শাহীদ লোটাসের ১৪ কবিতা

 

আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার আগে তোমায় পত্র লিখছি

 

প্রিয়তম,

ঘার-ঘুম আমাকে আর অবশ করে না

মাঝ রাতে গোঁ গোঁ শব্দে আর ভয় পাই না,

যে বছর তোমায় দেখেছিলাম গোধূম খেতের পাশে

নাকের ডগায় ছিল লতানো নাক ফুল,

বোধয় খেলছিলে

ঘুম কাতরের ঘো ঘো ডাকা নির্জন দুপুরে

ঘাস ফুল অলঙ্কার করে,

গোড়ালি উঁচু করে আকাশ ছোঁয়ার মতো

তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে শূন্যে,

তখনেই ভেবে ছিলাম তোমায় ভালো বাসতে হবে

 

সেই থেকে আকাশে আর চাঁদ উঠে না, শুধুই ঘাস ফুল

চোখে বেরায় বেদনার জ্বর

 

প্রিয়তম,

এই শহরে এখন তাসের খেলায় খুন হয়

রানীর দেশে আততায়ীরা বেশ মুক্ত,

 

প্রিয়তম, এখন কি রাত ? রাত দিনের আলো থেকে

নিষিদ্ধ করেছে ওরা আমাকে, দিনের আলো কতদিন গায়ে মাখি না

রাতের আকাশে জ্যোৎস্না দেখিনা কতো দিন হল,

এই ছোট্ট মৃত্যু কুপ আজ আমার পৃথিবী

এখানে রমণীরা তোমাদের মতো কোমল নয়

ঘাস-ফুল ভালো বাসে না

চাঁদের রাতে মেঘের ঢেউয়ের মত কারো চুল উড়ে না,

যেমনি উড়ত তোমার ঘ্রাণে-সজ্জিত কালো চুল,

মন অবশ করা মাতালি ঘ্রাণ, এইতো এখনো যেন পাচ্ছি

এইতো আসছে আহা: প্রতিদিন পাই

 

 

প্রিয়তম,

আমি ঠিক বুঝতে পারছি আজ শেষ সন্ধ্যায় কনফারেন্স হবে আমাকে নিয়ে এরপর

লাল লাল রক্তে গুম হয়ে যাবে আমার অশরীরী আত্মা,

আমি বুঝতে পারছি

আমার দিকে এগিয়ে আসছে বিশ্বাস ঘাতক দালালের দল

ওরা প্রতিদিনেই আসে, মাতাল হয়ে,

ওরা নাকি তোমাদের রুপালী দেশের স্বপ্ন দেখায়

রাজ ভাত সিংহাসন আর সুখের তরীতে ঢেউ তুলে অবিরত

তারা নাকি রাত জেগে বসে রয় তোমরা নিশ্চিন্তে ঘুমবে বলে,

 

আমি সব জানি, এ সবেই তাদের অভিনয়, রচনা করে কোন

এক রক্ত পিয়াসু জল্লাদ, তাকে চিনে ফেললাম বলে-ইতো

তোমাদের স্বপ্নের ঘোরে আমি চিৎকার দিয়ে বলেছিলাম,

নরক বাসে আমি খুশি নই, যারা দেবতা নয়, তাদের পায়ে

কখনই আমার পুঁজর ফুল পড়বে না, আমার আঙ্গুল

 ঠিক ঠিক তাদের দিকে এগিয়ে যাবে,

সেই থেকে আমি হয়ে গেলাম রাষ্ট্রদ্রোহ, তোমরা আমাকে ঘৃণা করলে

 

কালো পতাকা নিয়ে,

প্রিয়তমা বিশ্বাস করো আমি কষ্ট পাইনি,

আমার বেঁচে থাকার মানে-ইতো তোমাদের জন্য লড়াই

আমার জীবন মানে-ইতো তোমাদের,আর মৃত্যু যদি আসে

সেও যেন তোমাদের জন্যই হয়, কিন্তু আপসোস রয়ে গেলো !

