শাহীদ লোটাসের ১০ কবিতা

বিরহী-কাজরী

 

নীল জ্যোৎস্নার আলো

আমার গা ভিজিয়ে দিয়েছে

তেপান্তরের মৃদু হাওয়া

এ কার সুঘ্রাণ?

 

যখন বুঝতে পারি

এ তোমার,

 

রক্তের প্রতিটি কণা হিম হয়ে আসে

অক্লান্ত তৃষ্ণায়

 

অভিমানীর হৃদয় থেকে পাওয়া ব্রে কিং নিউজ

 

শ্বেতাভ সকালে আত্মদ্রোহী পথ খোঁজে

যে প্রাণ চলে গেল নিরুদ্দেশে

তার জন্য কান্না নয়

বরং আগ্নেয়গিরি স্পর্শ করার অপেক্ষায়

ছুটে আসে যে প্রাণ

তার জন্য ভালোবাসা

বৃথা বিকেলে অকালবোধনে

তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম

পাঁচটি পাখি খেয়েছ তুমি ক্ষুধায়

আমি আজ পাখি শূন্য

তোমার চোখে দেখতে পাই সৌর সাদৃশ্য আলো,

আলোকিত হব বলে তোমাকে ভালোবাসি

কারুশিল্পীর শিল্পনৈপুণ্যে ভেবেছিলাম

পৃথিবী সুন্দর  মিথ্যে!

নর্দমা, কাদা, ঘৃণা, প্রতারণা হীন আর কিছু কি পেয়েছি ?

হরদম রাত কাঁদে তোমার তৃষ্ণায়,

তোমরা নগ্ন,

অনাবৃত করণে ভুলে যেতে চাও সভ্যতার চাদর

সভ্যতাকে বল বোকা,

 

চাঁদকে যতই রূপসী বলি না কেন, এ করুণার বানী,

করুণায় প্রেম নেই,

 

নগ্ন দেহে কতটুকু শ্রদ্ধা নগর বেধেছে তোমার?

 

রূপসী দেখলেই প্রেমে পড়তে নেই

 

রক্তাভ তিমির রাতে দেখেছিলাম

ডানা কাটা সুশ্রী নারীর নাচ,

বৃষ্টি ভেজা অন্ধকারে

 

মহামায়া দুর্গা এগিয়ে আসলেন,

উনিই নৃত্য পরিচালিকা যারা নৃত্যে

আমাদের মত বোকাপাঁঠাদের শিব বানায়

প্রেম করে স্বতন্ত্র লীলায়

আমরা বাঁশী বাজাই বাস অথবা ট্রেনে

জ্যামে আবার বেহালাও বাজাই

খিলখিল করে বর্ষা নামাই তৃষ্ণায়

 

সুশ্রী নারী গন নাচতে নাচতে চিত হয়ে পড়ে গেল

প্রাণপণে দৌড়ে গেলাম

চিত হয়ে ব্যথা পেল নাকি?

 

দেখি সব শূন্য সব ফাও

কেউ নেই, কারো উপস্থিতি বহন করেনা প্রকৃতি

নির্জন স্তব্ধতা আমাকে বলছে, বেটা হা বারাম

 

সাঁতার কাটি

 

কালো রাজকুমারীকে ভালোবেসে ছিলাম বলে

বাকি আর কাউকে ভালবাসতে পারলাম না

 

রূপসী চলেন

নীল নদে সাঁতার কাটি

 

উদাস দুপুর ,

রৌদ্রের পাহারায় একাকীত্ব সময়

সুখগুলো মরীচিকা করে

তুমি দাঁড়িয়ে আছ এইতো

কার প্রেমিকার এত সাধ জাগে?

এতো ধৈর্যে!

