শাহীদ লোটাস এর কবিতা

চুনুরি শাড়ী

 

 

চুনুরি শাড়ীর অববাহিকা বন্ধনের অভাব,

আবাসিক নাগরিক যৌবনে ইলিমিলি ইচ্ছে গুলো

লাঙ্গলের দণ্ডে একের পর এক কষ্ট খুড়ে

উড় জীবন ক্ষুধায়,

অতঃপর

শ্বেতবর্ণ হরিণে সওয়ার হয়ে

দেখি একদার নিষ্ঠ শতেক শতেক পাপীদের হাসি,

এই জন্মের পারলৌকিক আর পরম্পরাগত প্রেম,

ঔরস্যে জীবিকার পথ

 

কংসবণিক দেখুন কড়াইয়ে শুভ সমাপ্তি,

অভিজাত সবজি, অবসন্ন প্রেম,

কড়াই অদৃশ্য আলোতে হারিয়ে যায় ফিরে এসে আবার

গৃহিণীর আসঙ্গ আবদারে রক্ত ঝরে,

প্রেম ক্ষুধা ক্লান্তির পর প্রেমে মজে গাছ সংক্রান্ত ইতিহাস লিখতে বসেছে

আমাদের অন্ধ ছাগল ছানা

আমাদের ইতিহাস করে,

এভাবেই চুনুরি শাড়ীর জীবনকাল

 

চিলেকোঠায় আজ আমাদের অসংখ্য চিলেঘুড়ি উড়ন্ত উজ্জীবন

 

 

 

 

 

 

 

দারিদ্র্য

 

 

পৃথিবী গভীর স্তব্ধতার আবছায়ায়

এসেছে ওপার থেকে সব প্রাণ

আলো-আঁধারি প্রাণ গুলো

রই রই করে খুঁজে আমাদের

এখন আলো-আঁধারি প্রাণ এক আমার সম্মুখে!

ভাঁজে ভাঁজে অজস্র চোখ তার

কালো না ফর্সা ঠিক বুঝা যাচ্ছে না

তার নীল চোখে দেখছে আমায়

প্রাণ খোর ক্ষুধার্ত প্রাণী এ

 

স্তব্ধ পাখিরা

যেন লুকিয়ে গেছে কোথায়

ব্যাঙ প্রহরী হয়ে সতর্ক করে চারদিক,

বনে গেছে আলেয়ার পৃথিবী!

 

আলো-আঁধারি প্রাণী এভাবে তাকিয়ে আছে কেন ?

ঝলমল করে নীল চোখ তার

নগ্ন সে

সে এগিয়ে আসছে,

ভয়ে চোখ বুজে রইলাম আমি,

তবুও দেখতে পাচ্ছি

তার বুকে কালিমাময় অসংখ্য খোলা মুখ

ভিতরের লতানো চোয়াল,

আমি দেখতে পাচ্ছি তার সব

 

আমি চোখ মেলে তাকালাম

সত্যিই সে এগিয়ে আসছে সমান্তরালে,

মৃদু বাতাস আমার ঘামে ভেজা গায়ে

উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে

 

আধারে অদৃশ্য সব!

মুখো-মুখি সে আর আমি,

আবারও চোখ বুজলাম,

হয়ত এ মনের ভুল

নিঝুম রাত্রিতে

আমার সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে,

আমি শোনতে পাচ্ছি ক্রমাগত ঝর ঝর শব্দ,

ঘুঙুরের ঝমঝম,

নূপুরের আওয়াজ, স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি বুঝতে পারছি

অবিশ্রান্ত ঝি ঝি আমাকে ঘিরে ফেলেছে

 

চোখ মেলে তাকালাম আবার,

চোখের মাঝে চোখ ঝাপসা হয়ে এলো,

দেখি তার বুকে আমি

আমাকে ছুঁতে চলেছে তার অসংখ্য চোয়াল

তার চোখ আমার চোখ ঢেকে রেখেছে এখন

 

 

 

পোড়াও সমাজ

 

সন্ধ্যা ধূমায়িত অন্ধকারে তুমি

এলিয়ে দিলে ভালোবাসার নগ্ন কাহন

 

বাঁশবনের ক্ষণভঙ্গুর পাখিগুলো

লালিমার সমাপ্তিতে স্তব্ধ হয়ে আছে

হয়ে আছে বোবা!

