মোশারফ হোসেন স্বাধীনের প্রবন্ধ-“সংস্কৃতির চর্চার আজ কাল”
“সংস্কৃতির চর্চার আজ- কাল”
মোশারফ হোসেন (স্বাধীন)
না, ভাববেন না আমি আপনাদের উপদেশ দিচ্ছি ভুলেও এটা ভাববেন না। আমার কি আর সে সাহস আছে। প্রযুক্তির যুুুুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্যতম বিষয়। তরুণ কি বৃদ্ধ সকলের কাছে সমান জনপ্রিয় এক মাধ্যমের নাম ফেসবুক তরুণ বয়সে আবিস্কার করা এই জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। শুুুুরুতে অনেক কিছু সুবিধার কমতি থাকলেও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে এই ফেসবুক নামে সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমটিতে।আজকাল ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে অনেক কিছু করা যায় এই ফেসবুকের মাধ্যমে যা নতুন করে বলার কিছু নেই কারন এই বিষয়ে সকল বয়সের মানুষ কম বেশী জানে আমার কথাবলার বিষয়টা মূলত এটা না তাই কথা বাড়িয়ে পাঠকের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারন হতে চাই না। বর্তমান সময়ে পৃৃৃথিবীতে অসংখ্য সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফেসবুক, টুুুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ,বিভার ইত্যাদি ৷সামাজিক যোগাযেগের মাধ্যমগুলোতে ভিন্নতা থাকলেও কাজ কিন্তু নামের মতো অভিন্ন যদিও নিরাপত্তা ও শর্তাবলিতে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আজকাল আমাদের দেশে এতটাই ক্ষমতা পেয়েছে যে রবীন্দ্রনাথ এ যুগে থাকলে ফেসবুকের কল্যাণে আরও কয়েকটা নোবেল পাওয়ার সম্ভবানা থাকত।কোথায় নেই এই “প্রাণহীন সচল” মাধ্যমটি! শহুরে ওয়াশরুম আর গ্রামের টাট্রি( বাথরুম) থেকে বিছানা, পথচলা, অফিস কোথায় নেই এটা?আজকাল ‘তথাকথিত আদুনিক’ ও নব্য সামাজিকরনে শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা বাসর রাতে কি করে বিড়াল মারে তাও শেয়ার করতে দেখা যায় মহাশয় ফেসবুকের কল্যাণে।আর হ্যাঁ আমি এগুলো কেন বলছি আপনারা কি আমার থেকে কম জানেন? উত্তরও আমার জানা -‘না’তাহলে পুরাতন কথা মার্কেটে চলবে না এটা জেনেও কেন মুখ নাড়াচ্ছি! কারন হলো কাজ নেই তাই। আমিও তো নব্য আদুনিক ছোঁয়া তো লাগবেই একটু আধটু।যাক সে কথা, যুগের সাথে তাল কথাটা অধিকতর সত্য, সদা সত্য না মানার উপাই নেই কিন্তু তাই বলে আমরা কি আমাদের শিকর ভুলে যাব? এটা বললে নব্য গুণিরা আবার বলবেন- আমরা কি শিকর আকরে ধরে থাকব? শিখরে যাব না? যাবেন, কে মানা করেছে? যাবার আগে একটু বলে যাবেন সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য আপনার কোন কালের শুত্রু যে তাকে উপেক্ষা করছেন। সমাজের মূল যা তাই এড়িয়ে যাচ্ছেন! তাল তো মিলাবেন’ সমন্বয় ‘ কথাটা ভুলে যাচ্ছেন তাই এই অধপতন।’ বেওয়ারিশ প্রযুক্তি ‘ র ব্যবহার সংস্কৃতি আজ মানুষের বিবেকের জায়গা দখলের দারপ্রান্তে। আজ এদিক ওদিক উঁকি দিলে মনে হয় আমরা প্রযুক্তির জনক নই বরং প্রযুক্তি -ই আমাদের জনক!