শাহীদ লোটাসের ৬ কবিতা
রাজদ্রোহ
যৌন কর্মীকে ধর্ষণ করার অপরাধে তোর ফাঁসি ।
সেক্স পরিষদের সভানেত্রীকে চরিত্রহীন বলার অপরাধে
কাল যার ফাঁসি হয়েছিল আজ নাকি তারই আবার জন্মদিবস
পালন করছেন এদেশের নামি-দামী যৌন সম্প্রদায় ।
হে নিষ্পাপ কামুক
তুমি তার ভুক দেখার আগে একবার দেখেনিও স্বার্থপরতার সরল অভিধান
তুমি তার ঠোঁট স্পর্শ করার পূর্বে বুঝে নিও মধুতে বিষের পরিমাণ কত
তুমি তাকে জড়িয়ে ধরার আগে বুঝে নিও কত লক্ষ প্রেমিক তাকে জড়িয়েছিল
ঠিক তোমারই মতো ।
বেশ্যাকে বেশ্যা বলা যায়, অভিধানের পতিতা থেকে,
কিন্তু জনপ্রিয় বারাঙ্গনাকে চরিত্রহীন বলেছ-তো
আবারও তোর ফাঁসি ।
কাণ্ডারি
তোমাকে সৃষ্টি না করলে
সৃষ্টি হতো না এই পৃথিবী,
এমন স্বীকৃতি যখন স্বয়ং স্রস্টাই দিলেন
তখন সংশয় বলে থাকে না কিছু আর আমার।
অসংখ্য আলোক বিচ্ছুরণের সহযোজনে
আঁধারে সমাজে এলো এক শুদ্ধ
শোধনে শোধনে হল মহা জয়ী।
জীবন্ত কন্যার কবর কবর খেলায়
বুঝল মানবের তাগিদে এদের বড় প্রয়োজন
প্রয়োজনে এলো, মা, বোন, প্রিয়তমা।
পরান্ন পালিত জীবন কে জানালো
এ কারো দয়া নয় স্রষ্টা এক
তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী
তিনি আমাদের বড় ভালোবাসেন
সেই থেকে আমরা হলাম স্বাধীন
আর
তুমি হলে কাণ্ডারি।
সত্য মিথ্যা
আল্লাহ্ ঈশ্বর যিশু ভগবান
রূপায়ণে ভেবেছি অনেক
বন্ধ পথের সত্য উদ্ঘাটনে
আমি আজ নির্বাক …।
স্রষ্টা নিরাকার ;
কে দেখেছে তারে ?
তুমি ?
অবিশ্বাসীরা আচার বিরোধী স্নান করে
আস্তিক কে বলে বোকার দল ।
জন্ম মৃত হীন বিশ্বচরাচরের স্রষ্টা এক ।
উপাস্য একমাত্র তাঁকেই কিন্তু তাঁকে দেখেনি কেউ
দেখেছেন মুহাম্মদ (সা:) বলেছেনও তিঁনি
সেই সর্বশক্তিমান ।
সরস্বতী দুর্গা,
আরেক জন বললেন,উনিই মানব জাতীর মাতা মহেশ্বর
মানব সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টি শিবের
জৈবিক মিলনে ,
এরাই ভগবান।
আমি ঈশ্বরের পুত্র,
তোমাদের পাপের প্রায় চিত্ত করে গেলাম
আমার শিষ্য হলে তোমরা স্বর্গবাসী,
বললেন দয়াময় যিশু খ্রিস্ট।
প্যাচ প্যাচ খেলায় সবাই বললেন
শয়তানের প্ররোচনায় তোমরা
স্রষ্টা কে চিনতে পারবেনা
স্রষ্টা ব্যতীত কাউকে উপাসনা মানে
নরকের নাগরিক।
পুরাণ কোরান বাইবেল সমাসক্তে
স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির মিলন বুঝেছি অনেক আগে।
আসলে কে স্বর্গের দূত
আঁধারি শয়তান তরে।
মহিমান্বিত প্রেমিকার
অত্যন্ত স্পর্ধায় লম্ফঝম্ফ করে প্রেমে পড়লো সর্পটি
প্রেমিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায়
’’ বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে ’’
বীণ বাজিয়ে সাপুড়িয়া নাচানোর দূর চেষ্টায়
খেল খেল রোদ্দুরে খেলে যায় অবিরাম ।
ভাঙ্গা হয়নি বিষদাঁত এক ছোবলেই
জইর থেকে মুক্তি পেতে পারে সর্প
তবুও
স্বেচ্ছায় যে আত্মদান করে তাকে কেউ হত্যা করার শক্তি রাখে না যদিও
সে পরাজিত আর দাস
মহিমান্বিত প্রেমিকার ।
ধ্বংসের দিন
প্রাণী গুলো এমন হা-হুতাশ করে উঠল কেন ?
প্রখর কিরণে ক্রুদ্ধ কেন সূর্য ?
বাতাস কেন বইছে দ্রুত পৃথিবীর বুকে ?
কি হল এই সুন্দর পৃথিবীর ?
আকাশের গায়ে আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে
বিকট শব্দ চারদিকে, অচৈতন্যে মৃত্যু সব প্রাণ
প্রাণ নিয়ে আসছে ভূ-দেশের প্রান্ত থেকে।
আজ ভবিষ্যতের শেষ দিন।
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুক
তৃষ্ণা মেটাবো কিসে ?
