশাই হতে যাচ্ছে আপেক্ষিক পৃথিবীর খোরাক
আর
আপ্লুত প্রেমের আসরে ইলিশের গলা ছেড়ে যিনি গান গেয়ে থাকেন
তিনি ইস্পাত ঈগল ।
ঈশান মানে উত্তর-পূর্ব কোন আবার হিন্দুমতে প্রলয়ের দেবতা,
আমাদের মনের প্রলয়ের উকিল উঠানে ঊরু ছেড়ে বসে থাকেন
ঋণের তালাশি করবেন বলে.
তিনি বলেন, ঋষি বলতে অনেকেই বোঝ ধর্ম পরায়ণ চোল ওয়ালা লোক
অনেকেই এটা জানো না ঋষি মূলত বাঙালি চর্মকার জাতি,
এই সব তথ্য এডিশন করে
এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় আবার ঐতিহাসিক ঘটনা গুলো ঐরূপ ওজু নামায়
ওফাদার এক বিড়ালের হাতে তুলে দেন দেবতা ঔদ্ধত্য হলে,
ঔষধাজীবে কমবেশি সবাই কমিন খানাখন্দ আছে যার ঘরে
অথবা ঘরের নীলচে বারান্দায়,
আজ কাল আবার খেঁক শিয়ালেরও খামার হয় শুনছি
আর
কবিরা বলছেন গতানুগতিক কোন কবিতাই হবে না,
গরিবখানা বলতে বুঝতে হবে পশু পাখি অথবা যৌনকর্মীর অফিস,
দেবতা বলতে বুঝতে হবে স্বয়ং নিজেকেই,
ঘামাচি আর ঘাম বিচির মধ্যেকার প্রার্থক কি তাও ভাবছেন তেনারা,
ঘোড়া খেল আরও কত কি।
চৌকির এক পাশে বসে ছুটি চেয়ে ছায়ায় জাওলা ঝুপে
কোপ মেরে টগবগ করছেন এক ঝাঁক বাদুর ছানা,
আমার আবার টনসিল
তাই তোমাদের অতসব ঠাট্টা বুঝি না,
ঠাকুরের ডাকবাংলায় সরকারী কর্মচারীর
বেশ আমোদ রয়েছে, সরাই বিস্কিট সবজি ও নারী,
আমাদের নারীগণ ঢেঁকিতে পায় তুলে যখন ঢুক ঢুক করে দুধ খায়
তখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে কালা চান,
ণই বা নদীর কাছে তালিম নিয়ে এসেছে সে,
তালুক থাকলে তিহারী খেতাম আমরাও
থোকায় থোকায় দানব হতো ওয়েটার,
অথচ দাক্ষিণ্য দিতে গিয়ে হয়ে গেলাম ধর্মান্তর,
এই বিষয় আবার জেনে ফেলেছে ধাউড়িয়া
তাই নিয়তি বলতে কিছুই রইল না,
রইল না নিয়ামক,
প্লাটফরমে দারিয়ে তাকিয়ে আছি নদীর দিকে,
জলে প্ল্যাকার্ড ও ফাজিল ফকফক করে গাইছে বীভৎস গান,
আমি বীজগণিত বুঝি না বুঝি ভিতু হলে ঝামেলা পোহাতে হয় কম,
ভীমরতি হলেও মজলুম হওয়া যায়,
আর যাওয়া যায় মজলিসে।
একদিন
যমুনায় যুঁই ফুল দিতে গিয়ে আবদ্ধ হয়ে গেলাম রাখি বন্ধনের।
কতকত দিন পার হলো!
আজ আমি লাশ কাটা ঘরে !
এখানে লজ্জা শায়িত, পাশে শিক্ষক ষণ্ডা ও সখী,
সবাই মৃত্যুর আনন্দনে সজাগ,
ভালোবাসার হিল্লোল তুলো আমাকে করেছে হেকিম।
কাঠুরিয়ার কাঠ কাটা
কাঠুরিয়া কাঠ কাটে, পাখিরা উড়ে যায় গাছের সীমানায়।
এভাবেই মৃত্যু হয় গাছ ও মানুষের
মানুষ মূলত নিজরাই নিজেকে কাটে কাঠুরিয়া হয়ে।
ঘাম ঝরে ঝরে কালো লৌহ জাতিয় দেহ কাঠুরিয়ার সম্পদ
কুড়ালের ধার কাঠুরিয়ার ভালোবাসা, করাতের সান কাঠুরিয়ার প্রেম,
গাছের চিৎকার কাঠুরিয়ার বাদ্য,
কাঠুরিয়া কাঠ কাটে ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
ব্যস্ত শহরের বুকে বিকেলের রোদ্দুর ?
আলোর সকালে সাদা গ্রাউনের ফুটন্ত হাসি ?
চশমার আড়ালে লুকিয়ে দেখা
চিলতে আকাশ ?
তবে কি সে ভালো বেসে ছিলও
মায়াবী রাতে চাদের বুকে নিজেকে দেখে
চাদরে জড়ানে চিবুকের ঘ্রাণ!
মমের লজ্জা ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
শহরের উপর মেঘলা আকাশ ?
কবিতা পড়ার দিন ?
বৃষ্টির ছন্দে, অঝরে ঝরা জল ।
তবে কি সে ভালোবেসে ছিলও
চাদের আলো রুপালী জলে ভেসে আসা কেউ
মায়াবতী রাতে রূপসী হয়ে রূপসীর মত!
নিদ্রার গান, ভোরের আলোয় নির্জন শহরে
নরম পাখার সাদা হাসের ছিটানো জল,
ফাল্গুনের উদাসী মনে ঘুম ঘুম চোখ
অচেনা ভালোবাসায় হৃদয়ের কান্না ।
আমাদের উঠোনে এমনি তুমি এসে ছিলে
অনন্ত কাল প্রেয়সী হয়ে প্রেয়সীর মতন ।
ডাঃ ফান্না
ডাঃ ফান্না বিষণ্ণ বিকেলে জলের ছায়া
তারা ফোটা আকাশের নিস্তব্ধ রাত্রি
মাঘের ঘুমন্ত দিনের নিস্তেজ দুপুর।
হাসির ফাকে যে ফুল
ঝরে পড়ে বিষাদের মত
সে আলোয় অসংখ্য কায়ায় হেঁটে যায়
সমস্ত বেলা ।
ডাঃ ফান্না অফুরান পাখিদের ভিড়ে
গোধূলি বেলার নীরব আলো,
রৌদ্র ঝলমলে আকাশের বুকে
উড়ন্ত একাকী পাখী।
পিচ ঢালা পথে পাশ বেয়ে একাকী যে বালিকা
হেঁটে চলে শতাব্দী ধরে
তাদেরেই বুকে জেগে রয় এমনি হৃদয়,
হাসির আড়ালে যে স্রোত অশ্রু পতনের
শ্বাসে মিশে থাকে জীবনের স্মৃতি
বিষাদের পর জেগে উঠে
বসন্তের মেঘলা দিনে,
তাদেরেই অনুলিপি ডাঃ ফান্না।
ডাঃ ফান্না সাদা গ্রাউনে আবৃত্ত অফুরান প্রেম ।
কবিবর
ক্ষুদ্রাকার কবিতা বলি আর পদ্যই বলি
সকল রচনা বালিকার দেহ মঙ্গলের স্নান রত ফোটা ফোটা জল।
এমনি কবিতা আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসক লেখেন মেহনতি চাষার মতো
পাশে থাকে তার নগ্ন বালিকার সবুজ ঘ্রাণ ।
কমবেশি কালিজিরা আমরা সবাই খাই
পকেট থেকে মৌমাছিরা হারিয়ে গেলে
আবার স্বপ্ন অথবা সঙ্গমের পর লেখতে বসি
বাইবেল, গীতা, কোরানের তাফসির।
এখানে কিছুই নেই
পাখিদের চোখে লেখা আছে রোদেলা আকাশ,
ও ঈশ্বরের বন্দনা ।
আমি ঠিক ঠিক যুক্তি বিন্ধায় দার্শনিক হয়ে
চলে যাই শিয়ালে ডাক শুনে ইস্টিশনে
ট্রেনে আসে ঘুমটা পড়া মাসি পিসি ও দিদি ।
‘ ফনি-মনসার বিকেল বেলায়
দেখি নাগ নাগিনী পাশে,
কোলে তার বিশ্ব মঙ্গল
সেথায় সর্প জননী হাসে । ‘
লেখতে লেখতে সিগারেটে টান দিয়ে ভাবি,
আজ বোধহয় বৃষ্টি হবে
আকাশ পানি আর মগজ মায়ায়,
বৃষ্টি সাতারে আসবে
হীম ঘরে জেগে থাকা ফুটফুটে বিকেল।
এমনি বিকেল অথবা সকালে
আমাকে লিখতে হবে অনেক কবিতা,
পরিশেষে
এই কবিতা পড়ে পাঠক কিছু বুঝুক আর নাই বুঝুক
পাঠকের কেমন কেমন লাগতেই হবে,
পাঠকের মেজাজ ও মাথা কেমন কেমন না করলে
আমার লেখা কবিতা কোন কবিতাই হলো না আর ।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
স্বাধীনতার স্বপ্ন যখন আমাদের মগজে বাসা বাদে,
সর্বত্রই দেখি প্রেমিকার দল,
মাটির কলসে রেখে দেওয়া শীতল জল,
হাত পাখা, উনুনে ভাতের ফেন,
আর যুগ থেকে যুগে নকশীকাঁথার নির্ঘুম রাত্রি ।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
বা স্বাধীনতার কথা মনে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে
সর্বত্রই দেখি মায়ের আদর,
লাঞ্ছিত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিস্ফারিত রক্ত,
আঁচলে লুকানো অশ্রুর ফোটা।
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
সর্বত্রই দেখি বাবার ভয় জাগানো চোখ,
দিশেহারা আপ্রাণ মিনতি, নিরুপায় দৃষ্টি ।
আমরা যখন একটি স্বাধীনতার কথা ভাবি
তখন যুবক কিশোর আর বৃদ্ধরাও এক হয়ে যাই।
হে রাজনৈতিক নেতা
আপনাকে বলছি,
আমরা যখন স্বাধীনতার কথা ভাবি
তখন কাউকেই ভয় করিনা ।
আমাদের ধান খেত
সোনালী সকালে রুপালী ঢেউয়ে পাখি উড়ে এক ঝাঁক
আমি আর মায়াবতী দেখি প্রতিদিন এমনি অবাক।
ধানকুটনির চোখ ঝিলমিল করে আবাদি পৌষ মাস
জাগ-গান শেসে সকালের শিশিরে জেগে আছে ঘাসের পরে ঘাস।
অমৃতলোকের পথে
অমৃতলোকে যাবার পথে দেখি লাঙ্গলের সুখে রাখাল
জেগে আছে মাঠের পরে মাঠ, নৈসর্গিক সুখে খেলা করে ইষ্টিকুটুম
বৌভাতের বিকাল বেলায় নেমে আসে কদম ফুলের বর্ষা।
আমার চোখে জেগে থাকে পাতল পুরি!
স্বপ্নজালে উসকানো প্রেমে গোলা ভরে আছে আমার হৃদয়,
বৃহৎ তরঙ্গে রুপালী নাউড়ে আমি হেঁটে যাই
সবুজ সঙ্গীত যাত্রায়, আমার অমৃতলোকের আনন্দোৎসবে
শাড়ি পড়া রমণীরা শান্তির স্বপ্ন দেখায়,
দেখি জলে জলে শাপলা ফুল, দেখি মেহনতি চাষারা শান্ত্রিসেপাইয়ে
সাদা পায়রা উড়িয়েছে, কষ্টিপাথরের পরিণয়ে চাষিরা খেলা করে
নির্ঘুম ভালো বাসায়।
চন্দন মাখা সন্ধ্যায় জিরবো বলে ঘাসের উপর হৃদয় এলিয়ে দেই,
বিরান প্রান্তরে গোধূলি গোখুরের আওয়াজে মিশে আসে হট হট
রাখালের যাত্রা, পিপীলিকার ডানায় হাওয়া উড়ে যায় !
দেখি মেঠো পথে ভেজা কাপড়ে বাড়ি ফিরে কিশোরী বধূ,
ফোঁটা ফোঁটা অজস্র জল তৃষ্ণা মেটায় তার পেছনের মেঠো পথ ।
মুয়াজ্জিনের আযানে দাদা জান হেঁটে যান মসজিদে ধীর পদে।
তাকিয়ে দেখি আকাশের বুকে আকাশ,
পাখির ঝাঁকে খেলা করে রুপালী ঢেউয়ে সোনালী মায়া।
আমি সেই মায়া অমৃতলোক খোঁজে পাই,
আমাদের গ্রাম, আমাদের মেঠো পথ, আমার মা,
এইতো অমৃতলোক ।
চিলেকোঠার কবিতা
দ্রোহিতায় চিলে কোঠা আমার,
দরজা খোলা,
এত ধোয়া এত ঝানঝট জনঝট পর্বত প্রমাণ,
শিল্প প্রয়োগ কৌশলে হাড়িয়ে ফেলেছি গামছা,
চলে গেছে প্রমুদিত শিয়াল,
দই চিড়া দুধ মিষ্টান্ন ফাঁকি দিয়ে
চলে গেছে প্রয়াত কবরে,
জামদানি জীর্ণ হয় প্রাসাদে আমার,
কোথায় ঘুঘু ঢাকে ? শিরো লিপি আঁকি প্রহেলিকায়
হৃদয়রূপ আকাশে…
জ্যৈষ্ঠ আম পাকে, পাকে কাঁঠালও ওড়ে প্রজাপতি অফুরান,
পতিত জমির বুকে কুয়াসা মোড়ানো নাটক সংলাপ,
কলঙ্কিনী বধূর সাদা কাপড়ের কালো পার,
তোলপাড় দর্শক,
শীতল রাত্রির নৃত্য,
বৈঠকখানার কোলাহল ।
আজ শহরে শহরে গ্রাম পতনের ধ্বনি
নবীন যুবতীরা আঙ্গিনা হাঁটে না চকিত চাহনির মায়ায়,
জানতে ইচ্ছে হয় উঠানে ফোটে কি কেশের শোভা
নারীর কুন্তল বৃষ্য ?
এই শহরে রমণীরা নারী হয়ে আছে,
বাবুই পাখিকে কারুশিল্পী করে আঁকে কবিতায়,
কাজল বর্ণ প্রেয়সী কাঁচা মমতায় তরুণ হয়ে যায় দিনের পর দিন।
এখানে ঋতু চক্রে চৈত্রমাস আসে,
আমার প্রিয় মধুমাস ইট পাথর কোলাহলে কোথায় হাড়িয়ে গেছে ?
প্রিয় বট তলার মেলা বাঁশি নাড়ু চরকের আনন্দ রাত্রি
বুঝি পুরাণে বেধেছে বাসা।
চিলোকাঠা আমার ভোরোর কাক কোকিল হয়ে ঢাকে
বর্ষার জলধারা বিষন্নতায় ভেজায় ইট পাথর দামী ঘারি
আমি গ্রাম দেখি না, দেখি সরল মানুষ এখানে পাথর হয়ে গেছে।
আউশ আমন সোনালী ধানের তালে হাওয়া ওড়ি না কতো দিন!