নগ্ন বধূ তোমার দেহ ঢেকেছে

সোহাগে ঝলসানো দেবতার চাবুক,

রক্তাভ চোখে কার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছ একা ?

এখানে, অস্থিচর্মসারে,

নগ্ন অভিলাষে,

কত কত নগ্নতায় কাটাও রাতের পরে রাত

 

তুমি কি জানো না আধো-আধো প্রেমে

কুকুরের দল জলাতঙ্ক ছড়াবে বলে

মিছিলে নেমেছে পতিতার বাজারে,

 

এই,

                   এই!!!

চারদিক রাঙা

পৃথিবী অন্ধকার!

 

তুমি কোন পথে উড়িয়েছ তৃষ্ণার আঁচল ?

এক, দুই, তিন…

চন্দ্র এলিয়ে যায় বিশুদ্ধ পরিতাপের নগ্ন সময়ে,

 

তুমি শীৎকারে পোড়াও সমাজ

 

 

 

 

 

ধৈর্য

 

 

হতাশায় আকাশটাকে মনে হয়

বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দেই

চোখের নোনা জলে ভিজিয়ে দেই

স্বার্থপর পৃথিবী

 

আমাকে দেখে উনি তো চিন্তিত নন

মোটেও চিন্তিত নন, উনি আমার আপন জন

গুরু, বয়োজ্যেষ্ঠ, উনি কেন নির্বিকার ?

 

ঘৃণা করব না অভিমান করবো বুঝতে পারছি না,

উনি হাসলেন

বললেন, ধৈর্য ধর!

জীবনের আরও কিছুটা সময় পার করে বুঝলাম,

 

আসলে চলতে চলতে ওনারা বুঝে গেছেন

জীবন কখনো এক জায়গা থেমে থাকে না

 

 

 

 

 

 

 

প্রতীপ

 

 

একটি রাত প্রতীক্ষায় আছে আমাদের!

আলো নেই, আঁধার নেই, অপেক্ষায় বিবর্ণ বাতাস

 

মহাজ্ঞানী ঠিক স্বার্থ বুঝে চলে

কিন্তু বুঝতে পারেনা তারা অন্ধ,

 

এঁটেল মাটির দেশে আলু ফলাব বলে

চাষ করি রাতের পর রাত দিনের পর দিন

ঘামে সিক্ত হই জমি

সিদ্ধি গাছ গুলো ঠিক বেড়ে ওঠে

 

কতশত দিন চলে যায় রাতের আয়না

 

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক

 

প্রেতাত্মার নির্বাসনে

রচিত হল আজকের এই কবিতা

 

মুমূর্ষু রাত মন্থর গতি নিয়ে এগিয়ে আসছে

পাতার চাবুকে প্রথম প্রহর চমকে উঠে

আকাশের কিনারায় ঘুমিয়ে থাকা চোখে,

নিরুপায় আলো শেষ দৃশ্য দেখবে না আর

প্রতি সেকেন্ডের মূল্য হয়ে আছে সহস্র শতাব্দী

এখন ঘুমিয়ে যাওয়া ভালো

 

প্রেতযোনি বসে আছে চুপচাপ

কি করবে তাই যেন ভাবছে আমাকে নিয়ে

 

 

 

 

 

 

 

 

ভৌতিক শব্দ

 

 

ভৌতিক শব্দের নিরবচ্ছিন্ন মুহূর্তগুলো

আমাকে আজো কাঁদায় দিনভর,

অলৌকিক স্মৃতির ক্যানভাসে দুপুরের কড়া রোদ

ঝলসানো ছায়াছবির একের পর এক দৃশ্য,

ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে চা-স্টলের ভাঙ্গা চুলোর লালায়িত আগুন

স্পর্শ করে প্রিয়তমার নীল ঠোঁট,

চুরুট জ্বালাবার আগেই তার সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যায় এক ফাল্গুনী বাতাস

 