এ কি হল ?
অন্ধকার, পৃথিবী আঁধারে ঢেকে ফেলেছে।
আঁধারের মাঝে আঁধারি ছায়া
হঠাৎ জ্বলে ওঠে বজ্র অগ্নিশিখা
সব রঙ, মুগ্ধতা বিলীন হল বুঝি এই
লেলিহান ছুঁই ছুঁই করে ছুঁয়ে যায় সবাইকে।
আমি শূন্যে ভাসছি
আমি আলো আঁধারে শূন্যে ভাসছি।
কর্ণহীন, চক্ষুহীন, ভয়ংকর প্রাণীসব
ঘিরে ফেলেছে সবাইকে।
পৃথিবী নাশে কোন এক জগতের সৃষ্টি
এ জগতের নাম কি ?
সূর্যতাপে বিগলন হচ্ছে দেহটা
ছায়া নেই জ্যোৎস্না নেই প্রকৃতি হীন বেলা।
এসব দেখার কারো সময়ও নেই
অপেক্ষায় সবাই,
প্রাণী গুলো আচমকা শিহরে উঠলো
নিরাকার থেকে দেখা যায় অপরূপ আকার
ঐ নিরাকারে উনি কে ?
জ্যোৎস্নার পাহাড়
তুমি যে নগরে বেড়ে ওঠ তার নাম আরশি
তুচ্ছ বাগ-বিতণ্ডার পুতি দিয়ে গড়া আয়ুর মালা
তোমাকে পড়াবো বলে ছুটে যাই তোমার নগরোপান্তে ।
চলতে চলতে পারি হয় কত শত কাল,
নদী মাঠ সমুদ্র পারি দিয়ে শেষ হয় পৃথিবীর বিকাল,
চিত হয়ে আছে চাঁদের টুকরো, উপড়ে শামিয়ানা, রূপালী আকাশ,
অলৌকিক বারিচরে বালাম, মাঠের পরে মাঠ, জেগে আছে ঘাস।
সামনেই অলোকসুন্দর বালির-বাঁধ
কোন এক হেমন্তের রাখাল লাঙল চালিয়েছে তার বুকে,
মুগ্ধতায় মুষড়ে উঠে কোন এক অচেনা হৃদয়।
অতঃপর ক্লান্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, জগে উঠেই তোমাকে পাবো বোধয়।
তোমার নগর আর কতো দুর ?
সাদা সাদা রৌদ্র মেগের ভেলায় খেলা করে
আচ্ছন্নতায় , ঝলমল নদীর জল, জলের মাছ প্রথম গান ধরে
আমার ঘুমন্ত স্বপ্নের কিনারায়।
আচ্ছন্নতায় খেলা করে সমাধির ফুল ।
আমার আজকাল রাতজাগা রোগ,
রাতভর শুনি বাতাসের আকুল গান,
পাখির ভালোবাসা, বাতাসের চুম্বন, আঁধারের ঝরিয়ে থাকা,
তোমায় ভেবে এমনি পার হয় হাজার বছর।
পাইনা তোমার নগরের দার, আমি হেঁটে যাই দূরে
দূর থেকে আরও দূরে।
তারপর কখন জানি
তোমার নগরের এক বিষাক্ত আকাঙ্ক্ষা
আমাকে নিয়ে যায় জ্যোৎস্নার পাহারে ।
নোনা জল
দুধারি মতান্তরের নির্বাক প্রেমিকা
বল কাউকে ভালোবেসে ক ফোঁটা তপ্ত জল ফেলা যায় ?
একরাত ? দু-রাত ?
আমি তোমার জন্য সাত হাজার সাতশত রাত কেঁদেছি
দুরারোগ্য মন তোমাকে ভেবে কাঁদতে কত যে ভালোবাসে !
তোমাকে বুঝানো যাবেনা
পৃথিবীর ঐ প্রান্তে জেগে থাকা মনের আয়নার নীল মেঘে বসে আছ তুমি ।
মনের চাঁদ বিবেকের আড়ালে পুড়ে মরে আজ তৃষ্ণার ফুল ।
আমি অসার্থক কবি, শুধু তোমকে ভেবেই লিখতে পারি।
আবেগের কুহেলিকায় তুমি হিমালয়,
তোমার প্রতি আমার ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই
তোমার দেহে কখনই আমি কামুক হই না,
তোমার চোখে তাকিয়ে কাটাতে পড়ি অনন্তকাল,
তোমার দৃষ্টির প্রতি আমার বড় লোভ ।
ক্ষুধায় কাতর দুটি চোখ তোমার জন্য অশ্রু ঝরায়
তুমি মিথ্যে নয়, সত্যি বলছি ,
শাড়ি হয়ে আমার প্রেম আড়াল কর বৃষ্টির মত, নোনা জল ধুয়ে যায় !
তোমায় দেখার যে অধিকার আমায় তুমি দিয়েছ
সে অধিকার উর্বর মনে উৎপাদন করে নোনা জল ।
আমি অন্য জন্মে কাটাই প্রেমের মৌলিক হৃদয়ে,
জনৈক ভালোবাসার পালকী চড়ে তুমি আস রাতের পর রাত
চিরসধবা প্রেমিকা তুমি।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