তোমাদের পায়ের শব্দে কোন স্বাধীনতার  ঝংকার উঠেনি না

সর্বত্রই নরক অভিমুখী  যাত্রা

তোমাদের কোচ কাওয়াজে আমি পদপিষ্ট হলাম

 

প্রিয়তম,

তুমি কি এখনো গোধূম খেতের পাশে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো ?

 

আমি জানি তোমরা আর সবুজে ভাস না, শহরের ইট পাথর

তোমাদের ভালোবাসা শেখায়, এখন তোমরা অনেক আধুনিক,

আর গণতান্ত্রিকও বটে,

তোমরা শহরে শহরে রাজ পথ প্রকম্পিত করো প্রতিবাদে,

 

কিন্তু কোন পথে হেঁটে যাও আজ ?

তুমি কি জানো  ?

তোমরা যার পায়ে জল দাও দেবতা ভেবে,

সেই তোমাদের স্তনের দিকে তাকিয়ে থাকে লোলুপ দৃষ্টিতে,

তোমাদের পিঠে সে হাত বোলায় কাম-সুধায়

 

প্রিয়তম,

আমি জানি এই পত্র তোমার কাছে পৌছবে না আজ,

বাতাসে অদৃশ্য হবে পত্রের সব কটি বর্ণ

কেউ পড়বে না এই শব্দ গুলো, কিন্তু একদিন তোমরা দেখবে,

যা লিখে গেলাম অথবা  যা লিখবার ইচ্ছে ছিল সব কটি শব্দ

ঝলমল করবে তোমাদের দৃষ্টিতে,

আর সেই দিনেই তোমরা হবে স্বাধীন

 

প্রিয়তমা

আমি খুন হয়ে গেলাম !

 

 

স্বপ্নের অলি-গলি

 

কতদিন পর তোমাকে দেখতে পাব!

তুমি আবার বাইক চালাও বলেছে তুমি যাকে বাস্তবে দেখনি

আমি প্রতীক্ষায় আছি যুগের পর যুগ

পরিপাটি হয়নি বলে তোমার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না,

আমাকে স্নান করতে হবে

চলে গেল কিছুটা সময় , আমি কি লজ্জা পাচ্ছি ?

তোমাকে দেখার জন্য-তো আমি দেড়যুক অপেক্ষায় ?

তবে কেন এই অলসতা ?

না, আমি ভয় পাচ্ছি ?

আমি এখনো জানি না , তুমি আমাকে দেখতে চাও কি না

আমি এখনো জানিনা তোমার সামনে দাঁড়ালে তুমি আমাকে সহজ মেনে নিবে কি না

আমি এখনো জানিনা  আমি কি তোমার কাছে এখনো পরিচিত কি না

কেটে যায় দুপহর, বৈকাল, সন্ধ্যার আধারে আসে রাত

আজকাল বিদ্যুৎ বড় ফাকি বাজ, আমার ভাঙ্গা ঘরে আবার বৈদ্যুতিক তারের ঝামেলা

লো-ভোল্টেজ বলে বাল্ব জলে নিভ নিভ

হঠাৎ বুঝতে পারি আমার আলো ছায়ার ঘরে তুমি

বসে আছো আমার চৌকির একপাশে

সাথে তোমার বোন, যে আমাকে তিরস্কার করেছিল

সে আর তুমি দুজনেই বুজি সমস্ত দিন অপেক্ষায় ছিলে

আমার জন্য

তাই রাতের আঁধারেই চলে এসেছ

আলেয়ার আলোতে তোমাদের দেখতে পাচ্ছি না

বুঝতে পারছি তুমি অনেক বড় হয়েছ

মাঝারী চুল তোমার পড়ে আছে পিঠে,

 

তুমি তাকিয়ে আছ ,

 

তোমার বোন ওঠে এলো আলো জ্বালাবে বলে,

আমিও দাড়িয়ে, আলো জালাতে চাই

যেন পরিষ্কার তোমাকে দেখতে পারি,

 তোমার চোখে চোখ রেখে বলতে পারি

তুমি কেমন আছো ?

এতদিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তুমি কি বুঝতে পাওনি ?

 

সুইসে চাপ দেবার পর

একি !

এত আগুন ? আমার ঘরের সব বাল্ব নিভে গেল!

সব বৈদ্যুতিক সুইস পুরো অঙ্গার!

আমি আর তোমার বোন আমরা হতবাকএকি হল ?

ঘড় অন্ধকার কেউ কাউকে আর দেখতে পাচ্ছি না আমরা

বুঝতে পারছি

তুমি বসে আছো আমাকে দেখার অপেক্ষায়

যেমন আঠার বছর ধরে আমি আছি

 

 

স্মৃতির শিকল

 

 

স্মৃতির শিকল ছিঁড়ে গেছে আজ

তোমাকে পাবার জন্য আবার অতীতে পর্যটক হবো,

নগরে নগরে বাউল সেজে হাওয়ার পিঠে

কালো বালিকার ধূসর হতে আলতো করে বিকেল বেলায়

আমাকে যেতে হবে এই মহাদেশের ঠিক অপর পিঠে

 

দশক পরে আজ উষ্ণতা প্রেম জালায়

তোমাকে পাবার জন্য স্বপ্নগুলো স্মৃতির পাহারায় কাঁদে অবিরত

যখন নগরে বাউল হয়ে ক্লান্ত হই

দেখি আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ

স্থির হয়ে ভেসে যায় স্মৃতির ভেলা

নোনা স্রোতের রুপার দেশে আমি একা

চারদিক অস্পষ্ট

 

তোমার ঠোটের বিষাক্ত ছোবলে

অবশ হয়ে আছে স্বাগতিক চৈতন্য

 

 

উষ্ণতার রূপায়ণ

 

অনেক রৌদ্র

হৃদয়হীন আকাশ থেকে কাঁদে

ভুলে যাওয়া রোচ্য মনের রাখাল

নিষ্কৃতি পাবেনা বলে সবাই দন্তহীন

হাসিতে মেনে নিয়েছে

নিরুপায় মন

স্থির জলে মেঘের মত শ্যাওলা মেলে

উকি দেয় মৎস্য

ধুয়ে নেয় চোখ

তুমিও তাকিয়ে আছ, রৌদ্র রাঙা এমন দিনে ?

ঠিক তোমার মত রূপস ভবিষ্যৎ

ঝুনঝুন শব্দে উষ্ণতার রূপায়ণে

এসেছে অনেক

এক

       দুই

             শত

                     লক্ষ

স্নায়ু কাঁপা মৃত তুমি ক-ত দূরে ?

শৈবাল গাড় সবুজে রৌদ্র লেগে

আধ্যাত্মিক প্রাসাদে মহারানী এক

মুক্তা ঢেলে দেয় অতীতের যত দিন

আজ অনেক রৌদ্র

গালে গজগজ দাড়ির সাড়িতে

বুঝি ক্রন্দন আর মানায় না

তবুও…

তোমায় ভেবে কাঁদি

একদিন শান্ত স্বর্ণময় পৃথিবী ছিল

মধুর উজ্জ্বল ছিল দিন

তুমি ছিলে তাই

 

 

নীল আকাশ

 

প্রেম নয় ধুলো নয়

আছে ফাগুনে হৃদয়

ডানা হাওয়ায়ে মেলে

উড়ে যায়,

দূরে

 

নীল আকাশ

 

 

অনুভূতির মৌচাক

 

চতুরশ্ব মেঘের গাড়িতে চড়ে

হৃদয় চলেছে কার ?