 

আমার ঝোড়া ঝোড়া প্রেম তুমি ছেঁটে ফেল

সোহাগা বয়ে চলে যাই অনেক দূর,

টলটল করে ঝরে কুঁড়ে ঘরে থাকা জল

ধ্রুব ভালোবাসায় অশ্রু মুছে

জড়িয়ে ধর আমায় প্রতি মুহূর্তের মত

কালো রাজ কুমারী

 

রূপসী চলেন

নীল নদে সাঁতার কাটি

 

রাতভর

 

ছেড়া পাতার পত্রগুলো আবার পড়ে দেখব কি ?

তপ্ত অশ্রুতে কত স্বপ্ন স্নান করেছে তোমার

উৎকণ্ঠায় ব্যাকুল শ্বাসে উড়িয়েছ বর্ণ

কত বার প্রত্যাশা করেছিলে আমাকে ?

আমি শুনতে পারিনি ভেবেছ ?

গাছের পাতাগুলো নড়েছিল ঠিক

অভিমানে

 

তাঁরাগুলো পিয়ন হয়ে ঠিকানা হীন পত্র নিয়ে উড়ে

আকাশে আজ

 

তুমি চিনতে পারণা

আমি আর বর্ণগুলো

আজ আমি একা

 

ছেড়া পাতার পত্রগুলো প্রেমিকা হয়ে কাদায় রাতভর

 

কল্পনার রচনা

 

তৃষ্ণার পৃথিবীতে ছুঁয়ে দিলে

তৃষ্ণার নারী

 

শুকিয়ে যাওয়া স্মৃতিতে

অচেনার রাজত্বে চমকে উঠি আচমকা

 

নগণ্য পাপে না হয় পাপীই হলাম

নিকষ অন্ধকারে প্রত্যাশা করে ছিলাম তোমায়

ভেবে ছিলাম হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবো

কিন্তু তুমি নেই, আলো এসে বলে যায়

 

একার অপরাধে কাউকে নিয়ে কাঁদা যায় না

 

একি পরাজয় ?

তোমার কাছে হেরে যাওয়া ?

একি তুচ্ছের বানী আমার প্রতি তোমার ?

 

এখনো গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি, পরাজয়ের

কল্পনার পাহারায় দুঃখ গুলো সব সময় নিরাপদ

ভালোবাসা ভুলতে পারি না অশ্রু জলে পরাজয় ধুয়ে যায়

মুছে যায় সব প্রত্যাশা, শুধু জেগে থাকে

তোমায় ভেবে, হতে পারতো এমন সুখের জীবন

মুহূর্তের পর মুহূর্ত কল্পনার রচনা

 

দংশন

 

আজ থেকে বহু সহস্র বছর পূর্বে

দেশান্তর হয়ে এসেছে বুঝি

ঐ গাংচিল

আকাশে আজ অনেক মেঘ,

হাজার হাজার বছর পরেও কি

নিঃসঙ্গ গাংচিল

দেখবো আমি এমনি মেঘলা দিনে ?

 

অবসাদ নিয়ে করুন চোখ তার,

খোঁজে ঠিকানা, পৃথিবী আঁধার

স্বরচিত দুঃখ গুলো চেনা স্বরে ডাকে তারে

আমি তারে কত বার দেখেছি রৌদ্র ঝরা

এমনি আকাশে, লাল টকটকে সূর্য

ঢেকে তার ডানা স্থির

 

আমি তারে দেখি অনেক অনেক দিন,

গভীর নিদ্রামগ্ন বিষণ্ণ ক্লান্ত দেহে ঘুম আর ঘুম

দেখি বেকার হৃদয় তার

দেখি কোন কোন দিন আকাশ বড় চঞ্চল

বাতাসে আনন্দ ধ্বনি নিশ্চল পৃথিবী

বড় উন্মাদ, দেখি সর্বত্রই নিষেধ ভাঙ্গা সংগ্রাম

সূর্য অন্য রকম

শত শতাব্দীর আনন্দ জেগে উঠেছে

মুঠো মুঠো রৌদ্রে স্মৃতি ঝরে পড়ে পৃথিবীতে

নব জাগরণে বিতৃষ্ণার বর্তমান

গাংচিল উড়ে

কত কত দিন ঘুমায় নী শুধু ভেবেছে

দুর্লভ জীবনের নগণ্য জন্মান্তরের কাহিনী,

জন্ম বুঝি তার অলক্ষ্মী রাতে

অপ্রাপ্তিতে যে রাত ফিরে আসে বার বার

 