আমার চিলেকোঠায় ।
কুপ্যশালা
এখানে কুপ্যশালা ছিলও,
তামা কাঁসা জাদুঘরে
চলে যাবার পর সোনা রুপা
শহরে শহরে এমনকি গ্রামেও
জয় ঝংকার এগিয়ে গেছে।
আমার দাদীর কাসার দুইটি জলপাত্র ছিলও
আরও ছিলও থালা গ্রাস বাটি
প্রতিদিন গোসল বেলায় তা সাফ করে নিতো সে
চকচক করতো রোদের আলোয়, ঘরের মেজেতে,
আজ দাদী নেই,
পাত্র গুলোও যেন কোথায় হাড়িয়ে গেলো
তিনি চলে যাবার পর পরেই।
আজে এই কুপ্যশালার গলিতে গলিতে প্লাস্টিকের বিষাক্ত গ্যাস
আমরা সোনা রোদে এই গ্যাসে জল পান করি ।
রাজনৈতিক নেতা
নেতা আজ কথা বলবেন রাজনীতিমূলক বা বিষয়ক কিছু কথা, দেশ কাল পাত্র আমরা অনেকেই বুঝি না নেতা তা ঠিক ঠাক বুঝেন, দেশজ শাক সবজি আর শরীর ডাকার জন্য সকল খবরেই আছে নেতার কাছে,দেশদ্রোহ নেতার মাঝে একদম নেই, নেতা সব সময় দেশধর্ম নিয়ে থাকেন, দেশের আচার বা ব্যবহার নিয়ে নেতা উৎকণ্ঠিত, দেশ বিখ্যাত হয়েছেন তিনি নারীবাদী সোচ্চার মানুষ বলে,নেতা দেশ বন্ধু মানুষ, সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভক্তির পাত্র আমাদের নেতা, দেশহিতব্রত, দেশ হিতৈষী,স্বদেশের কল্যাণ সাধন রূপ, এমন সব উপমাই দেওয়া যায় নেতাকে।এখানে যা যা লেখা হল সব কথাই রাষ্ট্রিক, রাষ্ট্রিয়, রাষ্ট্রীয় এবং রাষ্ট্র সংক্রান্ত ।
নেতার পি,এস লেখা গুলো ধরিয়ে সংবাদিকাকে বললেন, ভেতরে যান নেতার সঙ্গে দেখা করুন, আর আগামী কালের খবরের পাতায় এই কথা গুলো ছাপিয়ে দিবেন ।
নেতা ও সংবাদিকা এক কামরায়, সংবাদিকা তাকিয়ে আছেন তার নিয়ে আসা শূণ্য কাগজ কলমের দিকে, আর নেতা তাকিয়ে আছেন সংবাদিকার স্তনাগ্রের দিকে। আজ কাল নারী দেহের বক্ষঃস্থলের গ্রন্থিবিশেষ বেশ আকর্ষণীয় হয়ে যাচ্ছে, স্তনের অগ্রভাগের বোঁটা নেতা মুগ্ধ হয়ে দেখছেন ।
রাজদ্রোহ
যৌন কর্মীকে ধর্ষণ করার অপরাধে তোর ফাঁসি ।
সেক্স পরিষদের সভানেত্রীকে চরিত্রহীন বলার অপরাধে
কাল যার ফাঁসি হয়েছিল আজ নাকি তারই আবার জন্মদিবস
পালন করছেন এদেশের নামি-দামী যৌন সম্প্রদায় ।
হে নিষ্পাপ কামুক
তুমি তার ভুক দেখার আগে একবার দেখেনিও স্বার্থপরতার সরল অভিধান
তুমি তার ঠোঁট স্পর্শ করার পূর্বে বুঝে নিও মধুতে বিষের পরিমাণ কত
তুমি তাকে জড়িয়ে ধরার আগে বুঝে নিও কত লক্ষ প্রেমিক তাকে জড়িয়েছিল
ঠিক তোমারই মতো ।
বেশ্যাকে বেশ্যা বলা যায়, অভিধানের পতিতা থেকে,
কিন্তু জনপ্রিয় বারাঙ্গনাকে চরিত্রহীন বলেছ-তো
আবারও তোর ফাঁসি ।
কাণ্ডারি
তোমাকে সৃষ্টি না করলে
সৃষ্টি হতো না এই পৃথিবী,
এমন স্বীকৃতি যখন স্বয়ং স্রস্টাই দিলেন
তখন সংশয় বলে থাকে না কিছু আর আমার।
অসংখ্য আলোক বিচ্ছুরণের সহযোজনে
আঁধারে সমাজে এলো এক শুদ্ধ
শোধনে শোধনে হল মহা জয়ী।
জীবন্ত কন্যার কবর কবর খেলায়
বুঝল মানবের তাগিদে এদের বড় প্রয়োজন
প্রয়োজনে এলো, মা, বোন, প্রিয়তমা।
পরান্ন পালিত জীবন কে জানালো
এ কারো দয়া নয় স্রষ্টা এক
তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী
তিনি আমাদের বড় ভালোবাসেন
সেই থেকে আমরা হলাম স্বাধীন
আর
তুমি হলে কাণ্ডারি।
সত্য মিথ্যা
আল্লাহ্ ঈশ্বর যিশু ভগবান
রূপায়ণে ভেবেছি অনেক
বন্ধ পথের সত্য উদ্ঘাটনে
আমি আজ নির্বাক …।
স্রষ্টা নিরাকার ;
কে দেখেছে তারে ?
তুমি ?
অবিশ্বাসীরা আচার বিরোধী স্নান করে
আস্তিক কে বলে বোকার দল ।
জন্ম মৃত হীন বিশ্বচরাচরের স্রষ্টা এক ।
উপাস্য একমাত্র তাঁকেই কিন্তু তাঁকে দেখেনি কেউ
দেখেছেন মুহাম্মদ (সা:) বলেছেনও তিঁনি
সেই সর্বশক্তিমান ।
সরস্বতী দুর্গা,
আরেক জন বললেন,উনিই মানব জাতীর মাতা মহেশ্বর
মানব সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টি শিবের
জৈবিক মিলনে ,
এরাই ভগবান।
আমি ঈশ্বরের পুত্র,
তোমাদের পাপের প্রায় চিত্ত করে গেলাম
আমার শিষ্য হলে তোমরা স্বর্গবাসী,
বললেন দয়াময় যিশু খ্রিস্ট।
প্যাচ প্যাচ খেলায় সবাই বললেন
শয়তানের প্ররোচনায় তোমরা
স্রষ্টা কে চিনতে পারবেনা
স্রষ্টা ব্যতীত কাউকে উপাসনা মানে
নরকের নাগরিক।
পুরাণ কোরান বাইবেল সমাসক্তে
স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির মিলন বুঝেছি অনেক আগে।
আসলে কে স্বর্গের দূত
আঁধারি শয়তান তরে।
মহিমান্বিত প্রেমিকার
অত্যন্ত স্পর্ধায় লম্ফঝম্ফ করে প্রেমে পড়লো সর্পটি
প্রেমিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায়
’’ বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে ’’
বীণ বাজিয়ে সাপুড়িয়া নাচানোর দূর চেষ্টায়
খেল খেল রোদ্দুরে খেলে যায় অবিরাম ।
ভাঙ্গা হয়নি বিষদাঁত এক ছোবলেই
জইর থেকে মুক্তি পেতে পারে সর্প
তবুও
স্বেচ্ছায় যে আত্মদান করে তাকে কেউ হত্যা করার শক্তি রাখে না যদিও
সে পরাজিত আর দাস
মহিমান্বিত প্রেমিকার ।
ধ্বংসের দিন
প্রাণী গুলো এমন হা-হুতাশ করে উঠল কেন ?
প্রখর কিরণে ক্রুদ্ধ কেন সূর্য ?
বাতাস কেন বইছে দ্রুত পৃথিবীর বুকে ?
কি হল এই সুন্দর পৃথিবীর ?
আকাশের গায়ে আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে
বিকট শব্দ চারদিকে, অচৈতন্যে মৃত্যু সব প্রাণ
প্রাণ নিয়ে আসছে ভূ-দেশের প্রান্ত থেকে।
আজ ভবিষ্যতের শেষ দিন।
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুক
তৃষ্ণা মেটাবো কিসে ?
এ কি হল ?
অন্ধকার, পৃথিবী আঁধারে ঢেকে ফেলেছে।
আঁধারের মাঝে আঁধারি ছায়া
হঠাৎ জ্বলে ওঠে বজ্র অগ্নিশিখা
সব রঙ, মুগ্ধতা বিলীন হল বুঝি এই
লেলিহান ছুঁই ছুঁই করে ছুঁয়ে যায় সবাইকে।
আমি শূন্যে ভাসছি
আমি আলো আঁধারে শূন্যে ভাসছি।
কর্ণহীন, চক্ষুহীন, ভয়ংকর প্রাণীসব
ঘিরে ফেলেছে সবাইকে।
পৃথিবী নাশে কোন এক জগতের সৃষ্টি
এ জগতের নাম কি ?
সূর্যতাপে বিগলন হচ্ছে দেহটা
ছায়া নেই জ্যোৎস্না নেই প্রকৃতি হীন বেলা।
এসব দেখার কারো সময়ও নেই
অপেক্ষায় সবাই,
প্রাণী গুলো আচমকা শিহরে উঠলো
নিরাকার থেকে দেখা যায় অপরূপ আকার
ঐ নিরাকারে উনি কে ?
জ্যোৎস্নার পাহাড়
তুমি যে নগরে বেড়ে ওঠ তার নাম আরশি
তুচ্ছ বাগ-বিতণ্ডার পুতি দিয়ে গড়া আয়ুর মালা
তোমাকে পড়াবো বলে ছুটে যাই তোমার নগরোপান্তে ।
চলতে চলতে পারি হয় কত শত কাল,
নদী মাঠ সমুদ্র পারি দিয়ে শেষ হয় পৃথিবীর বিকাল,
চিত হয়ে আছে চাঁদের টুকরো, উপড়ে শামিয়ানা, রূপালী আকাশ,
অলৌকিক বারিচরে বালাম, মাঠের পরে মাঠ, জেগে আছে ঘাস।
সামনেই অলোকসুন্দর বালির-বাঁধ
কোন এক হেমন্তের রাখাল লাঙল চালিয়েছে তার বুকে,
মুগ্ধতায় মুষড়ে উঠে কোন এক অচেনা হৃদয়।
অতঃপর ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, জগে উঠেই তোমাকে পাবো বোধয়।
তোমার নগর আর কতো দুর ?
সাদা সাদা রৌদ্র মেগের ভেলায় খেলা করে
আচ্ছন্নতায় , ঝলমল নদীর জল, জলের মাছ প্রথম গান ধরে
আমার ঘুমন্ত স্বপ্নের কিনারায়।
আচ্ছন্নতায় খেলা করে সমাধির ফুল ।
আমার আজকাল রাতজাগা রোগ,
রাতভর শুনি বাতাসের আকুল গান,
পাখির ভালোবাসা, বাতাসের চুম্বন, আঁধারের ঝরিয়ে থাকা,
তোমায় ভেবে এমনি পার হয় হাজার বছর।
পাইনা তোমার নগরের দার, আমি হেঁটে যাই দূরে
দূর থেকে আরও দূরে।
তারপর কখন জানি
তোমার নগরের এক বিষাক্ত আকাঙ্ক্ষা
আমাকে নিয়ে যায় জ্যোৎস্নার পাহারে ।
নোনা জল
দুধারি মতান্তরের নির্বাক প্রেমিকা
বল কাউকে ভালোবেসে ক ফোঁটা তপ্ত জল ফেলা যায় ?
একরাত ? দু-রাত ?
আমি তোমার জন্য সাত হাজার সাতশত রাত কেঁদেছি
দুরারোগ্য মন তোমাকে ভেবে কাঁদতে কত যে ভালোবাসে !
তোমাকে বুঝানো যাবেনা
পৃথিবীর ঐ প্রান্তে জেগে থাকা মনের আয়নার নীল মেঘে বসে আছ তুমি ।
মনের চাঁদ বিবেকের আড়ালে পুড়ে মরে আজ তৃষ্ণার ফুল ।
আমি অসার্থক কবি, শুধু তোমকে ভেবেই লিখতে পারি।
আবেগের কুহেলিকায় তুমি হিমালয়,
তোমার প্রতি আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই
তোমার দেহে কখনই আমি কামুক হই না,
তোমার চোখে তাকিয়ে কাটাতে পড়ি অনন্তকাল,
তোমার দৃষ্টির প্রতি আমার বড় লোভ ।
ক্ষুধায় কাতর দুটি চোখ তোমার জন্য অশ্রু ঝরায়
তুমি মিথ্যে নয়, সত্যি বলছি ,
শাড়ি হয়ে আমার প্রেম আড়াল কর বৃষ্টির মত, নোনা জল ধুয়ে যায় !
তোমায় দেখার যে অধিকার আমায় তুমি দিয়েছ
সে অধিকার উর্বর মনে উৎপাদন করে নোনা জল ।
আমি অন্য জন্মে কাটাই প্রেমের মৌলিক হৃদয়ে,
জনৈক ভালোবাসার পালকী চড়ে তুমি আস রাতের পর রাত
চিরসধবা প্রেমিকা তুমি।
আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার আগে তোমায় পত্র লিখছি
প্রিয়তম,
ঘার-ঘুম আমাকে আর অবশ করে না
মাঝ রাতে গোঁ গোঁ শব্দে আর ভয় পাই না,
যে বছর তোমায় দেখেছিলাম গোধূম খেতের পাশে
নাকের ডগায় ছিল লতানো নাক ফুল,
বোধয় খেলছিলে
ঘুম কাতরের ঘো ঘো ডাকা নির্জন দুপুরে
ঘাস ফুল অলঙ্কার করে,
গোড়ালি উঁচু করে আকাশ ছোঁয়ার মতো
তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে শূন্যে,
তখনেই ভেবে ছিলাম তোমায় ভালো বাসতে হবে।
সেই থেকে আকাশে আর চাঁদ উঠে না, শুধুই ঘাস ফুল
চোখে বেরায় বেদনার জ্বর।
প্রিয়তম,
এই শহরে এখন তাসের খেলায় খুন হয়
রানীর দেশে আততায়ীরা বেশ মুক্ত,
প্রিয়তম, এখন কি রাত ? রাত দিনের আলো থেকে
নিষিদ্ধ করেছে ওরা আমাকে, দিনের আলো কতদিন গায়ে মাখি না
রাতের আকাশে জ্যোৎস্না দেখিনা কতো দিন হল,
এই ছোট্ট মৃত্যু কুপ আজ আমার পৃথিবী ।
এখানে রমণীরা তোমাদের মতো কোমল নয়
ঘাস-ফুল ভালো বাসে না
চাঁদের রাতে মেঘের ঢেউয়ের মত কারো চুল উড়ে না,
যেমনি উড়ত তোমার ঘ্রাণে-সজ্জিত কালো চুল,
মন অবশ করা মাতালি ঘ্রাণ, এইতো এখনো যেন পাচ্ছি।
এইতো আসছে আহা: প্রতিদিন পাই ।
প্রিয়তম,
আমি ঠিক বুঝতে পারছি আজ শেষ সন্ধ্যায় কনফারেন্স হবে আমাকে নিয়ে এরপর
লাল লাল রক্তে গুম হয়ে যাবে আমার অশরীরী আত্মা,
আমি বুঝতে পারছি
আমার দিকে এগিয়ে আসছে বিশ্বাস ঘাতক দালালের দল
ওরা প্রতিদিনেই আসে, মাতাল হয়ে,
ওরা নাকি তোমাদের রুপালী দেশের স্বপ্ন দেখায়
রাজ ভাত সিংহাসন আর সুখের তরীতে ঢেউ তুলে অবিরত।
তারা নাকি রাত জেগে বসে রয় তোমরা নিশ্চিন্তে ঘুমবে বলে,
আমি সব জানি, এ সবেই তাদের অভিনয়, রচনা করে কোন
এক রক্ত পিয়াসু জল্লাদ, তাকে চিনে ফেললাম বলে-ইতো
তোমাদের স্বপ্নের ঘোরে আমি চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম,
নরক বাসে আমি খুশি নই, যারা দেবতা নয়, তাদের পায়ে
কখনই আমার পুঁজর ফুল পড়বে না, আমার আঙ্গুল
ঠিক ঠিক তাদের দিকে এগিয়ে যাবে,
সেই থেকে আমি হয়ে গেলাম রাষ্ট্রদ্রোহ, তোমরা আমাকে ঘৃণা করলে
কালো পতাকা নিয়ে,
প্রিয়তমা বিশ্বাস করো আমি কষ্ট পাইনি,
আমার বেঁচে থাকার মানে-ইতো তোমাদের জন্য লড়াই
আমার জীবন মানে-ইতো তোমাদের,আর মৃত্যু যদি আসে
সেও যেন তোমাদের জন্যই হয়, কিন্তু আপসোস রয়ে গেলো !