চাঁদের আলোয় দেখেছি তারে

সে এক পরজীবী মানব

হাওয়া ভাসে ছেড়া পদ্ম

স্মৃতির স্রোতে হয়ে আজ মলিন

ঝাঁক ঝাঁক দৈব ভালোবাসা

হৃদয়ের কাঠগড়ায় বেঈমান হয়ে হাসে

হু.হু.হু…

বর্ষার যন্ত্রণা কখনই যেন ছোঁয়া যাবে না তাকে

জলাতঙ্কের অহংকার,

এমন

      আর

            কত

                দিন ?

বাঘের থাবায় পড়েছে,

চিত্ত স্থৈর্য হরিণ শাবক

চন্দ্রাতপ হয়ে শরৎ এর হাওয়া এসেছিলো,

ঈষৎ কম্পনও হয়নি কি তার ?

মরে যেতে যেতে চেয়ে ছিল ঠিক চোখে

নির্দয় দৃষ্টি

চিরে চিরে খায় ভালোবাসা আহা !

রক্ত মাংস মাটি সিক্ত হয়ে

হয়েছে উষ্ণ রক্তে লাল

আর কত দিন ?

গর্ভবতী বাঘিনী বসে কাঁদে নিরুপায়,

তৃষ্ণা মেটেনি কারো কোনদিন

বাঘের পিয়াস

শঙ্খচূড় সর্প দংশন করেছিল

সে..ই..কত…দিন

এখনো বিষ যন্ত্রণা কমেনি

বেড়েছে শানাইয়ের সুর

সূর্য ডুবে যায় তৃষ্ণা প্রণামে আবার

চতুরশ্ব মেঘের গাড়িতে চড়ে

হৃদয় চলেছে ঐ ,

মউ রানী হৃদয়

তোমাকে ঘিরে আছে

অসংখ্য অনুভূতির মৌচাক

 

 

সোনার কাঠি রুপোর কাঠি

 

উপরে উঠলেই আপেক্ষিকতত্ত্ব কাজ করে আমাকে নিয়ে

যেমন তোমাকে ভুলে যাওয়া মানে প্রামাণিক ভালোবাসা

তোমার কাছে নিয়ে যায় বেদনার মত

তারপর জলপ্লাবন, বৃষ্টি, জ্যোৎস্না, নীল আকাশ,

প্রবোধ করে একে দেয় তোমার বৃষ্টিহীন শরীর

মুঠো মুঠো সোনা তোমার কপালে ছড়ায় লতানো স্বপ্ন,

উষ্ণ ব্যাকুলতা আসে সোনার কাঠি রুপোর কাঠি,

তুমি ঘুমিয়ে নেই, তাই বদলে দেয় মনের খেয়াল

আমি বুঝতে পারি তোমার চুল অথবা চোলের ঘ্রাণ

আমাকে অবশ করে দিচ্ছে

তোমার শুষ্ক ঠোট বিষাক্ত, আমার জন্য তাই মহা ঔষধ

আমি ঠোটের তৃষ্ণায় পিপাসায় কাটাই কাল নিশি

তোমাকে আরেকবার পেতে ছুটে যাই রৌদ্রের দেশে

মহাকাল চলে যায় তোমাকে পাওয়া হয় না ,

স্মৃতি পক্ষের সেনাদল আমাকে ঘিরে ধরে

শহরে,

নগরে,

পাড়ায়, আমি চাঁদনী রাতের সবুজ দেখে থমকে দাঁড়াই,

এ সবুজ নয় তোমার শাড়ীর আঁচল!