রাত জাগা আরেফিনের দল ঘুম আর্দ্র

চোখ নিয়ে তাকায় নক্ষত্রের আকাশে

শিশিরে ডেকে আছে আকাশ, টপটপ

ফোটা পরে সবুজ পাতার কোণ ঘেঁষে রাত ভর,

সিক্ত প্রকৃতি

 

আজ চন্দ্রকলার অদৃশ্য কাল

গাংচিল তাকিয়ে আছে জন্মান্তরে

নক্ষত্রের আলো খেলা করে তার

সুখ-দুঃখ জননেন্দ্রিয় জীবন

 

 

প্রতীক্ষা

 

গহীন থেকে জেগে উঠেছে আবার

অন্তিম অলৌকিক অনুভব ,

প্রত্যাশিত একটি চাঁদ জেগে উঠুক নিয়ে

তার তারকা নক্ষত্র এই রাতের আকাশে

আর কতকাল প্রতীক্ষায় কাটাবো ?

এমনি রাতের পরে রাত ?

প্রত্যাশিত চাঁদ তুমি জেগে উঠো

জ্যোৎস্নার আলোতে দেখি অলৌকিক

আলেয়ার মূর্তি, সে যেন

আমায় ঘিরে নিঃশব্দে হাসে

প্রত্যাশিত চাঁদ তুমি জেগে উঠো

দুরূহ মৃত্যুতে দুটি প্রাণ তুমি কেঁড়ে নাও

এক করে দাও অদেখা অবশ্যই আসবে যে জীবন

সেই জীবনে

আর কত কাল ক্ষয় হবে কপোল বেয়ে তপ্ত জল ?

তাকে ভেবে আঁধারে কেঁদেছি কত কত কাল!

পৃথিবীর আকাশে আছে নষ্ট চন্দ্র

নষ্ট চাঁদ আমাকে দেখে খিলখিল করে হাসে

লজ্জায় নত আমার নয়ন

ঠুনকো আঘাতে ইতো এই বিষাক্ত বিরহ

দুর হবার নয়,

বিলীন ঐশ্বর্য

আমার বিবশ দৃষ্টিতে চঞ্চল জেগে ওঠে

তার দশটি আঙ্গুল

দুটি চোখ

নরম ঠোঁট

নাকের শ্বাস

আবার জেগে ওঠে, জ্যোৎস্নায় আমায় জরিয়ে ধরে

উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠে, আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়

আমি মরি হায় হায়,

আবার জেগে ওঠে

আবার জেগে ওঠে

পর গৃহ থেকে ভেসে আসে তার মিনতি

নিরাশ হৃদয়,অবরুদ্ধ চিৎকার

দাউ দাউ অগ্নিকুণ্ডে তার জীবন পোড়ার ঘ্রাণ

আবার জেগে ওঠে

আমি শুনতে পাই, চাঁদ

অন্য জীবনের চাঁদ

আমার চাঁদ, তুমি জেগে ওঠো

 

 

বিন্দু

 

তোমার বারান্দায় কি ধ্রুব নক্ষত্রের দৃষ্টি পড়ে ?

তাকিয়ে দেখ কি রাতের আকাশ ?

বড় জানতে ইচ্ছে করে এই নক্ষত্রের রাতে

চন্দ্রালোকের আজ রূপসী রাত

শুক তারার দিকে তাকিয়ে আছ কি তুমি

হিমেল নির্জনতায়

এই আকাশ তলায় আমরা দু-জন

তবুও কত ব্যবধান দু-জনার দু-জীবনের

দক্ষিণা মলয় বায়ু আসে আমাদের দেশে

তুমি কি এই বায়ুতে উড়িয়েছ চুল

ঠিক সেদিনের মত ?