তোমাদের পায়ের শব্দে কোন স্বাধীনতার ঝংকার উঠেনি না
সর্বত্রই নরক অভিমুখী যাত্রা।
তোমাদের কোচ কাওয়াজে আমি পদপিষ্ট হলাম ।
প্রিয়তম,
তুমি কি এখনো গোধূম খেতের পাশে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো ?
আমি জানি তোমরা আর সবুজে ভাস না, শহরের ইট পাথর
তোমাদের ভালোবাসা শেখায়, এখন তোমরা অনেক আধুনিক,
আর গণতান্ত্রিকও বটে,
তোমরা শহরে শহরে রাজ পথ প্রকম্পিত করো প্রতিবাদে,
কিন্তু কোন পথে হেঁটে যাও আজ ?
তুমি কি জানো ?
তোমরা যার পায়ে জল দাও দেবতা ভেবে,
সেই তোমাদের স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকে লোলুপ দৃষ্টিতে,
তোমাদের পিঠে সে হাত বোলায় কাম-সুধায় ।
প্রিয়তম,
আমি জানি এই পত্র তোমার কাছে পৌছবে না আজ,
বাতাসে অদৃশ্য হবে পত্রের সব কটি বর্ণ
কেউ পড়বে না এই শব্দ গুলো, কিন্তু একদিন তোমরা দেখবে,
যা লিখে গেলাম অথবা যা লিখবার ইচ্ছে ছিল সব কটি শব্দ
ঝলমল করবে তোমাদের দৃষ্টিতে,
আর সেই দিনেই তোমরা হবে স্বাধীন।
প্রিয়তমা
আমি খুন হয়ে গেলাম !
স্বপ্নের অলি-গলি
কতদিন পর তোমাকে দেখতে পাব!
তুমি আবার বাইক চালাও বলেছে তুমি যাকে বাস্তবে দেখনি
আমি প্রতীক্ষায় আছি যুগের পর যুগ।
পরিপাটি হয়নি বলে তোমার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না,
আমাকে স্নান করতে হবে ।
চলে গেল কিছুটা সময় , আমি কি লজ্জা পাচ্ছি ?
তোমাকে দেখার জন্য-তো আমি দেড়যুক অপেক্ষায় ?
তবে কেন এই অলসতা ?
না, আমি ভয় পাচ্ছি ?
আমি এখনো জানি না , তুমি আমাকে দেখতে চাও কি না ।
আমি এখনো জানিনা তোমার সামনে দাঁড়ালে তুমি আমাকে সহজ মেনে নিবে কি না।
আমি এখনো জানিনা আমি কি তোমার কাছে এখনো পরিচিত কি না ।
কেটে যায় দুপহর, বৈকাল, সন্ধ্যার আধারে আসে রাত ।
আজকাল বিদ্যুৎ বড় ফাকি বাজ, আমার ভাঙ্গা ঘরে আবার বৈদ্যুতিক তারের ঝামেলা
লো-ভোল্টেজ বলে বাল্ব জলে নিভ নিভ।
হঠাৎ বুঝতে পারি আমার আলো ছায়ার ঘরে তুমি
বসে আছো আমার চৌকির একপাশে
সাথে তোমার বোন, যে আমাকে তিরস্কার করেছিল
সে আর তুমি দুজনেই বুজি সমস্ত দিন অপেক্ষায় ছিলে
আমার জন্য ।
তাই রাতের আঁধারেই চলে এসেছ।
আলেয়ার আলোতে তোমাদের দেখতে পাচ্ছি না ।
বুঝতে পারছি তুমি অনেক বড় হয়েছ
মাঝারী চুল তোমার পড়ে আছে পিঠে,
তুমি তাকিয়ে আছ ,
তোমার বোন ওঠে এলো আলো জ্বালাবে বলে,
আমিও দাড়িয়ে, আলো জালাতে চাই
যেন পরিষ্কার তোমাকে দেখতে পারি,
তোমার চোখে চোখ রেখে বলতে পারি
তুমি কেমন আছো ?
এতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তুমি কি বুঝতে পাওনি ?
সুইসে চাপ দেবার পর
একি !
এত আগুন ? আমার ঘরের সব বাল্ব নিভে গেল!
সব বৈদ্যুতিক সুইস পুরো অঙ্গার!
আমি আর তোমার বোন আমরা হতবাক। একি হল ?
ঘড় অন্ধকার । কেউ কাউকে আর দেখতে পাচ্ছি না আমরা।
বুঝতে পারছি
তুমি বসে আছো আমাকে দেখার অপেক্ষায়।
যেমন আঠার বছর ধরে আমি আছি ।
স্মৃতির শিকল
স্মৃতির শিকল ছিঁড়ে গেছে আজ
তোমাকে পাবার জন্য আবার অতীতে পর্যটক হবো,
নগরে নগরে বাউল সেজে হাওয়ার পিঠে
কালো বালিকার ধূসর হতে আলতো করে বিকেল বেলায়
আমাকে যেতে হবে এই মহাদেশের ঠিক অপর পিঠে ।
দশক পরে আজ উষ্ণতা প্রেম জালায়
তোমাকে পাবার জন্য স্বপ্নগুলো স্মৃতির পাহারায় কাঁদে অবিরত ।
যখন নগরে বাউল হয়ে ক্লান্ত হই
দেখি আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ
স্থির হয়ে ভেসে যায় স্মৃতির ভেলা
নোনা স্রোতের রুপার দেশে আমি একা
চারদিক অস্পষ্ট ।
তোমার ঠোটের বিষাক্ত ছোবলে
অবশ হয়ে আছে স্বাগতিক চৈতন্য ।
উষ্ণতার রূপায়ণ
অনেক রৌদ্র
হৃদয়হীন আকাশ থেকে কাঁদে
ভুলে যাওয়া রোচ্য মনের রাখাল
নিষ্কৃতি পাবেনা বলে সবাই দন্তহীন
হাসিতে মেনে নিয়েছে
নিরুপায় মন ।
স্থির জলে মেঘের মত শ্যাওলা মেলে
উকি দেয় মৎস্য
ধুয়ে নেয় চোখ ।
তুমিও তাকিয়ে আছ, রৌদ্র রাঙা এমন দিনে ?
ঠিক তোমার মত রূপস ভবিষ্যৎ
ঝুনঝুন শব্দে উষ্ণতার রূপায়ণে
এসেছে অনেক
এক
দুই
শত
লক্ষ।
স্নায়ু কাঁপা মৃত তুমি ক-ত দূরে ?
শৈবাল গাড় সবুজে রৌদ্র লেগে
আধ্যাত্মিক প্রাসাদে মহারানী এক
মুক্তা ঢেলে দেয় অতীতের যত দিন।
আজ অনেক রৌদ্র
গালে গজগজ দাড়ির সাড়িতে
বুঝি ক্রন্দন আর মানায় না
তবুও…
তোমায় ভেবে কাঁদি
একদিন শান্ত স্বর্ণময় পৃথিবী ছিল
মধুর উজ্জ্বল ছিল দিন
তুমি ছিলে তাই ।
নীল আকাশ
প্রেম নয় ধুলো নয়
আছে ফাগুনে হৃদয়
ডানা হাওয়ায়ে মেলে
উড়ে যায়,
দূরে।
নীল আকাশ ।
অনুভূতির মৌচাক
চতুরশ্ব মেঘের গাড়িতে চড়ে
হৃদয় চলেছে কার ?
চাঁদের আলোয় দেখেছি তারে
সে এক পরজীবী মানব ।
হাওয়া ভাসে ছেড়া পদ্ম
স্মৃতির স্রোতে হয়ে আজ মলিন
ঝাঁক ঝাঁক দৈব ভালোবাসা
হৃদয়ের কাঠগড়ায় বেঈমান হয়ে হাসে
হু.হু.হু…
বর্ষার যন্ত্রণা কখনই যেন ছোঁয়া যাবে না তাকে
জলাতঙ্কের অহংকার,
এমন
আর
কত
দিন ?
বাঘের থাবায় পড়েছে,
চিত্ত স্থৈর্য হরিণ শাবক
চন্দ্রাতপ হয়ে শরৎ এর হাওয়া এসেছিলো,
ঈষৎ কম্পনও হয়নি কি তার ?
মরে যেতে যেতে চেয়ে ছিল ঠিক চোখে
নির্দয় দৃষ্টি
চিরে চিরে খায় ভালোবাসা আহা !
রক্ত মাংস মাটি সিক্ত হয়ে
হয়েছে উষ্ণ রক্তে লাল ।
আর কত দিন ?
গর্ভবতী বাঘিনী বসে কাঁদে নিরুপায়,
তৃষ্ণা মেটেনি কারো কোনদিন
বাঘের পিয়াস ।
শঙ্খচূড় সর্প দংশন করেছিল
সে..ই..কত…দিন
এখনো বিষ যন্ত্রণা কমেনি
বেড়েছে শানাইয়ের সুর ।
সূর্য ডুবে যায় তৃষ্ণা প্রণামে আবার
চতুরশ্ব মেঘের গাড়িতে চড়ে
হৃদয় চলেছে ঐ ,
মউ রানী হৃদয়
তোমাকে ঘিরে আছে
অসংখ্য অনুভূতির মৌচাক ।
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি
উপরে উঠলেই আপেক্ষিকতত্ত্ব কাজ করে আমাকে নিয়ে
যেমন তোমাকে ভুলে যাওয়া মানে প্রামাণিক ভালোবাসা
তোমার কাছে নিয়ে যায় বেদনার মত।
তারপর জলপ্লাবন, বৃষ্টি, জ্যোৎস্না, নীল আকাশ,
প্রবোধ করে একে দেয় তোমার বৃষ্টিহীন শরীর।
মুঠো মুঠো সোনা তোমার কপালে ছড়ায় লতানো স্বপ্ন,
উষ্ণ ব্যাকুলতা আসে সোনার কাঠি রুপোর কাঠি,
তুমি ঘুমিয়ে নেই, তাই বদলে দেয় মনের খেয়াল ।
আমি বুঝতে পারি তোমার চুল অথবা চোলের ঘ্রাণ
আমাকে অবশ করে দিচ্ছে
তোমার শুষ্ক ঠোট বিষাক্ত, আমার জন্য তাই মহা ঔষধ ।
আমি ঠোটের তৃষ্ণায় পিপাসায় কাটাই কাল নিশি ।
তোমাকে আরেকবার পেতে ছুটে যাই রৌদ্রের দেশে ।
মহাকাল চলে যায় তোমাকে পাওয়া হয় না ,
স্মৃতি পক্ষের সেনাদল আমাকে ঘিরে ধরে
শহরে,
নগরে,
পাড়ায়, আমি চাঁদনী রাতের সবুজ দেখে থমকে দাঁড়াই,
এ সবুজ নয় তোমার শাড়ীর আঁচল!
মহারহস্যে শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা তুমি মহামায়ায় বৃষ্টি ঝরাও
বার বার আমার চোখে ।
সোনালী হরিণ
একটি চাঁদ আমি স্বপ্ন দেখি
আজও দেখেছি,
তৃষ্ণাতুর ভুকে তার সোনালী হরিণ ।
তোমার জন্য একটি চাঁদকে আমি নক্ষত্র হতে দেখেছি ।
ধুসর কল্পনা মাখা চাদর ডেকে আছে নীল চোখ
সোনালী আদরে চমনের লালা লেগে আছে কপালে।
আমি তোমর জন্য একটি চাঁদকে নক্ষত্র হতে দেখেছি,
চাদের বুড়ি পড়ে আছে চকচকে জ্যোৎস্নায়
মাথায় শৈশব, কোলে আছে তোমাকে ভালোবাসার
রক্তিম বাসর, তার বুকে জেগে আছি আমি ।
স্বপ্ন যোগ
দলহীন পাখীগুলো উড়ে গেছে বিরান পাহারায়
দৃশ্যের মাঝে অদৃশ্যের খরতাপ, পোড়ায় শৈশব
রেললাইন এসেছে আরও কাছে,
নগ্ন ইট পাথরের ধ্বংস স্তূপে
পরিণত হয়েছে তোমাদের সেই ঘরটি
তোমরা নেই বলে, রৌদ্র প্রখরতায় পোড়ায় সমাজ
বসতি বুঝি এভাবেই উৎখাত হয়ে যায়
প্রাচুর্যের গরিমায় হারায় শৈশব,
তোমাদের সব স্তূপ করে রেখেছ ভেঙ্গেছ
অতীতের প্রাসাদ, আমার বাগানে
এখনো একটি গাছ মৃত্যুহীন
ধুলোবালির আবরণে ফুটে আছে একটি ফুল
নীরব আর্তনাদে,
বারান্দায় আমি দাড়িয়ে আছি
মনুষ্যত্বহীন প্রকৃতির এই জীবনে।
কে যেন দৌড়ে এসে দেখে গেল আমাকে
তোমার কথা বলেছিল যে তারে মা
খুশি হতে পারল না আমি কবি হয়েছি বলে
তোমাকে নিয়ে লিখি কবিতা, অপরাধ!
দৃষ্টির সীমানায় বিষণ্ণ বাতাস, রৌদ্রে পোড়ায় কবিতার বই
ধারাবাহিক কান্নার হয় না সমাপ্তি।
প্রতিদিন তপ্ত অশ্রুজলে স্নান করবে তুমি,
অনুভবে !