চুমুর বিষে অবশ হয়ে আছে সে

কোন এক বীর রাজাকার

তাকে বীরাঙ্গনা করে চলেছে কত কত দিন,

 

সে ভূমিষ্ঠ করে স্বাধীন বাংলার স্বাধীন সু-পুরুষ

 

 

 

 

 

 

 

 

দিয়াশলাইয়ের আগুন চাই

 

 

বিনা টিকিটের যাত্রী হয়ে এলাম তোমাদের শহরে;

 

সোনার হরিণেরা কারবার করে কারিগরি মমতায়

স্রষ্টার কৌশলে কবুল করেছি মোকাম করেছি ধৈর্যের

 

ঘামে ভেজা টাকার নোটে সুখ আছে মায়ের, বাবার স্বস্তির নিঃশ্বাস

ভুঁইচাপা কতো কতো রাত আমাকে দিয়েছে ভালোবাসা ;

ভাতের ত্রাসে ভুলেছি সব,

বাবার চোখ তাকিয়েছিল চৈত্রের অনাহারী দুপুরে

মা ঠিক তার পাশে

 

কোরান বা বাইবেল পড়ার মতো শিক্ষিত আমি নই,

শুনেছি

রিজিকের মালিক স্রষ্টা

তুমি কি তাহলে সেই ?

নিকারের আকার ?

মায়ের মমতা?

বোনের হাসি?

বাবার চোখের ঘুম?

সব তোমার কাছে বন্দি ?

তুমি কল্পিত প্রভুর ব্যাখ্যা ?

 

অতৃপ্ত ক্ষুধা নিয়ে ভবিষ্যৎ রসায়ন প্রতিদিন আমার!

 

আমি তোমাদের শহরে!

 

আমার বিবর্ণ মুখে তাকিয়ে দেখ,

তুমি কি একবারও ভাববে না,

অপরাধী তুমি ?

 

আজ আকাশ হয়তো ভারী, কাল হবে স্বচ্ছ রৌদ্র রাঙা

তোমরা জাগবে তখন

 

অনেক অনেক দিন পর,

আমার বোনের আঁচল পুড়ে যাবে তোমাদের আগুনে,

মায়ের ক্ষুধা যন্ত্রণা বাবার আকাশ হবে ভারী

আকাশে মেঘ জমবে বৃষ্টি হবে আবার

তোমরা কেউ দেখবে না,

সেই বৃষ্টিতে হবে তোমাদের মঙ্গল স্নান

 

আমি দেখবো ওপার থেকে !

 

 

 

 

 

 

চিঠি

 

 

বেনামী চিঠিটা আকাশে বিপ্লব ঘটিয়ে

আমাদের উঠোনে যখন এলো তখন বৈকাল,

হর্ন বাজিয়ে রিক্সা ওয়ালারা ঘুরে যাচ্ছে

পাখিদের সন্ধ্যা ভোজন তখনো শেষ হয়নি

বাকি আছে ফড়িং আর মৌমাছির বৈঠক কাল,

আমাদের তখনো চিঠিটা খোলা হয়নি

যখন মেয়েটা আর্ত চিৎকার করে বলল তাকে ধর্ষণ করেছে চারজন বেঈমান,

ও একজন প্রেমিক,

আজকাল দৈহিক মিলনের জন্য রাত্রি প্রয়োজন হয়না

বলেছেন এদেশের বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ,

তবুও রাত বেকার আবরণে আমাদের ঘরে আসে বার বার,

আমার প্রেমিকা নেই!

বুদ্ধিমান মেয়েগুলো ঠিক বুঝে গেছে আমি বোকা

 

বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি,

যখন নর্দমায় ডুবে থাকা খাদ্য তুলে খায় বেনামী মানুষ

তরল ঝোলের মতো টপটপ ঝরে  নোনা জল

 

বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি

যখন সব মহিলারা তেঁতুল হয়ে যায়

আমার বান্ধবী সহ

 

বেনামী চিঠিটা তখনো খোলা হয়নি

যখন ৫২৭১ এর সব দালাল কেঁদে কেঁদে বলে,

আমার সোনার বাংলা

আমি তোমায় ভালোবাসি

 

 

 