মহারহস্যে শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা তুমি মহামায়ায় বৃষ্টি ঝরাও

বার বার আমার চোখে

 

 

সোনালী হরিণ

 

একটি চাঁদ আমি স্বপ্ন দেখি

আজও দেখেছি,

তৃষ্ণাতুর ভুকে তার সোনালী হরিণ

 

তোমার জন্য একটি চাঁদকে আমি নক্ষত্র হতে দেখেছি

ধুসর কল্পনা মাখা চাদর ডেকে আছে নীল চোখ

সোনালী আদরে চমনের লালা লেগে আছে কপালে

আমি তোমর জন্য একটি চাঁদকে নক্ষত্র হতে দেখেছি,

চাদের বুড়ি পড়ে আছে চকচকে জ্যোৎস্নায়

মাথায় শৈশব, কোলে আছে তোমাকে ভালোবাসার

রক্তিম বাসর, তার বুকে জেগে আছি আমি

 

 

স্বপ্ন যোগ

 

দলহীন পাখীগুলো উড়ে গেছে বিরান পাহারায়

দৃশ্যের মাঝে অদৃশ্যের খরতাপ, পোড়ায় শৈশব

রেললাইন এসেছে আরও কাছে,

নগ্ন ইট পাথরের ধ্বংস স্তূপে

পরিণত হয়েছে তোমাদের সেই ঘরটি

তোমরা নেই বলে, রৌদ্র প্রখরতায় পোড়ায় সমাজ

বসতি বুঝি এভাবেই উৎখাত হয়ে যায়

প্রাচুর্যের গরিমায় হারায় শৈশব,

তোমাদের সব স্তূপ করে রেখেছ ভেঙ্গেছ

অতীতের প্রাসাদ, আমার বাগানে

এখনো একটি গাছ মৃত্যুহীন

ধুলোবালির আবরণে ফুটে আছে একটি ফুল

নীরব আর্তনাদে,

বারান্দায় আমি দাড়িয়ে আছি

মনুষ্যত্বহীন প্রকৃতির এই জীবনে

কে যেন দৌড়ে এসে দেখে গেল আমাকে

তোমার কথা বলেছিল যে তারে মা

খুশি হতে পারল না আমি কবি হয়েছি বলে

তোমাকে নিয়ে লিখি কবিতা, অপরাধ!

দৃষ্টির সীমানায় বিষণ্ণ বাতাস, রৌদ্রে পোড়ায় কবিতার বই

ধারাবাহিক কান্নার হয় না সমাপ্তি

 

প্রতিদিন তপ্ত অশ্রুজলে স্নান করবে তুমি,

অনুভবে !

 

 অনেক রাত

 

পড়ে থাকে পাতাদের ঘুম

রাতভর ঘুমিয়ে থাকা পালক শূন্যতায়

সকালের আলোয় জেগে উঠে কাল রাত্রির পর

কত সকাল আমরা হারিয়ে যাই তোমাদের দেশে

নির্ঘুম আকাঙ্ক্ষায় আমাদের তোমরা

একান্নবর্তীর গল্প শোনাও

এমনি সকাল হারিয়েছে প্রাণহীন পাখীর ঝরা পালকে

আমরা হেঁটে যাই মহামায়ায় তোমাদের দেশে

হিজলের বনে অচেনা পাখীর চির চেনা সুরে

আমাদের কোথায় যেন নিয়ে যায়, একা

রাতভর বৃষ্টি হয়েছিল জ্যোৎস্না ভেজা আলোয়

পৃথিবীর সব পাখি স্নান করে বলে ছিল, আর নয়

শুভ্র ভালোবাসা,

 

এখন আর বৃষ্টি হয় না

জেগে থাকে তারার দেশে জোনাকির মিছিল,

অস্পষ্ট আলোয় হিজলের বন দূর থেকে আরও কাছে

চাঁদের আলোয় ঝিলমিল করে তোমাদের রূপসী নদী,

পড়ে থাকে পাতাদের ঘুম

ঘুম ভাঙ্গা আকাশে জেগে থাকে রাতের পরে রাত,

তোমাদের দেশে

 

 

ঘাস ফুলের জল

 

এ বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সতেজ চিৎকার

অনন্তকাল থেকে শোনা যায় দিনের পর দিন

সবুজ ঘাসের অশ্রুতে

কার যেন পদ স্পৃষ্টে মরে যায় তারা

জেগে ওঠে আবার নীরব ভালোবাসায়

রাতের আধারকে পালকী করে আকাশ ছুঁয়ে

প্রভাতের রাত জাগা পাখীর গল্প কথনে শেষ হয়

কোলাহলের নীরব উৎসব

 