অনেক রাত
পড়ে থাকে পাতাদের ঘুম
রাতভর ঘুমিয়ে থাকা পালক শূন্যতায়
সকালের আলোয় জেগে উঠে কাল রাত্রির পর
কত সকাল আমরা হারিয়ে যাই তোমাদের দেশে।
নির্ঘুম আকাঙ্ক্ষায় আমাদের তোমরা
একান্নবর্তীর গল্প শোনাও
এমনি সকাল হারিয়েছে প্রাণহীন পাখীর ঝরা পালকে
আমরা হেঁটে যাই মহামায়ায় তোমাদের দেশে।
হিজলের বনে অচেনা পাখীর চির চেনা সুরে
আমাদের কোথায় যেন নিয়ে যায়, একা।
রাতভর বৃষ্টি হয়েছিল জ্যোৎস্না ভেজা আলোয়
পৃথিবীর সব পাখি স্নান করে বলে ছিল, আর নয়
শুভ্র ভালোবাসা,
এখন আর বৃষ্টি হয় না
জেগে থাকে তারার দেশে জোনাকির মিছিল,
অস্পষ্ট আলোয় হিজলের বন দূর থেকে আরও কাছে
চাঁদের আলোয় ঝিলমিল করে তোমাদের রূপসী নদী,
পড়ে থাকে পাতাদের ঘুম।
ঘুম ভাঙ্গা আকাশে জেগে থাকে রাতের পরে রাত,
তোমাদের দেশে ।
ঘাস ফুলের জল
এ বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সতেজ চিৎকার
অনন্তকাল থেকে শোনা যায় দিনের পর দিন
সবুজ ঘাসের অশ্রুতে।
কার যেন পদ স্পৃষ্টে মরে যায় তারা
জেগে ওঠে আবার নীরব ভালোবাসায়
রাতের আধারকে পালকী করে আকাশ ছুঁয়ে
প্রভাতের রাত জাগা পাখীর গল্প কথনে শেষ হয়
কোলাহলের নীরব উৎসব।
দিনের পর দিন এই চক্র জীবনের হয় না অবসান
নির্বিরোধী জীবন দেখা হয় না কারো
আমাদের দৃষ্টির ক্লান্তি ছাড়া
আমরা আছি প্রভু হয়ে
গরু ছাগলের চারণ ভূমি
ঘাস ঘুমিয়েছে নীরবতায়, মৃত্যুর স্বাদে।
প্রতিবিম্ব
তুমি কোন পথে হেঁটে যাও?
রৌদ্রে শুকায়ে ধুলো উড্ডয়ন
আমরা অপমানিত হই তোমার পায়ের শব্দে।
ঐ শব্দটি খুব অপ্রিয়
সবুজ শস্যে চৈত্রের খরা হয়ে
একটি সাদা পাখিও উড়তে দেয়নি
তোমার আকাশে, কীট গুলো
তোমার ক্ষুধার্ত আত্মার ক্ষুধা মেটাতে দেয়নি কোনদিন,
তিক্ততায় মৃত্যু আত্মার যন্ত্রণায়।
ওরা সবাই মহানন্দে করেছে যাত্রা
চার দিক জলের ছন্দ,
জাহাজ ডুবিয়েছ বলে এত উল্লাস ?
তুমি কি ডুবনি মনুষ্যত্বের সমুদ্রে ?
যদি মানুষ হও, মানুষের জন্যই বিবেক।
আমরা হেঁটে যাই অন্তকালের পথে
ধুলো ফুরায় না,
আমরাই ফুরিয়ে যাই পৃথিবীর মায়ায়
প্রথম দিন
আর তোমাকে জেনেছি শুভ্র মেঘের আড়ালে
ঘাস ফড়িং যেভাবে চলে যায়,
ঝরাপাতায় চৈত্রের শেষ বিকেলে তুমি এসেছিলে
বিষণ্ণতার রঙ মেখে, আলো ফুরবার আগেই বলেছ,
আসবে প্রথম দিন,
তারপর
সূর্য রাঙা অনেক সকাল হারিয়েছি
সজনে ডাটার বার তম প্রতিধ্বনি সমাপ্ত হল
জোড়া শালিকের আত্মহত্যার পর
একটি শালিক ক্লিনিক থেকে পালাল,
বুঝল ভালো হয়নি জন্মান্তর,
অনেক দিন পার হল প্রথম দিনের প্রত্যাশায়।
অপরিণত বারান্দায় প্রভাত আলো বলে গেল আজ,
তুমি আসতে পার
জীবনের প্রথম দিন শুরু হতে পারে
বৈশাখের প্রথম দিনে।
কবিতার প্রেক্ষাপট
আমার অংশাংশি জীবনের প্রতিবিম্ব অধ্যায়ে
বিচিত্র যন্ত্রণা বলে যায় তুমি আসবে,
ঝরে যাওয়া বিরান বাসরে সদ্য ফোটা কোন মুকুল
শত ঝাঁক পাখির উড়ন্ত ডানায় নীল আকাশ ছুঁয়ে
বলে যায় তুমি চলে যাওনি।
চলে যাওয়া মানে, তুমি তো আসোনি যে
চলে যাওয়া শব্দটি ব্যবহার করা যায়।
তুমি বৃষ্টিহীন বর্ষাতে নিরীহ চিরন্তন
ভালোবাসায় এসেছিলে, যদিও এ আমার কল্পনা,
তবুও বাস্তব।
অকুণ্ঠ চিত্তে তোমাকে ভালবাসতে পারি বলে ইতো
আমি প্রেমিক
আর কবি।
বিরহী-কাজরী
নীল জ্যোৎস্নার আলো
আমার গা ভিজিয়ে দিয়েছে।
তেপান্তরের মৃদু হাওয়া
এ কার সুঘ্রাণ?
যখন বুঝতে পারি
এ তোমার,
রক্তের প্রতিটি কণা হিম হয়ে আসে
অক্লান্ত তৃষ্ণায়।
অভিমানীর হৃদয় থেকে পাওয়া ব্রে কিং নিউজ
শ্বেতাভ সকালে আত্মদ্রোহী পথ খোঁজে
যে প্রাণ চলে গেল নিরুদ্দেশে
তার জন্য কান্না নয়।
বরং আগ্নেয়গিরি স্পর্শ করার অপেক্ষায়
ছুটে আসে যে প্রাণ
তার জন্য ভালোবাসা।
বৃথা বিকেলে অকালবোধনে
তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম।
পাঁচটি পাখি খেয়েছ তুমি ক্ষুধায়
আমি আজ পাখি শূন্য
তোমার চোখে দেখতে পাই সৌর সাদৃশ্য আলো,
আলোকিত হব বলে তোমাকে ভালোবাসি।
কারুশিল্পীর শিল্পনৈপুণ্যে ভেবেছিলাম
পৃথিবী সুন্দর। মিথ্যে!
নর্দমা, কাদা, ঘৃণা, প্রতারণা হীন আর কিছু কি পেয়েছি ?
হরদম রাত কাঁদে তোমার তৃষ্ণায়,
তোমরা নগ্ন,
অনাবৃত করণে ভুলে যেতে চাও সভ্যতার চাদর।
সভ্যতাকে বল বোকা,
চাঁদকে যতই রূপসী বলি না কেন, এ করুণার বানী,
করুণায় প্রেম নেই,
নগ্ন দেহে কতটুকু শ্রদ্ধা নগর বেধেছে তোমার?
রূপসী দেখলেই প্রেমে পড়তে নেই
রক্তাভ তিমির রাতে দেখেছিলাম
ডানা কাটা সুশ্রী নারীর নাচ,
বৃষ্টি ভেজা অন্ধকারে ।
মহামায়া দুর্গা এগিয়ে আসলেন,
উনিই নৃত্য পরিচালিকা যারা নৃত্যে
আমাদের মত বোকাপাঁঠাদের শিব বানায়
প্রেম করে স্বতন্ত্র লীলায়।
আমরা বাঁশী বাজাই বাস অথবা ট্রেনে
জ্যামে আবার বেহালাও বাজাই
খিলখিল করে বর্ষা নামাই তৃষ্ণায়।
সুশ্রী নারী গন নাচতে নাচতে চিত হয়ে পড়ে গেল।
প্রাণপণে দৌড়ে গেলাম
চিত হয়ে ব্যথা পেল নাকি?
দেখি সব শূন্য সব ফাও
কেউ নেই, কারো উপস্থিতি বহন করেনা প্রকৃতি
নির্জন স্তব্ধতা আমাকে বলছে, বেটা হা বারাম।
সাঁতার কাটি
কালো রাজকুমারীকে ভালোবেসে ছিলাম বলে
বাকি আর কাউকে ভালবাসতে পারলাম না।
রূপসী চলেন
নীল নদে সাঁতার কাটি।
উদাস দুপুর ,
রৌদ্রের পাহারায় একাকীত্ব সময়
সুখগুলো মরীচিকা করে
তুমি দাঁড়িয়ে আছ এইতো।
কার প্রেমিকার এত সাধ জাগে?
এতো ধৈর্যে!
আমার ঝোড়া ঝোড়া প্রেম তুমি ছেঁটে ফেল।
সোহাগা বয়ে চলে যাই অনেক দূর,
টলটল করে ঝরে কুঁড়ে ঘরে থাকা জল ।
ধ্রুব ভালোবাসায় অশ্রু মুছে
জড়িয়ে ধর আমায় প্রতি মুহূর্তের মত
কালো রাজ কুমারী।
রূপসী চলেন
নীল নদে সাঁতার কাটি।
রাতভর
ছেড়া পাতার পত্রগুলো আবার পড়ে দেখব কি ?
তপ্ত অশ্রুতে কত স্বপ্ন স্নান করেছে তোমার
উৎকণ্ঠায় ব্যাকুল শ্বাসে উড়িয়েছ বর্ণ
কত বার প্রত্যাশা করেছিলে আমাকে ?
আমি শুনতে পারিনি ভেবেছ ?
গাছের পাতাগুলো নড়েছিল ঠিক
অভিমানে
তাঁরাগুলো পিয়ন হয়ে ঠিকানা হীন পত্র নিয়ে উড়ে
আকাশে আজ।
তুমি চিনতে পারণা
আমি আর বর্ণগুলো।
আজ আমি একা
ছেড়া পাতার পত্রগুলো প্রেমিকা হয়ে কাদায় রাতভর।
কল্পনার রচনা
তৃষ্ণার পৃথিবীতে ছুঁয়ে দিলে
তৃষ্ণার নারী।
শুকিয়ে যাওয়া স্মৃতিতে
অচেনার রাজত্বে চমকে উঠি আচমকা।
নগণ্য পাপে না হয় পাপীই হলাম
নিকষ অন্ধকারে প্রত্যাশা করে ছিলাম তোমায়।
ভেবে ছিলাম হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো
কিন্তু তুমি নেই, আলো এসে বলে যায়।
একার অপরাধে কাউকে নিয়ে কাঁদা যায় না।
একি পরাজয় ?
তোমার কাছে হেরে যাওয়া ?
একি তুচ্ছের বানী আমার প্রতি তোমার ?
এখনো গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি, পরাজয়ের ।
কল্পনার পাহারায় দুঃখ গুলো সব সময় নিরাপদ।
ভালোবাসা ভুলতে পারি না অশ্রু জলে পরাজয় ধুয়ে যায়।
মুছে যায় সব প্রত্যাশা, শুধু জেগে থাকে
তোমায় ভেবে, হতে পারতো এমন সুখের জীবন
মুহূর্তের পর মুহূর্ত কল্পনার রচনা।
দংশন
আজ থেকে বহু সহস্র বছর পূর্বে
দেশান্তর হয়ে এসেছে বুঝি
ঐ গাংচিল।
আকাশে আজ অনেক মেঘ,
হাজার হাজার বছর পরেও কি
নিঃসঙ্গ গাংচিল
দেখবো আমি এমনি মেঘলা দিনে ?
অবসাদ নিয়ে করুন চোখ তার,
খোঁজে ঠিকানা, পৃথিবী আঁধার।
স্বরচিত দুঃখ গুলো চেনা স্বরে ডাকে তারে
আমি তারে কত বার দেখেছি রৌদ্র ঝরা
এমনি আকাশে, লাল টকটকে সূর্য
ঢেকে তার ডানা স্থির।
আমি তারে দেখি অনেক অনেক দিন,
গভীর নিদ্রামগ্ন বিষণ্ণ ক্লান্ত দেহে ঘুম আর ঘুম
দেখি বেকার হৃদয় তার।
দেখি কোন কোন দিন আকাশ বড় চঞ্চল
বাতাসে আনন্দ ধ্বনি নিশ্চল পৃথিবী
বড় উন্মাদ, দেখি সর্বত্রই নিষেধ ভাঙ্গা সংগ্রাম
সূর্য অন্য রকম ।
শত শতাব্দীর আনন্দ জেগে উঠেছে
মুঠো মুঠো রৌদ্রে স্মৃতি ঝরে পড়ে পৃথিবীতে
নব জাগরণে বিতৃষ্ণার বর্তমান।
গাংচিল উড়ে
কত কত দিন ঘুমায় নী শুধু ভেবেছে
দুর্লভ জীবনের নগণ্য জন্মান্তরের কাহিনী,
জন্ম বুঝি তার অলক্ষ্মী রাতে
অপ্রাপ্তিতে যে রাত ফিরে আসে বার বার ।
রাত জাগা আরেফিনের দল ঘুম আর্দ্র
চোখ নিয়ে তাকায় নক্ষত্রের আকাশে
শিশিরে ডেকে আছে আকাশ, টপটপ
ফোটা পরে সবুজ পাতার কোণ ঘেঁষে রাত ভর,
সিক্ত প্রকৃতি।
আজ চন্দ্রকলার অদৃশ্য কাল
গাংচিল তাকিয়ে আছে জন্মান্তরে
নক্ষত্রের আলো খেলা করে তার
সুখ-দুঃখ জননেন্দ্রিয় জীবন।
প্রতীক্ষা
গহীন থেকে জেগে উঠেছে আবার
অন্তিম অলৌকিক অনুভব ,
প্রত্যাশিত একটি চাঁদ জেগে উঠুক নিয়ে
তার তারকা নক্ষত্র এই রাতের আকাশে।
আর কতকাল প্রতীক্ষায় কাটাবো ?
এমনি রাতের পরে রাত ?
প্রত্যাশিত চাঁদ তুমি জেগে উঠো
জ্যোৎস্নার আলোতে দেখি অলৌকিক
আলেয়ার মূর্তি, সে যেন
আমায় ঘিরে নিঃশব্দে হাসে।
প্রত্যাশিত চাঁদ তুমি জেগে উঠো।
দুরূহ মৃত্যুতে দুটি প্রাণ তুমি কেঁড়ে নাও
এক করে দাও অদেখা অবশ্যই আসবে যে জীবন
সেই জীবনে।
আর কত কাল ক্ষয় হবে কপোল বেয়ে তপ্ত জল ?
তাকে ভেবে আঁধারে কেঁদেছি কত কত কাল!
পৃথিবীর আকাশে আছে নষ্ট চন্দ্র
নষ্ট চাঁদ আমাকে দেখে খিলখিল করে হাসে
লজ্জায় নত আমার নয়ন
ঠুনকো আঘাতে ইতো এই বিষাক্ত বিরহ
দুর হবার নয়,
বিলীন ঐশ্বর্য।
আমার বিবশ দৃষ্টিতে চঞ্চল জেগে ওঠে
তার দশটি আঙ্গুল
দুটি চোখ
নরম ঠোঁট
নাকের শ্বাস
আবার জেগে ওঠে, জ্যোৎস্নায় আমায় জরিয়ে ধরে
উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠে, আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়
আমি মরি হায় হায়,
আবার জেগে ওঠে
আবার জেগে ওঠে।
পর গৃহ থেকে ভেসে আসে তার মিনতি
নিরাশ হৃদয়,অবরুদ্ধ চিৎকার
দাউ দাউ অগ্নিকুণ্ডে তার জীবন পোড়ার ঘ্রাণ
আবার জেগে ওঠে
আমি শুনতে পাই, চাঁদ
অন্য জীবনের চাঁদ
আমার চাঁদ, তুমি জেগে ওঠো।
বিন্দু
তোমার বারান্দায় কি ধ্রুব নক্ষত্রের দৃষ্টি পড়ে ?
তাকিয়ে দেখ কি রাতের আকাশ ?