যদি এমনটা হয় যে প্রযুক্তি হবে আমাদের কল্যাণে, প্রযুক্তি হবে আমাদের সংস্কৃতির কল্যাণে, প্রযুক্তি হবে আমাদের ঐতিহ্যের কল্যাণে। তাহলেই তো সার্বিক কল্যাণ। বাকী কি রইল? আমরা ভুলে যাই সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে স্থান, কালের তথা ভৌগলিক পার্থক্যের কথা। ‘আসল’ – ই ফ্যাশন। নকল সর্বদা নিম্নমুখী। যেমন ধরুন, ইউরোপিয়ান দেশে দেখা যায় তারা কুকুরকে পালন করে, রাতে নিয়ে ঘুমায় এটা অর্থ ওয়ালাদের ফ্যাশন। আপনি আমাদের দেশে দেখুন বিষয়টা তেমন দেখা যায় না তবে হবে হয়তো কোন এক সময়।অামি যা বলতে চাই তা হলো আপনি যদি ইউরোপিয়ানদের কুকুর আর আমাদের কুকুরকে এক করে ভাবেন তাহলে বিষয়টা কি হলো আর যদি ভাবনা অনুযায়ি বিচানায় নিয়ে ঘুমাতে যান.. তবে – পরবর্তি পর্যায় সম্পর্কে আপনি কল্পনা করুন! আমরা কেন অন্যের সংস্কৃতি লালন করব আমাদের সংস্কৃতিকে পিছনে রেখে? আপনারা ভাববেন না আমি ভিন্ন সংস্কৃতি চর্চার ব্যাপারে খ্যাপাটে। বিষয় হলো আমরা আমাদের সংস্কৃতি লালন করব চর্চার মাধ্যমে এতে ‘ছোটলোকি স্বভাব কোথায় দেখা যায় আমি বুঝি না! আমি বিস্মিত হই যখন দেখি আমার এক শিক্ষিত বন্ধু খাবার টেবিলে হাতে খেতে দেখে আরেক জনকে বলছে “শহুরে মেহমান আছে ভাই একটু চামিচ এর দিখে তাকা” আমাদের পরসংস্কৃতি চর্চা এতটাই বেড়েছে যে সন্দেহ জাগে আমাদের পরবর্তি প্রজন্মরা নিজেদের পরিচয় নিজের সংস্কৃতিতে নয় বরং দার করা সংস্কৃতিতে দিবে তারা ভুলেই যাবে যে আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। আমরা নিজেরা যেমন অপসংস্কৃতিকে সংস্কৃতি ও ফ্যাশন এর সার্টিফিকেট দেই তেমনি পাশের জনকে উপেক্ষা করি। কেউ এটা করে হেয়ালিপনায় আবার কারও এটা নেশা অথবা পেশা! এই দায় কার? কোথায় সেই সমাজ যেখানে বড়দেরকে বয়সে, পদবিতে মর্যাদা দেওয়া হত? আজকাল পত্রিকা খুললে বাইরাল একটা শব্দ চোখে পরে তা হলো’ বাইরাল’ মানুষ সামাজিক ভাবে অনেক বড় অপরাধকে অপরাধ-ই মনে করে না! কেউ কেউ আবার বড় বড় এমনই অনেক অপরাধ অাছে যেগুলোকে ফ্যাশন বলে। আদুনিক বলে কথা! কিছু দিন আগে দেখলাম কয়েকজন কিশোর তাদের এক বন্ধুকে গাছের সাথে বেধে জন্মদিন পালন করছে! নজরুল এ সময় বেঁচে থাকলে দুরন্তপনায় এদের স্যালুট দিত। প্রশ্ন হলো কিশোরদের সংস্কৃতি চর্চা ও আচরনে এই’ হিংস্রময় আনন্দ ‘ উদযাপনের চিন্তা উদয়ে কারা দায়ি? উত্তর সোজা আপনি বা আমি বা আপনারা যারা শিক্ষিত যারা বুঝি কোনটা আসল আর কোনটা নকল।তবে কেন এই অবহেলা? আজ দেখুন কিশোর অপরাধের পরিধি কতটা বিস্তৃত হচ্ছে।শিক্ষিত হয়েও, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বড় হয়েও যদি আপনি আপনার দামড়া ছেলেকে বা আদরের মেয়েটিকে জন্মদিন বা কোন বিশেষ দিনে নাইট পর্টি নামক ওয়েস্টার্ন অপসংস্কৃতি চর্চার জন্য কয়সা তুলে দেন তাহলে আমি বলব আপনার থেকে অক্ষর জ্ঞানে যারা আপনাদের কাছে অশিক্ষিত তারাই ভালো কারন অন্তত পক্ষে তারা খাঁটি বাংলা ও বাঙ্গালী সংস্কৃতিটা চর্চা করে।তরুণ ভাই বোন আপনাদের বলি রেওয়াজ বলে তো একটা কথা আছে, তাই না? সিস্টেমের মধ্যে থেকে একটা বিষয় বেচে নিন বাইরাল হওয়ার জন্য তাহলে সমস্যা ছিল নাই, আপনি/ আপনারা ভুল জায়গায় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল এন্ট্রি দিবন না।