দিনের পর দিন এই চক্র জীবনের হয় না অবসান

নির্বিরোধী জীবন দেখা হয় না কারো

আমাদের দৃষ্টির ক্লান্তি ছাড়া

আমরা আছি প্রভু হয়ে

গরু ছাগলের চারণ ভূমি

ঘাস ঘুমিয়েছে নীরবতায়, মৃত্যুর স্বাদে

 

 

প্রতিবিম্ব

 

তুমি কোন পথে হেঁটে যাও?

 

রৌদ্রে শুকায়ে ধুলো উড্ডয়ন

আমরা অপমানিত হই তোমার পায়ের শব্দে

 

ঐ শব্দটি খুব অপ্রিয়

সবুজ শস্যে চৈত্রের খরা হয়ে

একটি সাদা পাখিও উড়তে দেয়নি

তোমার আকাশে, কীট গুলো

তোমার ক্ষুধার্ত আত্মার ক্ষুধা মেটাতে দেয়নি কোনদিন,

তিক্ততায় মৃত্যু আত্মার যন্ত্রণায়

 

ওরা সবাই মহানন্দে করেছে যাত্রা

চার দিক জলের ছন্দ,

 

জাহাজ ডুবিয়েছ বলে এত উল্লাস ?

তুমি কি ডুবনি মনুষ্যত্বের সমুদ্রে ?

যদি মানুষ হও, মানুষের জন্যই বিবেক

আমরা হেঁটে যাই অন্তকালের পথে

ধুলো ফুরায় না,

আমরাই ফুরিয়ে যাই পৃথিবীর মায়ায়

 

 

প্রথম দিন

 

আর তোমাকে জেনেছি শুভ্র মেঘের আড়ালে

ঘাস ফড়িং যেভাবে চলে যায়,

ঝরাপাতায় চৈত্রের শেষ বিকেলে তুমি এসেছিলে

বিষণ্ণতার রঙ মেখে, আলো ফুরবার আগেই বলেছ,

আসবে প্রথম দিন,

 

তারপর

সূর্য রাঙা অনেক সকাল হারিয়েছি

সজনে ডাটার বার তম প্রতিধ্বনি সমাপ্ত হল

জোড়া শালিকের আত্মহত্যার পর

একটি শালিক ক্লিনিক থেকে পালাল,

বুঝল ভালো হয়নি জন্মান্তর,

অনেক দিন পার হল প্রথম দিনের প্রত্যাশায়

অপরিণত বারান্দায় প্রভাত আলো বলে গেল আজ,

তুমি আসতে পার

জীবনের প্রথম দিন শুরু হতে পারে

বৈশাখের প্রথম দিনে

 

 

কবিতার প্রেক্ষাপট

 

আমার অংশাংশি জীবনের প্রতিবিম্ব অধ্যায়ে

বিচিত্র যন্ত্রণা বলে যায় তুমি আসবে,

ঝরে যাওয়া বিরান বাসরে সদ্য ফোটা কোন মুকুল

শত ঝাঁক পাখির উড়ন্ত ডানায় নীল আকাশ ছুঁয়ে

বলে যায় তুমি চলে যাওনি

চলে যাওয়া মানে, তুমি তো আসোনি যে

চলে যাওয়া শব্দটি ব্যবহার করা যায়

 

তুমি বৃষ্টিহীন বর্ষাতে নিরীহ চিরন্তন

ভালোবাসায় এসেছিলে, যদিও এ আমার কল্পনা,

তবুও বাস্তব

 

অকুণ্ঠ চিত্তে তোমাকে ভালবাসতে পারি বলে ইতো

আমি প্রেমিক

আর কবি

 

 

 

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।