বড় জানতে ইচ্ছে করে এই নক্ষত্রের রাতে।
চন্দ্রালোকের আজ রূপসী রাত
শুক তারার দিকে তাকিয়ে আছ কি তুমি
হিমেল নির্জনতায়।
এই আকাশ তলায় আমরা দু-জন
তবুও কত ব্যবধান দু-জনার দু-জীবনের।
দক্ষিণা মলয় বায়ু আসে আমাদের দেশে
তুমি কি এই বায়ুতে উড়িয়েছ চুল
ঠিক সেদিনের মত ?
বড় জানতে ইচ্ছে হয় এই নক্ষত্রের রাতে।
শহরের কোলাহলে তুমি আজ বড় ব্যস্ত
স্থির আকাশে অস্থির মন কতবার
ছুটে গেল তোমায় দেখবে বলে, জোনাকির আলো দেখেছি
মিটিমিটি রূপসী রাত, তোমার কথা ভাবলেই
সব রূপ ম্লান হয়ে যায়, তুমি বড় রূপবতী,
রূপকথার মত ।
নিদ্রাহীন আমি তাকিয়ে আছি এই আকাশে
তুমিও কি দেখছ সব ? দৃষ্টি মিলন হয়েছে কি দু-জনার ?
এত এত দিন পর বড় জানতে ইচ্ছে হয় এই নক্ষত্রের রাতে।
আঁধার
অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি
আর কত আঁধার আড়ালে রাখবে আমাদের ?
চার দিকে দুষ্ট শিশিরের কণা
চক্ষু থেকেও দৃষ্টিহীন আমরা
অশ্রু অনুতাপে স্নান করে নিছক অনুমানে
খুঁজি দু-জনার দুটি মুখ।
নিবিড় অন্ধকার ,
নির্জন চারিদিক।
রে রে রে হাঁক ছেড়ে আসে সুখ হরণীর দল।
আমার সব সুখ কেড়ে নিলো .
কেউ কি আছ ?
না নেই ,
চারদিক জনাকীর্ণ স্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে
জেগে আছে আঁধারিয়া সব ।
অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি।
নিশাচর পাখি চেয়ে আছে আকাশের বুকে
আকাশে জ্যোৎস্না হীন অহরহ চন্দ্র,
এক দুই শত লক্ষ
চন্দ্রগুলো আমাদের প্রদক্ষিণ করে
হাসে খিল খিল করে,
আরও আছে পরিমল নক্ষত্রের দল
কি নির্দয় ওরা,
ফুটে আছে রাতের আকাশে ।
রাতের গায়ে রাত, আর কত
ব্যাপ্ত ব্যাকুলতা রাখবে আমাদের ?
মৃত সবুজ,
মৃত লাল,
মৃত হলুদ,
নীল নীলাভ
সমস্তই কালো, কৃষ্ণ কালো ।
অহরহ চন্দ্রের কেন জ্যোৎস্না নেই ?
ফুটফুটে জ্যোৎস্নার আশ্বাসে মেতে রাখে আমায়।
অনুভব করি
তার দুটি চোখ স্বপ্নে ঝলমল করে
লাস্য ছন্দে হেঁটে চলছে দূর দূর বহুদূরে।
মিথ্যে প্ররোচনায় নিয়ে যায় চন্দ্রের দল।
আঁধারে আচ্ছন্নতায় খুঁজি তার চুলের ঘ্রাণ,
লালন করি দুটি চোখে দৃষ্টির স্নান।
অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি।
পৃথিবীর সবাই ঘুমিয়ে আছে
ভাঙ্গে না কারো ঘুম ।
হিমেল রাত্রি,
লালায়িত এই রাতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে
আমরা দুটি প্রাণ।
কোনদিন কি হবে না দেখা
দু-জনার দুটি মুখ ?
প্রতীক্ষায় রই প্রভাতের আশায়।
ভারী আঁধার সরে আসবে প্রত্যাশিত আলো
উজ্জ্বল হবে সব রঙ
লাল,
নীল,
হলুদ,
সাদা
সব রঙ ধরা দিবে তাঁর অপরূপ মুখে
প্রাণ ভরে দেখবো তাঁর ঠোঁট, চোখ,
মায়াবী আঁচল।
সে হাসবে, দৃষ্টি দিবে দৃষ্টির মাঝে।
অন্ধকার চারদিক ।
অন্ধকার রাত্রি এখনো শেষ হয়নি।
জলছবি
জানি কথা ছিল না ,তবুও যেন
তুমি কথা দিয়েছিলে আমায়
আমার অপূর্ণ জীবনের দ্বারে দাড়িয়ে।
সবাই দেখেছিল ভালোবাসার প্র লিপ্ত জীবন
কি করে এত হাসে ?
এখনো শুনতে পাই তুমিই বলে ছিলে ।
উদাস পৃথিবী কেন এত চঞ্চল ?
দূরের নীলিমায় বিবর্ণ আকাশ।
অনুগত একদল দুঃখ অগ্রাহ্য করে বলে
সব মিথ্যে,
তুমি মিথ্যেবাদী।
ঘুম হারা হৃদয় আমার কত বার দণ্ডিত হল
অপমানে অবনত হল
আমি লাঞ্ছিত হই।
হঠাৎ পরাজিত জীবনের পাশে পৃথিবী বলে
বুঝি কথা ছিল এমনি ।
স্তব্ধ জ্যোৎস্নার রাতে মেঘের স্রোতে চলে
ঐ চন্দ্র
তাকিয়ে দেখি আকাশের বুকে আকাশ
রূপ রূপ খেলায় মেতেছে,
আমি শুনতে পাই অনুগত হৃদয়ের ডাক,
এ হৃদয় তোমারেই।
এ তোমারেই প্রতিশ্রুতি ,গোপন ভালোবাসা!
জলকাক চিৎকার করে নিঝুম পৃথিবীকে
কেন এত অস্থির করে তুলছে ?
গাংচিল একা একা আকাশে উড়ে
জলছবির হৃদয় আমার।
যে হৃদয় দিশেহারা, এ হৃদয়ের জন্য
যে চোখের জলে প্রত্যাশা স্নান করে
এ চোখের জন্য,
যে জীবন তোমার অনুগতে ম্লান
এ জীবনের জন্য, তুমি কি পার না ?
অনেক বৃষ্টি হয়েছে আজ, বৈশাখী নয়
কাল বসন্তী বাতাসী ঝড়ে উড়ে গেছে
পাখির বাসা, এখন সব শান্ত।
আলো আসে বৈকালিক শ্যাওলা পৃথিবীর রং
গাছের শীষ শস্য মঞ্জরী সব শ্যাওলা সবুজ।
আমার গায়ে পড়েছে শ্যাওলা পৃথিবীর দীপশিখা।
তুমি এসে দাঁড়ালে, তোমার চোখ, চুল, আঁচল
কি এক কারুকার্য
প্রতিদিনেই তুমি আস, আমার অন্য জগতে
ঝগড়া হয়, ভালোবাসা হয়, মধুমাখা ঠোঁট তোমার।
সকল হিসেব ভুলে তুমি আমাকেই ভালবাসবে
এমনি কথা হয় তোমার আমার।
কেন তুমি আজ পর হয়ে যাও ?
স্বপ্নের ঘোরে কাটে রাতের পরে রাত
অজস্র ধারা বর্ষী অশ্রু আমাকে ভিজিয়ে যায়,
তুমি আঁচল দিয়ে মুছে দাও জল
অতঃপর
তুমিও ভিজে যাও, অতন্দ্র আমরা
আঁধারে কাটাই রাতের পর রাত,
আসে রাঙা প্রভাতের আলো, তুমি হারিয়ে যাও
নিষ্ঠুর আলোর জ্বালায়
আমি আবার একা হই
নরম আলো আমাকে আদর করে বলে
তুমি কথা রাখবে,
সবুর কর আসছে মহোৎসব ক্ষণ।
তুমি আর আস না।
ব্যাকুল আনন্দ অশ্রুর স্রোতে ভাসে
হৃদয় নগরী প্লাবিত হয়, অনুভব করি
সত্যিই আমি একা।
কত গোধূলি সন্ধ্যায় তাকিয়ে থাকি
রাতের আঁধারে চারদিক অন্ধকার
প্রদীপ জ্বলে না আমার কোঠরে
আঁধারে নিঃসঙ্গ হই ঠিক পূর্বের মত।
দয়াশীল চন্দ্রের ক্ষীণ আলো
আমার ক্ষুদ্র গৃহ খানি আলোকিত করে।
আমিতো আলো চাইনি ।
অভিমানী মন উদ্দেশ্যহীন কাউকে বলে ওঠে,
আর কতকাল প্রতীক্ষায় কাটাবো ?
ঘুরে ফিরে আসে প্রভাত, দুপুর, সন্ধ্যা,
গরুর হট হট, পাখির নীড়ে ফিরা
ধোয়া ধোয়া প্রকৃতি, আমি টের পাই
তোমার পৃথিবীতে আমি আর নেই
অচেনা হয়েছি সেই কবে, যেদিন
রাতের আঁধারে পালিয়ে আসার মত
মার হাত ধরে এসেছি আমি
সে ক ত দিন হল,
রাতের আঁধার।
অচেনা আমার জন্য
ভালোবাসা থাকার তো কথা নয় তোমার।
কত ফুলের কুঁড়ি উন্মাদনায় ফুটল
মালা হবার লোভে নক্ষত্রের আলোতে
হল মলিন, মলিন মালা নীরবে
শুকিয়ে গেল লাঞ্ছনায়,
সব মিথ্যে।
পশ্চিম আকাশে শেষ আলোক ছটায়
সাঁঝের বাতি জ্বলে আকাশে
উদিত হয় শুকতারা, ক্রমাগত পাখির দল
ডানা মেলে উড়ে যায় স্বপ্নের দেশে।
তুমি কথা রাখনি
জীবন সন্ধ্যা আমার।
যে প্রেম ঢেউ খেলে অপ্রেমের স্রোতে
কেমন সে প্রেম ?
তোমাকে ভুলব বলে কতবার রৌদ্র ঝরা
মরুর বুকে চিৎকার করে বলেছি
তুমি চলে যাও, শূন্য আকাশে এক গাংচিল
মৃদু বাতাসে খবর পাঠায়
তুমি আসবে,
তুমিও বল তাই।
দিনের পর দিন থাকি আমি, আশা
মিটে না এই পিপাসা।
অবসন্নতা নিয়ে হেঁটে যাই অনেক দূর
এ পথেই তুমি হঠাৎ শুনতে পাই
বাজে তোমার পায়ের নূপুর।
আর কত দূর যাব আমি একা ?
হেমন্তের নবান্ন হল শেষ
ফসলের ঘ্রাণ মিশে গেল বাতাসে
তুমি কথা রাখনি।
কেউ কেউ দুঃখের মায়াজালে পরে রয়
আমি না হয় রইলাম দুঃখ পাওয়ার দলে
না হয় যন্ত্রণা আমায় কুড়ে কুড়ে খেল
কি আসে যায় তাতে এই পৃথিবীর কার।
চলে যায় কত কত দিন।
আবার তোমার দৃষ্টি লুকিয়ে এসে চঞ্চল করে
বুঝতে পারি তুমি আছ।
নরক গতি থেকে জেগে উঠি আবার
তুমি আমায় কথা দিচ্ছ,
আবার প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষিত হই।
আমি জানি এ তুমি নয়
তোমার হয়ে আমি আমাকেই দিচ্ছি এ কথা।
কাব্যের প্রথম প্রেমিকা
ছন্দের গাত্রোত্থানে অপরূপ কায়ায় উত্তেজনা প্রাপ্ত হয়ে
আজ শত শত কামুক কবির উত্তরোত্তর বীজ
সাদা পাতার কালো কালিতে
গদ্যের উপকূলে ঠিক ভালোবেসে ছিল মুক্তিপ্রাপ্ত হেঁয়ালি হৃদয়
আমি তারই উত্তরসাধক
তরঙ্গময় আকাশ পানি আর বালুর মিশ্রণে
রূপকথার পৃথিবী
প্রারম্ভ আরম্ভ যে করেছিলেন তার প্রাপ্ত অভিশাপে আজ
আমাদের শায়িত ইন্দ্রিয় বিলাস
স্বপ্নের ঠিকাদারিতে শতশত সাদা-কালো প্রাসাদ
গড়ে উঠে দিনের পর দিন
কফিনে প্রেমিকা স্বর্ণ শতদল
কবিত্ব কাবিনে তাকে হারাতে হল
স্বেচ্ছা বিহারীর কামিজ বোতামে
কালো দেশে মলিন বালিকা কাব্যের কৌশলে
কয়েদি হয়েছে অনন্তকালের
ধোয়া উড়ে সাদা সাদা
কালমেঘ, বৃষ্টি, রৌদ্র,
তাকে উপাসনা করে আমাদের কাব্যের প্রেম পাত্রী ।
বিশ্বাস
ফাল্গুনী বাতাসে উড়ে যায় অভিমান
জীবন জলাঞ্জলি দিব বলে ভালোবাসি আগুন
ফিকে হলুদের দেশে গিয়েছিলে তুমি।
তুমি যা গ্রহণ করলে অজান্তেই বর্জন হল অনেক
আকাশ স্পর্শ করবে বলে উঠছ উঁচুতে
মাটি দুরে যায় অনেক আমাকে সঙ্গী করে,
আর কত দূরে চলে যাবে তুমি ?
বিষকে বিশ্বাস করা যায়
প্রেমিকাকে নয় ।
উহ্যমান
আমিতো দেখিনা তাকে
হয়ত সতের পেরিয়ে গেল বছর
দেখা হয়েছিল তার আমার
তবুও কেন
কুঁড়ে কুঁড়ে কাঁদায় আমায়?
তখন পৃথিবী ছিল সবুজ
ট্রেন যেত প্রতীক্ষার পর
ঝক্ ঝক্… ঝক্…
আমরা পাশা-পাশী, কত উল্লাস।
বাতাসে তখন মকুলের ঘ্রাণ ছিল
কুড়ি ঝরে যেত দিনের পর দিন।
আকাশে এখন রৌদ্র ফুটে
দিগন্ত আর খুঁজি না আগের মত
সময় চলে যায়
রূপকথা বড় ফালতু মনে হয়
মনে হয় পাগলের প্রলাপ।
আচ্ছা আমিতো দেখিনা তাকে।
শৈশব হারিয়েছি সেই কবে
তাকে হয় না দেখা কত কত দিন পেরিয়ে গেল
তবুও কেন
কুঁড়ে কুঁড়ে কাঁদায় আমায়?
সে কি ঘাস হয়ে গেছে
এই পৃথিবীর বুকে ?
তার দেহ থেকে
ঘষি শুষে নিয়েছে নিজেদের জীবন ?
সে কি মাটিতে একাকার ?
আমিতো দেখিনা তাকে
তবুও কেন জেগে ওঠে সে
সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে ।
আমিতো দেখি না তাকে।
বিবর্ণ বাতাসে
মরীচিকার বিবর্ণ বাতাসে
স্বপ্ন গুলো ধূসর আকাশে উড়ে একা ।
হিমাগারে রাখা ভবিষ্যৎ
এক দুই শত লম্ফে ছুঁয়ে যায়
জীবনের আকাশ ।
ফাল্গুনী বাতাসে উড়ে যায়
ফিকে হলুদ পাতা
জীবন জলাঞ্জলি দিবে বলে
ভালোবাসে ছাই।
ফিকে হলুদের দেশে গিয়ে ছিলে তুমি ?
