পিটারাম পিটিয়ে যাও
শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে জাতির মানসিক বিকাশ স্তব্ধ করা হয়েছে; ডাক্তারকে পিটিয়ে মেরে জাতির শারীরিক বিকাশ স্তব্ধ করা হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কিশোর বিদ্রোহীদের হেলমেট পরে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নিরাপদ সড়ককে “হাইওয়ে টু হেভেন” বানানো হয়েছে।
কৃষক পিটিয়ে মেরে হয়েছে অন্নপাপ, শ্রমিক পিটিয়ে মেরে জাতি পেয়েছে অলসতা পাপ।
রাজপথে রাজনীতিক পিটিয়ে “বণিকের মানদণ্ড উদয় হয়েছে রাজদন্ড হিসেবে”।
বিশ্বজিতকে পিটিয়ে মেরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আদালতে “নো ওয়ান কিল্ড”-এর বিচার ব্যবস্থা। সাংবাদিক সাগর রুনিকে পিটিয়ে হত্যা করে রোমের নীরো এখন ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিছানায় শুয়ে-বসে-উঠে বেহালা বাজায়।
ত্বকীকে পিটিয়ে হত্যা করে এখন “খেলা হবে”-র সাত খুন মাফের রাস্তাটাই সহি হয়েছে।
তনুকে পিটিয়ে মেরে শান্তি যাজক জোসেফের ভাই এখন যীশু অথবা শিশু হয়ে ঘুরেন। মেধাকে পিটিয়ে মেরে রুলিং এলিট বঙ্গপাঞ্জাবির ভাওয়ালপিন্ডির বুদ্ধির রোশনাইয়ে টেকা দায়।
জিসি দেবকে পিটিয়ে মেরে সেই যে অপরাজেয় বাংলায় সোন্নত সাহসের শূন্যতা; সেই থেকে “ছা-ছপ-ছমুছা”-র রক্সফোর্ড অদৃশ্য সাবানে হাত কচলায়।
আলতাফ মাহমুদকে পিটিয়ে পাখিটার বুকে তীর মেরে দিলে; সুর হারিয়ে যায়; তাইতো. অসুরের আলাপটাকেই এখন পিঠাপুলির আসরে সংগীত বলে।
রাওয়ালপিন্ডি থেকে ভাওয়ালপিন্ডি সর্বত্রই মোদির দলিত পিটানোর মদমত্ততা; বালিশ বেচার ছেলে তাই পথচারী পিটিয়ে রক্তমূল্য পরিশোধ করে উড়ে যেতে পারে এয়ারবাসে।
কাছিম কমিশনের ছেলে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে পিটিয়ে দিয়ে ট্রাম্পল্যান্ডে সারি সারি সেকেন্ড হোম কিনে ফেলে। কী অলৌকিক পেটানোর চেরাগ! “ও বিজলী চলে যেওনা।”
বালিশ-কাছিমের মৃত্যু হলে, জাতির বিবেক নৈতিকতা পিটায়; দুর্নীতিবাজের সমালোচনা করলে পুলিশ সাতান্ন ধারা পিটায়। কালচারাল ভটভটি পিটিয়ে চেতনার পবিত্রতা আর শূচিতা মেলে ধরে। এলিফেন্ট ম্যান তখন সুচিন্তার ধারাপাত পিটায়।
ইতিহাস পিটিয়ে ব্যাংক লাইসেন্স; ঢোল পিটিয়ে শেয়ার বাজারে “ওশান ইলেভেনে”-র মতো টাকা উড়িয়ে সুইস ব্যাংকে নিয়ে গেলে; হুন্ডিদেশের রাজপুত্রেরা খুব করে কাসিনোতে তাস পিটায়; অনেক করে পাপিয়া নাচায়;”ঝাকা নাকা ঝাকা নাকা দেহ দোলানা; মীরা বাঈ-হেইলা-দুইলা দরবার নাচায়।” সে কথা ফেসবুকে বললে সান্ত্রীরা এসে সাংবাদিক-লেখক-কার্টুনিস্ট পিটায়।
আর এই যে বাংলাদেশকে পিটিয়ে ছক্কার বল ক্যানাডা-এমেরিকা-মালয়েশিয়া-দুবাই-এর স্টেডিয়ামে পৌঁছে দিয়ে দেশপ্রেমের “মার ছক্কা মার মার।”
হাটহাজারীর পোপ “মুক্ত মানুষ পিটিয়ে” বেহেশতের পাসপোর্ট দিলে; পোপ বলেন, জমি দিন টেকা দিন; কিছুই না দিয়ে কেন হাসান মাহমুদ! হো হো হাসিতে পোপ বলেন, নাস্তিক পেটানো ওয়াজিব।
শোকরানা মেহেফিল পিটিয়ে “এ কোন মধুর শরাব দিলে আল-আরাবি সাকি?”
পিটিয়ে গুম, পিটিয়ে ক্রসফায়ার, স্বজনের কান্নার শব্দ বিস্মৃতিতে হারিয়ে যায়, “আব্বু তুমি কী কান্না করতেছো?”
পিতাকে পিটিয়ে হত্যা করে সিঁড়িতে ফেলে রাখলে; আর সেই সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে ওঠা হয়না পিতৃঘাতী সন্তানদের।
আবরার ফাহাদ পিটিয়ে চেতনার চেকপোস্টেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আঁধার নামায়।
সুবর্ণগোলক পিটিয়ে পিটিয়ে বেয়াইয়েরা রুলিং এলিট ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাতাবি লেবু পিটিয়ে অর্থনীতির পদ্মফুল জিডিপির অক্কা হাঁকানোর প্রস্তুতি নেয়।
করোনাকালে মুচকি হেসে দেশপ্রেম বসন্তের কোকিলেরা চার্টার্ড প্লেনে সেকেন্ড হোমে উড়ে যাবার কালে হাঁক দেয়, পিটারাম পিটিয়ে যাও।
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