তাহলেই বিরূপ মন্তব্য শুনতে হবে ।যেমন অতি সাম্প্রতিক আমার এক বোন সে বাইক চালাতেই পারে তাই বলে বিয়ের রীতি ওনার মানা উচিত ছিল।কিছু মনে করবেন না খোঁজ নিয়ে দেখুন ওনার শ্বশুর বাড়ির অনেকে আছে হয়তো বিষয়টা হাস্যকর ও ক্ষোভের চোখে দেখছে।উনি যা করলেন তা কোন বিষয়- ই না তবে দেশ, কাল ও ধর্ম ভেদে যে সংস্কৃতির একটা ভিন্নতা আছে এটা সকলকে মানতে হবে। বিষয়টা ফিল্মি হয়ে গেল। যাই হোক শুভ কামনা রইল আশা করি বিয়ের পরবর্তি জীবনে এই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন যাতে করে অনাগত জীবন স্বস্তিময় হয়। এত গেল উদাহরণ আপনি যখন ঐ খবর এর কমেন্ট বক্স এ যাবেন তখন দেখবেন কত রমরমা সংস্কৃতি ও সামাজিকরন চর্চার সমাহার! এই অমানুষিকতা সমাজ তথা দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে অনেক সময় এমন কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইডি থেকে নারী পুরুষ নিয়ে বাজে পোস্ট করা হয় । ভাই/ বোন কয়েকটা লাইক আর কমেন্টের আশায় অশান্তি সৃষ্টি কেন করবেন? পরপারের কথা চিন্তা করুন নিজেকে সম্মান করুন, অন্যকে সম্মান করুন। আত্নসম্মানকে মনে রাখুন। আপনি পুরুষ হিসেবে নিজের আত্নসম্মান যেমন আছে তেমনি নারী হিসেবে তাদেরও আত্নসম্মান আছে। আপনি যখন লাইক বা কমেন্টের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা বাড়ানের জন্য একজন নারী পুরুষ আর একজন পুরুষ হয়েও নারী সাজেন তখন বিষয়টা আপনার জন্মদাতা মাতা-পিতার সম্মান নষ্ট হয়, আপনার নিজের আত্নসম্মান নষ্ট হয়। কেও না জানুক আপনি তে জানেন আপনার অপরাধের কথা তাহলে নিজের কাছে নিজে ছোট কেন হবেন? কেন আপনি আপনার আত্নসম্মান হারাবেন? মনে রাখবেন অপরাধ অপরাধ- ই হয় অন্য কোন নাম দিলেও তা অপরাধ – ই। আজকাল টেনইজার কিশোর/ কিশোরী প্রযুক্তি হাতে পেয়ে একজন ১৪ বছরের ছেলে/মেয়ে নিজেকে ভাবছে ২৪ বছরের যুবক! /যুবতি আচরনও করছে সে অনুযায়ি। সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নিজেদের মতো! যা সামাজিকরন শিক্ষা তথা সুষ্ট সমাজ জীবনের অন্তরায়।” ছোট অপরাধ এটা সবাই করে, তেমন ব্যাপার না ” এই অযুহাতগুলো দিয়ে আপনি অপরাধের তিব্রতা যেমন বিন্দু মাত্র কমাতে পারবেন না তেমনি পারবেন না নিজেকে অপরাধমুক্ত করতে। তাই আসুন নিজে বদলে যাই, নিজেরা নিজেদের সম্মান করি, অপরকে সম্মান করি। অপরাধীকে অপরাধী ও অপরাধকে অপরাধ হিসেবে দেখি। পাশাপাশি ভালো আচরন তথা সুষ্ট সংস্কৃতি নিজে চর্চা করি অন্যকে উৎসাহিত করি। পরিবার তথা সমাজের ছোটদের সামাজিকরন শিক্ষা গ্রহনে সহায়তা করি।চলুন সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীকে বদলে দেই সুষ্ট, সুন্দর প্রযুক্তি,সংস্কৃতির ব্যবহারে। অকল্যাণে নয় নিজের ও অন্যের কল্যাণে সত্যের পথে ব্যবহার করি জ্ঞান। কারন সত্যই সুন্দর, সুন্দর- ই সত্য।
মোশারফ হোসেন (স্বাধীন)
( কিছু ভুল হলে ক্ষমা চাই। ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ)
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