প্রতীক্ষায় মৃত্যুর স্বাদ
চুইয়ে চুইয়ে পড়ে আমাদের মাটির ঘরে
আলো নেই বলে খুঁজি না রঙ
রঙ্গিলা মানুষ গুলো
কালো জীবনে মুঠো মুঠো স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়।
আকাশের উপরে আকাশ ।
স্বপ্নের ঝাঁক উড়ে যায়
মরীচিকার বিবর্ণ বাতাসে
বিবর্ণ বাতাসে
বাতাসে..,
তোমার জন্য
যদি তুমি ভূমণ্ডল চাও,
তোমাকে দিব
ঐ জ্যোতির্মণ্ডলের সমস্ত অধিকার।
যদি তুমি জোনাকির ক্ষীণ আলোতে উল্লাস খোঁজ,
তোমাকে দিব
নক্ষত্র ভরা তারার জ্যোৎস্না।
যদি তুমি জল চাও,
তোমাকে দিব এমন প্রেম,
যেখানে তুমি-আমি মরিমরি করেও
ভালবাসবো দু-জন দু-জনারে।
অন্য বসন্ত
এখানে বসন্ত ম্লান হয়ে আছে
কমলা রঙের শুকনো পাতায়,
ঝরে ঝরে উলঙ্গ হয়ে আছে প্রকৃতি।
দূরের রোদ্দুর আকাশে
দৃষ্টি মেলে আছে কে ?
নিরস ছন্দে চঞ্চল তার মন
সে তো রূপসী নয় তবুও মনে হয়,
শুষ্ক ঠোঁট তার বিড়বিড় করে
হাওয়া উড়ে গায়ের মলিন আঁচল
গুপ্ত অভিলাষের নীরস খেলায়
চুল উড়ে তার, নির্জন নীরবতায়
ভাসে ভারী কান্নায় ফুলে উঠা অশ্রুর শ্বাস।
নিঃসঙ্গ শঙ্খচিল রোদ্দুর স্নান করে
চিৎকারে আতংকিত করে চারদিক।
ফিকে হলুদ ফাল্গুনী হাওয়া
উদাস পৃথিবী আজ।
কোন বৃক্ষ থেকে আসছে
ব্যর্থ কোকিলের করুণ সুর।
শুকনো বাতাসে উড়ে কিশোরীর অভিলাষ।
ঊষার পৃথিবী আছে, পাখি আছে,
হিমেল রাত্রি আছে, সব চলে
ঠিক আগেরই মত।
তবুও জেগে উঠেছে স্বাদহীন মনের অশান্তি
পূর্বাহ্ণ মধ্যাহ্ন অপরাহ্ণ চলে পৃথিবীর নিয়মে
আসে কাল আসে ঋতু আসে বসন্ত
এই বসন্তের সব, কিশোরীর অশ্রুতে ভেজা।
সাফা
প্রস্তর পাহাড়ে সহবত
আছি অনেক অনেক দিন হল।
স্তব্ধ পাষাণ পাথর সূর্য আলোতে
চিক চিক করে জলের স্রোতের মত
যেন বইছে সত্যিই জল আর জল।
তুবড়ি বাজিয়ে কে সাপ ধরতে যায় ?
মনের বিষাক্ত সাপ ব্যথিত আজ।
কারা ঐ ঘোরতর কোলাহলে হাঁটে ?
না, কেউ নয়, মনের সাদৃশ্য।
প্রখর রৌদ্রে মিশে আছি
সাদা সাদা পাথরে।
তোমরা কি কথা কও ?
প্রাণ আছে ?
তোমরাও কি ভালবাসতে পার মানুষের মত ?
বিরহে কি কাঁদ বিচ্ছেদের পর ?
প্রথম এ রকম নানান কথা
বলেছি পাথরের সনে
পাথর তো বলেনি কথা,
স্তব্ধ পাষাণ পাথর।
অনেক দিন হল,
মনে পরে যখন মানুষ ছিলাম,
নির্বাক বুকের ভেতর পিপাসায় কাতর
তৃষ্ণা পীড়িত মন দৃষ্টি নিয়ে এলো পাথরের স্তূপে।
পিপাসা মেটাবো বলে দ্রুত উঠি চূড়ায়
দেখি চারদিক শূন্য ।
দূরে দূরে যতদূর দৃষ্টি যায় সর্বত্রই বিশালতা
বৃক্ষলতা হীন মরু মরীচিকা সব
মরুর লূ হাওয়া টের পেয়েছিলাম
মৃত্যুর হাতছানি।
আকাশ-মরুর মিলন, মাঝে বইছে বালুকা ঝড়
আমি প্রথম বুঝতে পারলাম মৃত্যুর ঘ্রাণ
জনাকীর্ণ এই বুকে আমি একা।
অশান্ত মরুর বুকে উঠেছে ঘূর্ণিবায়ু
অদৃশ্য করছে এই ঝড়
শন শন শন রব উঠেছে চারদিকে ।
পাথর গুলো শান্ত,
আমি টের পাই, আমার শ্বাসরোধ হয়ে যায়
মৃত্যুর দূত আমাকে ছুঁয়েছে
আমি টের পাই পাথরের গায়ে লুটে পড়ছে
আমার শক্তিহীন দেহ,
আমি টের পাই।
দূর থেকে বালুর ঝড় আছরে পরে
আমাদের গায়ে,আমাকে ঢেকে দিয়েছে
পাথর-আমি আমরা মিলে মিশে হলাম একাকার
সেই বুঝি হয়েছিল অপূর্ণ জীবনের বাসর আমার।
অনেক অনেক দিন হল।
আলো-বাতাস-তারা-নক্ষত্র অনেক পেয়েছি।
এলোমেলো ধূলিরাশি ছেয়ে যায় আকাশ বাতাস
আমাদের ডেকে যায় আবার প্রকাশ করে,
জ্যোৎস্নার রাতে ঘুমিয়ে থাকে আমাদের দল।
পাথরের ঠোঁটে মিশেছে আজ আমার ঠোঁট
পাথরের দেহে মিশেছে আজ আমার দেহ।
সূর্যলোক অথবা চন্দ্রলোকে আমরা ব্যাকুল নই
আমাদের আলোতে আমারা সাজাই
আমদের জগৎ।
স্বপ্নের খামার
নিজ আবাদি মনন জমিতে তোমাকে রোপণ করি
সোনালী রঙ্গের সাদা সিধে বীজে
ভূস্বামী আমি নই অনিয়ন্ত্রিত এক চিত্রকর
যখন বুঝতে পারলাম তোমাকে ভালোবাসা মানে
ভেড়ার পালে বিংশ শতাব্দীর সিনেমার শুটিং
আমি স্বপ্ন বাজ আর তুমি খামি
খামখেয়ালে ভালোবাসি তোমায়,
তারপর থেকে আর একটিও কবিতা লিখতে পারিনি,
বিশ্বাস করো, একটিও না,
তাইতো আবার তোমাকে ভালবাসতে শুরু করলাম,
নোনা অভিনন্দনে আসছে কাব্যিক ভাষা ।
নীরব অতীত
বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে তোমার ঘ্রাণ পাই
গুপ্ত বাতায়নে সু-ঘ্রাণ অতিশয় গভীর
কোন এক নোনা সমুদ্রের গর্জন, ছল ছল
নদীর স্রোত, শিশিরের হিমেল কণায়,
আছো মিশে ।
ঈষৎ স্পর্শে শিহরন জাগে,
যেন তুমি সত্যিই ছুঁয়েছ আমায়।
পাখি উড়ে ঝাঁক ঝাঁক
কোন এক দেশ থেকে উড়ে আসে
অচেনা সব পাখির দল।
আহা! কত দিন দেখি না তোমার
শ্যামল অঙ্গ, বৈকালের নিথর আলো
পড়েনা আর আমার উঠোনে,
বস না তুমি আর অলস বেলায়।
শৈশব ফিরবে না কখনই জানি।
উদাস পৃথিবী,
স্থির হয়ে আছ চৈতন্যে আমার
তুমি আছ আমি আছি স্মৃতির কামনা নিয়ে মায়া।
এ অনেক অনেক দিন পর ।
এখন আকাশ জানি কেমন
বাতাসে মমতা নেই
ফুল আর ফুটে না আমার বাগানে।
অঙ্গ থেকে রক্ত ঝরে, লাল লাল রক্ত
ক্ষরণে অনুভব করি আলতো করে ছুঁয়ে দাও তুমি
অলৌকিক ভালোবাসা এই ।
প্রেম হয় নাকি এমন ?
আর কি হবে না দেখা ?
সেই মুখ
সেই চোখ
সেই ঠোঁট
কপালে ঝুলে থাকা তোমার চুল।
আর কি হবে না দেখা ?
শুধু আড়াল থেকে স্পর্শ করবে আমায় অনুভবে
অনুভবে এসে।
এই লেখাটি কবিতা নাও হতে পারে
আজকাল রোমান্টিক কবিতার খুব একটা কদর
নেই তবুও তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখছি
কারণ তোমাকে না দেখলে আমি তো আর কবি
হতাম না পৃথিবী একজন কবি হারাত যে ব্যর্থ
বাস্তব নিয়ে তোমার জন্য লেখে, গদ্য কবিতার
এখন বড় সমাদর, তাই সাদামাটা ভাবে একটু
পত্রের মত এই লেখা যা লেখতে সময় লেগেছে
আমার আঙ্গুল যত দ্রুত লেখতে পারে আর
তোমাকে নিয়ে শোনা একটি গানের অর্ধেক সময়
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি কি শুধু ভালো বেসেই
যাব ? বিনিময়ে কিছুই পাব না ? মিথ্যে অপচয় ?
না, অপচয় নয়, তোমাকে ভাবি বলেই তো আমি
কবি, কবি হওয়ার গৌরব কি অপচয় ? অপমান
সইবার মত ধৈর্য না থাকলে প্রেম করতে যেওনা,
আমি কি অপমানিত ? রাত কি আমায় অপমান
করে ? আধারে আমার অশ্রু ঝরা মুহূর্তে ? দিন
কি আমায় উপহাস করে ? দিবালোক তোমাকে
নিয়ে স্বপ্নে আমায় ? তুমি কি আমায় ?
না থাক
জানলে হয়ত আর আমি কবি হতেই পার বো না ।
আপনজন
এখন সন্ধ্যা ৭.২৮
আমি এই সময়কে সন্ধ্যা বলবো, না রাত বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না,
এখন কবিতা লেখারও সময় নয়,
কবিতা আসবে না,
মাথায় যন্ত্রণা বোধ হয়ে আছে
বার বার মনে হচ্ছে যে মানুষটির জন্য আমার রাত দিন স্বপ্ন
তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলে শান্তি পাই।
তার ঠোট চোখের সামনে ঘোরে ফিরে আসছে বার বার,
শুষ্ক ঠোট অথচ কি তরঙ্গ তোলে স্রোত সৃষ্টি করে ।
মনে হচ্ছে তাকে ঝরিয়ে ধরতে না পারলে বাচাই সম্ভব নয় আমার,
আর তাকে নিয়ে আমার সমস্ত জীবন কাটাতে না পারলে
এই জীবন সম্পূর্ণ যন্ত্রণায় যাবে,
আমি সব পেলেও কিছুই পাবো না শুধু তাকে না পেলে,
অথচ তাকে আমি মেরে ফেলতে চাইছি।
মনে হচ্ছে সেই আমার সব চেয়ে বড় অনিষ্ঠকারী,
সেই আমার সব চেয়ে বড় শত্রু,
সেই আমার সব চেয়ে আপনজন।
তোমাকে চেয়েছিলাম
বেশ্যার চিতার গলিতে সুখের লালায় আসে কামনার স্রোত।
এখানে সে আছ, আমিও আছি কিন্তু তুমি নেই
তার দেহের জমিনে তোমাকে বুনি,
অতঃপর
চুম্ব-নকরি একের পর এক,
অন্ধকারে উষ্ণ শ্বাসে নগ্ন দেহে বৈশাখ এনে দেয়,
সে কারো নয়, কোন পতিত প্রাসাদের
পেঁচার প্রেমিকার, বা ছয়শ বেশ্যার অভিশাপ মাখা
আমার যৌন জীবনের । আমি বুঝতে পারি
কোন এক মরীচিকার নোনা ঢেউয়ের তাল
নারীর সৃষ্টি কামনা নিয়ে আমাকে গ্রাস করে,
আমি অবশ হয়ে যাই ।
হয়তো এই প্রেমেই আমি
তোমাকে চেয়েছিলাম ।
অস্পষ্ট
শ্রাবণ বৃষ্টি এমন কেন আজ ?
বিমূঢ় মুগ্ধ অশ্রুতে ভেসে যায় দুটি চোখ
রৌদ্র তাচ্ছিল্য কেঁপে কেঁপে হয় স্বাধীন
পরাধীন প্রত্যাশার তপ্ত জলে
তোমার মোটা পা ছুঁয়ে দিয়ে
ঠোটের প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ
দৃষ্টির শেষ সীমানায়
তারা গ্লাসে গ্লাসে মদ নিয়ে
মাতাল করেছে আমায়,
তুমি নর্তকী নও তবুও তুমি নাচো।
কত হাসবে তুমি ?
কয়েকটি জোনাকি রাতের আধারে
সহকারী ওরা,
না, তুমি নাচতে বলো না, আমি শুধু দেখবো
জ্যোৎস্না ভেজা জ্যোৎস্নায়
অশ্রু ভেজা আমার অস্পষ্ট চোখে।
তোমাকে নিয়ে আরেকটি কবিতা
নীল আঁচল জড়িয়ে ছিল তোমায় একবার
তার পর এরূপ দেখিনি আর ।
দুইটি পাখি
সেকেন্ডে দুইশ বিশ কিলো গতি নেই আমার
সূর্যের আগে যেতে পারি তোমার কাছে
বেলা বারটার কড়া রৌদ্র, উদাস দুপুর
একটার ট্রেন এক ঝাঁক যাত্রী নিয়ে তিনটায়
ঝনঝন শব্দে স্টেশনে উপস্থিত
বৈকালের প্রতীক্ষায় তোমাকে নিয়ে।
আজ পাখিটি একা।
কালো পাখিটি এসেও আসে না কোনদিন
শৈশবে এসেছিল পথ ভোলা মন।
চাতক
জল স্পর্শ করে সাহারা ধু-ধু
নোনা জল বৃষ্টি হয়েছে কত মরুর বুকে
অতৃপ্ত আত্মায়।
একটি টিকটিকিও বেঁচে নেই
তৃষ্ণার স্রোতে ভেসে গেছে সব,
জ্যোৎস্না এসে চলে গেছে আবার
আসবেনা কোন দিন।
ঢেউ
ঢেউ যেমন চলে যায় /স্মৃতি রেখে বালুকা ।
,,
আচ্ছা, তোমার অশ্রু যদি ঢেউ হয়?
বালুকা হয় কাজল, কেমন হয় বলতো ?
প্রতিদিন
স্মৃতি
উৎকণ্ঠ
উৎসব,
নাহ, কোনদিন কাজল মাখনা বলে
স্মৃতি হয়নি আমি তোমার জীবনে
কলঙ্ক আজ আমায় ছোঁবে বলে
ছুঁতে দাওনি তোমার জীবন
রৌদ্র ঝরা মেঘের হৃদয়
গাংচিল উড়ে একা শূন্যতায়
পড়ে রয় ঘাসের ’পরে ঘাস
বর্ষায়!
তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতে ভালো লাগে
অশ্রু এখন চোখে ঘুমায়,
আমি মনে করার চেষ্টা করি ধূসর সন্ধ্যায়
আধারের আড়াল থেকে আসছে কুয়াশার সকাল,
স্টেশনে কোন যাত্রী নেই সুনসান চারদিক
বেঁধে বৃদ্ধ বসে আছে এলো চুলে
পশুর হাড় নিয়ে তাবিজের বাজার,
আলকাতরার ঘ্রাণ নিয়ে হাঁটছি
পাথর গুলো ঢেকে আছে কাঠের বুক।
আমি মনে করার চেষ্টা করছি,
বারান্দার সামনের ঘাস গুলো
ঘুমিয়ে আছে বৈকালের অপেক্ষায়,
কয়েকটি পাখি উড়ে গেল বুক ছুঁয়ে
নিরাকার নিরাশায় পোড়ায় সময়
অলস ব্যস্ততায় আমি একা
তারপর
তুমি দাঁড়িয়ে আছ অপেক্ষায় অনেকক্ষণ
আমার চোখে ক্লান্ত দৃষ্টি রেখে তুমি হাসছ,
উল্লাস,
আমি মনে করার চেষ্টা করছি,
তোমাকে হারানোর সতের বছর পর।
অতীত মনে করতে গেলেই
তপ্ত অশ্রু চোখেই শুকিয়ে যায়।
না ফেরার পাখি
রাতকে আমি আর বিবর্ণ হতে দিব না,
চাঁদের আলো আঁধার বেয়ে যখন দেখবে তোমায়,
তোমার ঠোঁট দুটি কাঁপছে, দুটি চোখ নির্বিকার,
কপাল ঘামে ভেজা, তখন তাকিয়ে থাকবো
অশ্রু ভেজা প্রতীক্ষার অতীতে,
অনেক সাধনায়, তুমি ভালোবাসা আমার,
যে রাতে চাঁদ থাকবে না আর কোনদিন
আঁধার জড়িয়ে থাকবে সমস্ত
আমিও জড়িয়ে থাকবো তোমায়।
হারিয়ে যাও যদি রাতের আলো
জানি ফিরে আসবে না কোন দিন।
আবার তোমার জন্ম হল
তাঁরার দেশে হাওয়া হয়ে গেলে ?
নীল আলোর ছায়ায় সাদা-কালো আলো হাসে !
তোমার জন্ম হল এবার বাস্তবের দিন-রাত্রির গ্রহে
বাস্তবতায়,
আবেগের সমুদ্র তোমাকে আর ছুঁতে পারবে না
আজ বিবেকের কাঠগড়ায়, তুমি হাসবে সত্যিই
শিশির ঝরা ঘাসে সারথি হয়ে।
অনেক রৌদ্র তোমার গায়ে লাগবেনা আর
অভিলাষে রঙ্গিন স্বপ্নের কবি হয়ে,
গৌরবের যত ইতিহাস তুমি কল্পনা কর
আজ বৈকালের শান্ত আলোয়,
রাতে তুমি মহীয়সী জোনাকির মিছিলে তুমি অম্লান ।
কু-উ- কু-উ কু কোকিল আজ রূপকথা তোমার
তুমি আর সাধারণ নও, প্রভু!
অতীতকে মৃদু হাসিতে বল, কি পাগলামি,
আবার তোমার জন্ম হল অনেককে ছাড়িয়ে
প্রভুদের দেশে।
স্নান
এসো
লাল গোলাপের রঙ দিয়ে তোমাকে সাজাই,
অতৃপ্ত আত্মা বৃষ্টি স্নানে ধুয়ে নিবে আমার মেঘ বিলাসী চোখ ।
তোমাকে বিদায় জানাই বিড়ম্বনা
আর একটি ব্যর্থতার সূর্য উদিত হবে না তোমার আকাশে।
তোমাকে স্পর্শ করবো বলে আকাঙ্ক্ষায় কাটিয়েছি রাতের পরে রাত
আজ ভোরেই তুমি জানালে…
অনেক বৃষ্টি হবে,
মেঘ পালকী বেয়ে বেড়াবে,
মেঘের গর্জনে সঙ্গীত হবে প্রকৃতিতে,
সাদার উপর হলুদ আর লাল আলপনার সুতি শাড়ি জড়িয়ে থাকবে তোমার অচেনা শরীর, কপালে লাল টিপ,
পুরো খোঁপা বেলি ফুল দিয়ে রাখবে ঢেকে,
রজনীগন্ধা গোলাপের মিশেল কানের দুল
গলায় মালা হবে কাঁঠালচাঁপায় হাতে শুকনো বকুল,
তারপর
ব্যস্ত হয়ে আশ্রয় নিব কোন গাছের ছায়ায়
ভিজে ভিজে মনের বিরোধিতায় বলব,
দুর-ছাই এত বৃষ্টি ? এত ঝড় ?
তুমি পাশ থেকে বলবে চল বৃষ্টি স্নান করি
নতুনকে নতুন ভাবে বরণ করার তোমাকে নিয়ে বৃষ্টি স্নান,
পৃথিবীর কেউ দেখবে না আমাদের।
কত বৈশাখে তপ্ত বৃষ্টিতে ভিজে আমার কল্পনার দুটি চোখ
তোমাকে সাজিয়ে…
ঝরা পাতার ছন্দ
ঝরাপাতার কবিতা গুলো আজকাল আর
তোমার পায়ের শব্দে মরমর করে উঠে না।
কাঁঠাল ঘ্রাণের করুণ বাতাসে
ছন্দগুলো ঝরঝর করে ঝরে যায় চৈত্রের দুপুরে।
আমি ঠিক বুঝতে পারি ,
চৈত্রের শুকনো বাতাসের দিনগুলো উদাস বটে
কিন্তু আমি নিঃসঙ্গ নই
বাস্তবের পাহারা সুখগুলো হত্যা করে আজকাল
ব্যস্তরই চৈত্রের সন্ধ্যায়,
যৌক্তিকতা ঠিক বুঝিয়েছে আমায়,
বাস্তবিক দিনগুলো কল্পনায় সাজিয়ে
ভেবো না ইন্দ্রিয় পৃথিবী নিয়ে এতো বেশী,
কেননা, আবেগ হল এমন, তুমি
মনের মত করে সাজাতে পার এই পৃথিবী,
বাস্তব ?
এখানে তুমি নাট্যকারের সামান্য অভিনেতা মাত্র।
থেমে থেমে উড়ে যায় চৈত্রের ঝরাপাতা
কবিতার পঙক্তি নিয়ে, ছন্দগুলো রয়ে যায় পঞ্চগুণে।
আমি ঠিক বুঝতে পারি, এ আমার চিত্ত চাঞ্চল্য।
ঝরাপাতার কবিতা গুলো আজকাল
তোমার পায়ের স্পর্শে আর মর্মর করে উঠে না।
আমি ঠিক বুঝতে পারি,
শব্দ হচ্ছে দাম্ভিকতায়
এ তোমার নয়,
অন্য কারো,
অন্য কোন পুরুষের।
তোমাকে দেখতে পাচ্ছি
কুৎসিত অন্ধকারে বিজুরি
দেখিয়ে যায় প্রকৃতি উত্তাল,
গাছ গুলো নত হয়ে বলছে, ভেঙ্গো না প্রভু।
ধুলোবালি উড়ে যাচ্ছে এলোমেলো বিকট শব্দে।
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে…
শূন্যে বিচরণ করে দেহ অনিচ্ছায়
আমি দাঁড়াতে পারছিনা সমস্ত শক্তি দিয়ে
সামর্থ্য ফুরলেই
আত্ম সমর্পণ করবো মৃত্যুর কাছে।
বিজলীর আলোতে দেখতে পাই
ভাঙ্গা ছেড়া গাছগুলো তীক্ষ্ণধারে অপেক্ষায়,
কখন আমার মাংসে পিপাসা মেটাবে হত্যার।
বিজলীর আলোতে আমি আরও দেখতে পাই,
তুমি আনমনায় তাকিয়ে দৃষ্টি ফেরাও
ঘর থেকে জানালা একটু ফাঁক করে,
মায়া নেই দায় নেই অমলিন নির্লিপ্ত দুটি চোখ।
আমাকে নিয়ে যাচ্ছে এ ঝড়
আমি আমাকে বাঁচাতে পারছি না
সজল চোখে তাকিয়ে আছি তোমার দিকে,
মৃত্যুকালে আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।
এ আমার সমস্ত জীবনের পুণ্যসঞ্চয়ের প্রতিদান।
প্রিয়তমা ,
মৃত্যুকালে তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।
তুমি কি সেই ?
কোন এক প্রেম আছে কেবলি উজ্জ্বল আলোক শিখায় মায়া ছড়ায়,
কোন এক প্রেম আছে কেবল হৃদয়ের মোহনায় আমাকে ঝরায় ।
ইশকুল শৈশবে এমনি দুরন্ত পনায় আমি তাকে পেয়ে ছিলাম
বনো-হাস অথবা হাসের মতন পৃথিবীতে;
শুভ্র নরম পাখা তার আকাশের বুকে জলের সমান
অথবা জলের বুকে মায়াবী করুন;
আমি তাকে দেখেছিলাম কোন এক প্রেমিকার পাশে
উজ্জ্বল অরণ্যে
বিকেলের মিঠা রোদ গায়ে মেখে নীরবে দাড়ায় পৃথিবীর সমান ।
কোন এক অশ্রু আছে ব্যাকুলতায় সিক্ত শীতল ,
কোন এক তৃষ্ণা আছে অফুরান মায়াবী অতল।
কোন এক মায়া আছে কেবলি বৃত্তের বেদনা ছড়ায় পৃথিবীর যত,
কোন এক প্রেম আছে কেবলি নি:সন্দিগ্ধতায় ফিরে আসে প্রেমেরেই মত ।
তুমি কি সেই ?
তুমি কি আমার স্বল্প আলোকে পাওয়া অতি প্রেম অতি মায়া
ফোঁটা ফোঁটা সাদা মাঠা রূপ ?
তুমি কি আমার পাথর পাথর ব্যথা
ব্যাকুল অরণ্যে রুপালী হরিণ ?
নীল কবিতা
তোমায় নিয়ে আজো কোন কবিতা লিখতে পারিনি
অথচ
কল্পনার সব সৌন্দর্য তোমার মাঝেই বিদ্যমান;
আর
আমার অসার কল্পনাও রয়েছে অনেক
তুমি কবিতা থেকেও ঊর্ধ্বে।
তোমায় নিয়ে কবিতা লিখতে গেলেই
আমি এক নীল কবিতা হয়ে যাই !
হৃদয়
দিনভর খুঁজে ফিরি
রাতের বিষাক্ত আফিম !
কেবলই আমার হাত গুলি কেপে উঠে
পাথরের ঘাসে ঘাসে সংকলিত মায়া ভরা প্রেমে,
বিষাক্ত প্রিয়তমার নরম ঠোটে!
কেবলই আমার মরুর ঘাসে দিনভর
বেদনা তাপাতে ইচ্ছে করে!
আজো যেই গান
পড়শির সুরে শুনে যাই অনন্তকাল
কেবলই সেই গানে নেচে উঠে
আমার পোড়া মাটি হৃদয়।
পাথরের প্রেম
নিষ্পাপ পাথরেও তো প্রেম থাকে,
থাকে অশ্রু ঝরা হাসি!
বেদনার পর মলিন মালায় থাকে
সাজানো খোপার ঘ্রাণ,
আমি কত কাল পাথর হয়ে থাকি
তোমার ঘুমন্ত চোখে
হৃদয়েরে পৃথিবীতে!
তুমি কার মায়ায় পৃথিবী সাজাও ?
আমাকে সিঁড়ি করে
তুমি হেটে যাও তার হাত ধরে,
আমার বুকের উপর আলতো করে,
তোমাদের পদ চিহ্ন একে যায় সমস্ত জীবন ।
তুমি হেটে যাও,
মায়ায়!
প্রেমে!
অফুরান অশ্রু স্রোতে !
গহন
হৃদয়রে ব্যথায় স্বপ্ন যতটুকু রক্তাক্ত হয়
বিলীন হয় মগজে মননে বিলাস
ততটুকু স্বপ্ন দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম তোমায়!
প্রেমে নয়, মায়ায় নয়, তুমি উড়িয়েছ সব
মামুলি ফানুস ভেবে!
আজ আমি ফানুস।
ফানুস হয়ে শূন্যে ভাসি
বিষণ্ণ আকাশে
একাকী অন্ধকারে ।
কিছু কথা
আমি তোমাকে বলেছিলাম
‘ পৃথিবীটা অদৃশ্য হয়ে যাবে ‘
তুমি বলতো,
জীবন কি দৃশ্যমান ?
হৃদয় কি দৃশ্যমান ?
আবেগ,
অনুভূতি,
হিংসা,
ঈর্ষা কি দৃশ্যমান ?
আর আমার প্রতি বা তোমার প্রতি এই যে ভালোবাসা
এই যে প্রেম প্রেম অভিনয় এও কি দৃশ্যমান ?
তাহলে তুমি কোন যুক্তিতে বলতে পারো পৃথিবী দৃশ্যমান ?
মরীচিকা খেলাঘর
এখানে বিষণ্ণ এক নদী ছিলো ছিলো সাগরের গহিন!
ছিলো নির্জন বাগানে পাখির কলরব।
এখানে একাকীত্ব ছিলো ছিলো ফিরে পাওয়া সুখ,
আমি কতকাল এই নদীর স্রোতে নিজেকে হারিয়েছি
গহিনে দেখেছি স্বপ্ন ।
আমি কতকাল বিষণ্ণ নদীতে পাখির গান শুনে
দেখেছি হাওয়া বেসে যাওয়া পাখির ডানা,
দেখেছি চকচকে রোদে কি করে চিল বিষণ্ণতা ছড়ায়!
দেখেছি কি করে পথিক তাকিয়ে থাকে বহুদূর কোথাও।
তুমি কতকাল আমাকে রেখে আকাশে উড়ে ;
হও মহীয়ান রূপসীর মতো নারী।
আমি আজো বিষণ্ণ নদীর স্রোতের পাশে
মন্থর ভেসে যাওয়া শ্যাওলা দেখে উপরে দৃষ্টি রাখি,
আকাশে ছাতক আছে আছে শঙ্খচিল আরও আছো তুমি !
আমি তোমাকে ভেবে অনন্তকাল ভেসে যাই বসে থাকার অভিনয়ে।
ভেসে যাই শুষ্ক নদীর স্রোতে,
প্রেমের মতো অন্য কিছু
একি শ্রাবণ নাকি বৃষ্টির অশ্রু প্লাবন ?
নাকি এ বকুলের সুগন্ধি শুঁকনো মালা ?
একি প্রতীক্ষার পর প্রিয়তম চুম্বন,
অভিমান তাকিয়া থাকা অভিমানী হাসি
নাকি এ কান্নার মতো
ভালোবেসে নীরবে ফেলা সুখ ?
তোমার চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবি
ঐ চোখে কি এত মায়া !
কি স্বপ্ন-সমুদ্র ব্যথা নিয়ে প্রেম জাগায়,
জাগায় করুণায় প্রেম ।
এতো তবে প্রেম নয়, ভালোবাসার মতো অন্য কিছু
অন্য কোন মায়ায় নিজেকে ভাসানো খেলা
মিথ্যে অভিনয়।
তোমাকে ভেবে আমিতো নিজেকে কখনই হারাই না
তোমার প্রেম স্রোতে ভাসি না জীবন স্বপ্ন নিয়ে
তবে কি করে এ ভালোবাসা হয় ? হয় এ প্রেম ?