বড় জানতে ইচ্ছে হয় এই নক্ষত্রের রাতে

শহরের কোলাহলে তুমি আজ বড় ব্যস্ত

স্থির আকাশে অস্থির মন কতবার

ছুটে গেল তোমায় দেখবে বলে, জোনাকির আলো দেখেছি

মিটিমিটি রূপসী রাত, তোমার কথা ভাবলেই

সব রূপ ম্লান হয়ে যায়, তুমি বড় রূপবতী,

রূপকথার মত

 

নিদ্রাহীন আমি তাকিয়ে আছি এই আকাশে

তুমিও কি দেখছ সব ? দৃষ্টি মিলন হয়েছে কি দু-জনার ?

 

এত এত দিন পর বড় জানতে ইচ্ছে হয় এই নক্ষত্রের রাতে

 

 

আঁধার

 

অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি

 

আর কত আঁধার আড়ালে রাখবে আমাদের ?

চার দিকে দুষ্ট শিশিরের কণা

চক্ষু থেকেও দৃষ্টিহীন আমরা

অশ্রু অনুতাপে স্নান করে নিছক অনুমানে

খুঁজি দু-জনার দুটি মুখ

 

নিবিড় অন্ধকার ,

নির্জন চারিদিক

রে রে রে হাঁক ছেড়ে আসে সুখ হরণীর দল

আমার সব সুখ কেড়ে নিলো .

কেউ কি আছ ?

 

না নেই ,

চারদিক জনাকীর্ণ স্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে

জেগে আছে আঁধারিয়া সব

 

অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি

 

নিশাচর পাখি চেয়ে আছে আকাশের বুকে

আকাশে জ্যোৎস্না হীন অহরহ চন্দ্র,

এক দুই শত লক্ষ

চন্দ্রগুলো আমাদের প্রদক্ষিণ করে

হাসে খিল খিল করে,

আরও আছে পরিমল নক্ষত্রের দল

কি নির্দয় ওরা,

ফুটে আছে রাতের আকাশে

 

রাতের গায়ে রাত, আর কত

ব্যাপ্ত ব্যাকুলতা রাখবে আমাদের ?

মৃত সবুজ,

মৃত লাল,

মৃত হলুদ,

নীল নীলাভ

সমস্তই কালো, কৃষ্ণ কালো

অহরহ চন্দ্রের কেন জ্যোৎস্না নেই ?

ফুটফুটে জ্যোৎস্নার আশ্বাসে মেতে রাখে আমায়

 

অনুভব করি

তার দুটি চোখ স্বপ্নে ঝলমল করে

লাস্য ছন্দে হেঁটে চলছে দূর দূর বহুদূরে

মিথ্যে প্ররোচনায় নিয়ে যায় চন্দ্রের দল

 

আঁধারে আচ্ছন্নতায় খুঁজি তার চুলের ঘ্রাণ,

লালন করি দুটি চোখে দৃষ্টির স্নান

অন্ধকার রাত্রি শেষ হয়নি

পৃথিবীর সবাই ঘুমিয়ে আছে

ভাঙ্গে না কারো ঘুম

 

হিমেল রাত্রি,

লালায়িত এই রাতে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে

আমরা দুটি প্রাণ

কোনদিন কি হবে না দেখা

 

দু-জনার দুটি মুখ ?

 

প্রতীক্ষায় রই প্রভাতের আশায়

ভারী আঁধার সরে আসবে প্রত্যাশিত আলো

উজ্জ্বল হবে সব রঙ

লাল,

নীল,

হলুদ,

সাদা

সব রঙ ধরা দিবে তাঁর অপরূপ মুখে

প্রাণ ভরে দেখবো তাঁর ঠোঁট, চোখ,

মায়াবী আঁচল

সে হাসবে, দৃষ্টি দিবে দৃষ্টির মাঝে

অন্ধকার চারদিক

অন্ধকার রাত্রি এখনো শেষ হয়নি

 

 

 

 

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।