 

 

 

 

মুরলী

 

 

কয়েকটি অনুচিন্তা থেকে অবুঝ দিদির ভালোবাসায়

হরহামেশাই হতে যাচ্ছে আপেক্ষিক পৃথিবীর খোরাক

আর

আপ্লুত প্রেমের আসরে ইলিশের গলা ছেড়ে যিনি গান গেয়ে থাকেন

তিনি ইস্পাত ঈগল

 

ঈশান মানে উত্তর-পূর্ব কোন আবার হিন্দুমতে প্রলয়ের দেবতা,

আমাদের মনের প্রলয়ের উকিল উঠানে ঊরু ছেড়ে বসে থাকেন

ঋণের তালাশি করবেন বলে.

তিনি বলেন, ঋষি বলতে অনেকেই বোঝ ধর্ম পরায়ণ চোল ওয়ালা লোক

অনেকেই এটা জানো না ঋষি মূলত বাঙালি চর্মকার জাতি,

এই সব তথ্য এডিশন করে 

এক্সপ্রেস ট্রেনের কামরায় আবার ঐতিহাসিক ঘটনা গুলো ঐরূপ ওজু নামায়

ওফাদার এক বিড়ালের হাতে তুলে দেন দেবতা ঔদ্ধত্য হলে,

ঔষধাজীবে কমবেশি সবাই কমিন খানাখন্দ আছে যার ঘরে

অথবা ঘরের নীলচে বারান্দায়,

আজ কাল আবার খেঁক শিয়ালেরও খামার হয় শুনছি

আর

কবিরা বলছেন গতানুগতিক কোন কবিতাই হবে না,

গরিবখানা বলতে বুঝতে হবে পশু পাখি অথবা যৌনকর্মীর অফিস,

দেবতা বলতে বুঝতে হবে স্বয়ং নিজেকেই,

ঘামাচি আর ঘাম বিচির মধ্যেকার প্রার্থক কি তাও ভাবছেন তেনারা,

ঘোড়া খেল আরও কত কি

 

চৌকির এক পাশে বসে ছুটি চেয়ে ছায়ায় জাওলা ঝুপে

কোপ মেরে টগবগ করছেন এক ঝাঁক বাদুর ছানা,

আমার আবার টনসিল

তাই তোমাদের অতসব ঠাট্টা বুঝি না,

ঠাকুরের ডাকবাংলায় সরকারী কর্মচারীর

বেশ আমোদ রয়েছে, সরাই বিস্কিট সবজি ও নারী,

আমাদের নারীগণ ঢেঁকিতে পায় তুলে যখন ঢুক ঢুক করে দুধ খায়

তখন তার দিকে তাকিয়ে থাকে কালা চান,

ণই বা নদীর কাছে তালিম নিয়ে এসেছে সে,

তালুক থাকলে তিহারী খেতাম আমরাও

থোকায় থোকায় দানব হতো ওয়েটার,

অথচ দাক্ষিণ্য দিতে গিয়ে হয়ে গেলাম ধর্মান্তর,

এই বিষয় আবার জেনে ফেলেছে ধাউড়িয়া

তাই নিয়তি বলতে কিছুই রইল না,

রইল না নিয়ামক,

 

প্লাটফরমে দারিয়ে তাকিয়ে আছি নদীর দিকে,

জলে প্ল্যাকার্ড ও ফাজিল ফকফক করে গাইছে বীভৎস গান,

আমি বীজগণিত বুঝি না বুঝি ভিতু হলে ঝামেলা পোহাতে হয় কম,

ভীমরতি হলেও মজলুম হওয়া যায়,

আর যাওয়া যায় মজলিসে

 

একদিন

যমুনায় যুঁই ফুল দিতে গিয়ে আবদ্ধ হয়ে গেলাম রাখি বন্ধনের

কতকত দিন পার হলো!

 

আজ আমি লাশ কাটা ঘরে !

এখানে লজ্জা শায়িত, পাশে শিক্ষক ষণ্ডা ও সখী,

সবাই মৃত্যুর আনন্দনে সজাগ,

ভালোবাসার হিল্লোল তুলো আমাকে করেছে হেকিম

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।