প্রেম তো এমন নয়,
প্রেম হলো তোমাকে পেয়েও তোমাকে হারানোর ভয়।
মায়া
আশাহত জীবনে তুমি বসন্তের পাখি
হুদয় জ্বালাবে বলে এসেছিলো এমন!
তোমার হাসি কান্না বিক্ষিপ্ত কষ্ট যে প্রেম দিয়েছে আমায়
সেই অশুদ্ধ প্রেমে আজো অপচয় হয় আমারেই আবেগ
অপচয় হয় নিটোল ভালোবাসা
আমারেই হুদয়ের পাশে,
তবোও
তোমারেই গান গেয়ে যাই আজো,
অন্ধকারে !
মনে পরে
মগজে কি এক বিবশ বিষণ্ণতা
খেলা করে হৃদয়ের মতন !
শিখার লালায়িত মায়ায় যেন ভেসে থাকো তুমি
প্রতিমা,
প্রেম,
প্রতীক্ষ্যয় প্রতারক পরী ।
বিরহ
বেদনার মত যত ব্যথা আছে
কষ্টের ভেতর কেঁদে উঠে অন্তর আত্মা
নোনা প্লাবনের পর!
তখনো তুমি জেগে থাকো আমার স্মৃতিতে,
মনে,
ভালোবাসায়,
হারানো ব্যথায়;
তুমি বেদনার মহামায়া ভালোবাসা নাও
কাদাও,
তবে একেই কি বলে প্রেম ?
বলে প্রিয়তমা হারানোর ব্যথা ?
প্রেম
এখন প্রতিদিন নীবির সন্ধ্যায়
খুব মনে পড়ে তোমায়;
নথ ফুলে তাকিয়ে আছ তুমি এই,
কপালে কালো টিপ,
চোলে প্রেম প্রেম সৌরভ !
এখন
প্রতিটি সকাল শূন্যতায় আমাকে জাগায়
তুমি নেই !
অথচ
তোমার মুখের ঘ্রাণ,
ঠোটরে পরশ,
গোছানো বেণিতে
মনে হয় এই বুঝি তুমি এলে।
দীর্ঘশ্বাস
পৃথিবীতে কত কোলাহল;
ট্রেন বাস বায়ুযান কত জান চলে
কত কত সুখের মহড়ায় উল্লাসিত হয় প্রকৃতি
কত বেদনার পর ফিরে আসে প্রেম
কত বিরহের পর দেখি যুগলের মিলন মেলা
অথচ,
তুমি আর আমি দুই মেরুর
বহুদূর দুই দিক।
প্রতীক্ষা
আমি কতকাল তোমার চোখে চোখ রাখি না
রাখি না হৃদয়ে হৃদয় ।
প্রার্থনা
যার বুকে মাথা রেখে শান্তি পাও
তুমি তার কাছেই যাও
শান্তিতে ঘুমাও !
বেদনা
আমি বহুকাল পরে দেখছি তোমায়!
ততদিনে মর্দনে উলঙ্গ প্রেমে তুমি মেতেছ বহুবার;
তোমার সব লজ্জা ফানুস করে
কারো দেহে করেছ খরচ ।
আমি মাতাতে পারিনি যে প্রেমে
সেই প্রেমে তুমি মেতে আছো
যুগ যুগ ধরে অশ্রুতে,
বীর্যে,
বহু বেদনায় ।
স্বপ্ন
তোমায় নিয়ে
শূন্যে ভাসি
শূন্যে উড়ি
প্রজাপতির মত !
নীরব
শুকনো চারপাশ নিকুঞ্জ আমার
এখানে ঘুমিয়ে থাকো,
তারারা ঘুমিয়ে আছে ;
অন্ধকার
একটি রাতের মতোই রাত ছিলো আমাদের,
একটি রাতের মত রাত ছিলো তোমার,
একটি রাতের মতই প্রেম ছিলো
পৃথিবীর অন্ধকারে !
চাওয়া
তোমায় আমি এমন করে চাই,
তোমার মাঝে আমি ছাড়া
যেন অন্য কেহ নাই ।
অন্য কেউ
আমিও আজ মৃত্যুর মত সুন্দর
দূর হতে বহু দূরে পথিকের মত কেউ !
ব্যর্থ হাসি
কতকাল এভাবেই হারায় পোড়া মাটি হৃদয়!
হারায় বৃষ্টিতে,
মেঘের পালকী চড়ে
যে দেবতা আসে
আমাদের মননে,
এমনি বিক্ষিপ্ত হাসিত !
বাড়ি ফেরা
যেখানে মরণ নেশায় মৃত্যু খেলা করে রজনীর মতো
সেখানে প্রশান্তি আমার মরনজাত
পৃথিবীর সমান বেদনার পথে।
আমি তাকিয়ে আছি মৃত্যুর নগরীতে !
যারা ছিলো আপন, বন্ধু, স্বজন, হারিয়েছে বহুদিন হলো
সেখানে রোগ অবসান সেজেছে রূপবান
সেজেছে তারকাময়ী,
এই নক্ষত্র-শোভিতা মিলিয়ে আছে ঐ সরাব নগরে!
ঐখানে শান্তি নক্ষত্রদান অথবা যন্ত্রণার পাড়,
ঐখানে সুদীর্ঘ যৌবন জেগে আছে সমুদ্রবহ্নি যৌবন নিয়ে
ঐখানে মিলনস্থল তোমার, আমার, প্রিয়তমার,
ঐখানে বহু অচেনা মুখ সমুদ্রে বিন্দুপাত।
ঐখানে অফুরন্ত সমুদ্র বুক, অবরোধ কারাগার,
ঐখান তোমাদের পদতলে পারি হয় শত সহস্র বছর,
শত সহস্র কাল।
আমি জেগে আছি তোমরা তা জানো না!
গৃহ লক্ষ্মী মায়াবী করুণ বনে মধ্যবিত্ত পাওয়া গুলো
বাঁশ বনে ডোম করে রাখে ফাল্গুন ও চৈত্রমাসে।
আর আমার ইচ্ছে গুলো লোকান্তরিত প্রেমে
হাওয়ার শূন্যতায় ছোয়ে যায় তার শুষ্ক মরু বুক,
এ অন্য লোক!
এ মহা জীবনে সমস্ত জীবন এসেছে একাকার হয়ে
অকিঞ্চিৎকর মূল্য অথবা কঠোর পরিশ্রম করা অনশ্বর,
অতি জাগতিক মুদ্রার আড়ালে যে ক্ষুধা আন্ধার করে রাখে
আরম্ভ আকাশে সেই ঈশ্বর।
আজ,
ঊর্ধ্ব স্থিত এক শান্তি এক বেদ-মন্ত্রদ্রষ্টা এক ঋষী
এখানে কেও একাকিনী নয়,
এক ঘরিয়া জীবন কাল জাগানিয়া
তবোও তোমাদের অন্তরে থাকে আমাদেরেই ভয়!
একগুঁয়ে এক পার্শ্ব হে বন্ধু, এ তোমারো বাড়ি
এসে দেখো সবুজ ঘাসের আড়ালে আমরা জেগে আছি।
অন্যকালে আমিও সহজে ভীত ছিলাম তোমাদের মতো
সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর রক্তিম আলোকছটায়
যাকে তুমি সমাধিক্ষেত্র বলো বলো সাদা কাপড়.
ফাঁপা শূন্যতায় শোকোচ্ছ্বাস অদৃশ্য কলেবর।
শয্যা গত শরীরী বিহীন আত্মা নিয়ে রাতবিরেতে
এখানেই সন্তুষ্টির জলোচ্ছ্বাস এখানে আগ্নেয়গিরি তীব্র বেদনা,
মৃতক মারেফাত এখানেই শত কোটি মাজার।
মুন্সী ভয়ঙ্কর ভয়ংকর বলে যার বেদনায় ভয় ছড়ায় বেলা অবেলায়
সময় বিছানার চাদরে পাপ মোচনার্থে নেয় জরিমানা।
তোমরা যাকে নিষ্প্রাণ বলো, সে আসলে কি নিষ্কাম? নিঃশেষ নয়!
ধ্যান বেঁচে থাকার যৌবন নিয়ে চির যৌবনেই সে বেঁচে রয়,
এই মানুষ সেই মানুষ তোমার অদেখায় তোমাদেরেই হয়।
তোমারো আজ বাড়ি ফেরার সময় হলো
সে করুন অশ্রু ভেজা বিদায়ের দ্বারে,
হে স্বজন, হে বন্ধু, তোমার অভ্যর্থনায় আমিও জেগে আছি
বেদনার ক্লান্ত মরুমায়া এই একাকী অন্ধকারে।
ওখানে অনেক সুন্দর
শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণ বিহিত সারা রাত ধরে
সাদা সিধা কান্নাগুলো সমাধিমগ্নে কেটেছে বহুবার,
কেটেছে ঢেউ-খেলানো বন্ধনমুক্ত রুপালী আকাশে
ফন্দি-ফিকিরে যে অশ্রু আসে, আসে করুন পদতলে
আসে ঈশ্বরের ভাবে ।
বিশ্বাস করো গৃহকর্মে সুনিপুণা এই,
আমি সন্ধ্যাবেলায় জ্বলিত দীপ
শক্তি, শ্বাসের আয়ত্তে ঘুমের সামর্থ্যে
আলো আকাশের যৌবন কাল,
তোমাদেরেই চোখের ইশারায়
শয্যাশায়ী হওয়া আর রাত্রি থাকতেই ত্রাসে
চিরদিন জেগে ছিলাম,
ছিলাম যামিনী দিবায় মৃত্তিকা হয়ে,
মূর্ছিতের মতো নীরব নিঝুম মুক্তর নাড়ি ছেঁড়া ধনে,
মৃতকল্প যাকে নিয়ে করনি কোন দিন
আত্মজ আকাংখায় সুখের পায়রায়।
ভয় ভাঙ্গা বেদনায় সাগরতীরে বিছানা চাদরে
আর পূর্ণভাবে সমাহিত হওয়ার স্থানে
নিদ্রায় মগ্ন থেকে আড়াল করে ত্রিসন্ধ্যায় বহু বেদনায়
তুমি আজ !
বিশ্বাস করো এখানে অনেক সুন্দর!
মনোরম আকাশ নেই তবোও জেগে থাকে আকাশের বুকে
মনোজ্ঞ আকাশ, রমণীয় মহা-প্রেম তৃষ্ণা জাগানিয়া
জেগে আছে মনোমুগ্ধকর শত প্রিয়তমা, সবুজ সাদা সাত রঙ
চিত্তহারিণী নির্ণয়ে আনে প্রাণ, জন্মজন্মান্তর চিতা বেদনায়
এ জন্মের মতো মায়াবী রূপে হে বন্ধু, চির বিদায়।
সুন্দরের পথে কালক্ষেপ নিঃসঙ্গ উল্লাসে
এখানে এক মুষ্টি অন্ধকারে নির্মলসলিলা,
এখানে এক পত্নী বৈচিত্র্যহীন শত বৈচিত্র্য দীর্ঘকাল স্থায়ী,
এখানে অতি রূপ নিয়ে সরাব নহর, সুস্বাদু পাখির কাবাবে
গান করে স্বর্ণের পাতা বৃক্ষ ডাল।
আমি ঘোরায় আরোহী হয়ে ভাবি তোমাদের জীবন জন্মান্তর,
গায়ত্রী উঠানে, যেখানে আজ কিছুই নেই, শূন্যের ঘরসংসারসর্বস্বা,
অতিজীবিত তোমাদের হাহাকার
আর
এখানে অনেক সুন্দর।
মহা লগ্ন
গন্তব্যস্থানে পৌঁছেছি !
তোমার তীক্ষ্ণ চক্ষু অথবা পঞ্চেন্দ্রিয় দেখে না কিছুই
আমার এই উত্তীর্ণ হওয়া অথবা পুরাতন জীবন নতুন করে পাওয়া।
পৃথিবীর যত প্রেম যত ব্যথা আছে আজ
যত স্বপ্ন যত না পাওয়ার কোলাহল
সবে যেন মিথ্যে মরীচিকা আর মর্ত্যলোক,
তুমি তো দেখ না কিছু।
এ কি উপগ্রহ ? অন্ধকার বিবেকের মতো রুপালী ছায়া?
মাটির কদমে সাজানো দেয়াল?
শ্রুতির আড়ালে সত্য কলরব?
খানিকক্ষণ আমার চোখ স্থির হয়ে আছে!
তুমি আলতো করে চেপে দিলে পৃথিবীর সম্পাতি সন্ধ্যায়
আমার গন্তব্য মরু বহুদূর!
নির্জনতার মতো নীরস!
নিঃসঙ্গতায় স্থির হয় অনন্ত যতকাল!
পাষাণে পাষাণে ঘুটঘুটে পথ আমার!
তুমি তাকিয়ে আছ আমি সাদা পোশাকে রয়ে গেছি যেই আমিতে?
কাটখোট্টা পালকী সে শুষ্ক ও নীরস
শতেক শতেক লোকের সমাগমে
আজ যদিও অশ্রু প্লাবন, তবোও এইতো আমার
আমার গন্তব্যে পৌঁছানোর মহা লগ্ন।
আলোর আবির্ভাব
পর্দার আড়ালে অবতরণ যার
সে এক স্ফুরিত নির্ণয়,
ঘুণিত এক ধাঁধার সমাপ্তি
আর
অন্ধকারময় আমার ঘরের প্রদীপ।
সাংঘাতিক বেদনা নিয়ে এসেছে কাছে,
আমার পরিচিত শরীরের ভেতর
মগজে
মননে
সর্বত্রই সে ধীরে ধীরে এসেে যাচ্ছে,
আমার জীবন কে পূর্ণতা দিতে,
আমি তা বলতে পারছি না তোমাদের।
তোমরা দেখছ আমার নিথর দেহ
চলে যাচ্ছে অন্ধকারে ভূগর্ভে,
অথচ এ আলোর আবির্ভাব।
বিদায়
তুমি-তো জানো
প্রাচীন সর্প মানে জীন;
আর আমরা বয়স্ক হলে হয়ে যাই বৃদ্ধ।
যেখানে নক্ষত্রের মতো উল্কা উরে আসে কাছে
অন্ধকারে জেগে উঠে সুপারি অথবা আমের ডাল
সেখানে মৃত্যু আমাদের চোখে চিঠি দিয়ে যায়
অপক্ব চোল কারো বৃথা যায়না।
যে ঘরে জন্মেছে বাবা
সে ঘরে আমার মৃত্যু নাও হতে পারে
তবোও তো আমি মৃত্যুর কাছে পরাজিত,
জন্ম থেকে মৃত্যু আর আমার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
কখনো কি সন্ধ্যা দেখেছ তুমি?
চঞ্চলচিত্ততা নিয়ে তাকিয়ে দেখেছ কি
কি ভাবে দিনের আলোটুকু নীরব আধারে শেষ হয়?
আম বাগানের পুকুর ঘাটে কেমন আধার
ভয় জাগানিয়া জেগে ওঠে?
জেগে উঠে জীন পরি শয়তান?
পাখিদের ঘরে ফেরায় যদি কলরব হয়
আমার ঘরে ফেরায় তোমাদেরও কান্নার কলরব
তা তো হতেই পারে!
এ যে পৃথিবীর শত্রু মিত্র সখা থেকে চির বিদায়।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