আমাদের কাছে বড় বিষয় হলো অভিনেত্রীর বিয়ে, দেশ নয়!

কাকন রেজা: 

আমি আশ্চর্য হই কিছু মানুষের জ্ঞান দেয়ার প্রচেষ্টা দেখে। একজন অভিনেত্রী বিয়ে করলো না একা থাকলো সেটা তার একান্তই ব‌্যক্তিগত ব‌্যাপার। ব‌্যক্তিগত ব‌্যাপারে নাক গলাতে নেই। তবু মানুষজন সামাজিকমাধ‌্যমে নাক গলাচ্ছে। ফেসবুকে মানুষজন পোস্ট দিচ্ছেন। সেই পোস্ট নিয়েই আপত্তি জ্ঞানীনজদের।

তা জ্ঞানী ভাইদের বলি, শমী কায়সার বিয়ে করছেন এই খবরটা ফেসবুকের সাধারণ ইউজাররা কোথা থেকে জানলো? জানলো, গণমাধ‌্যম থেকে। একজন সেলেব্রেটি বিয়ে করেছে এটা বিনোদন পাতা বা বিভাগের খবর। এমন খবর করতেই হবে এমন কথা নয়। করা না করা কোনটাতেই দোষ নেই। কিন্তু দোষটা হয় তাকে প্রধান খবরের শ্রেণিতে ঢোকালে। সেই দোষটা আরো বৃদ্ধি পায় যখন ‘তৃতীয়’ শব্দটা শিরোনামে জুড়ে দেয়া হয়। ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, ‘তৃতীয়’ বিয়েটা অন‌্যায় কিছু। আরে জ্ঞানী ভাইয়েরা বিয়ে তৃতীয় বা চতুর্থই হোক তার তো একটা সামাজিক স্বীকৃতি আছে। যারা সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়া ‘লিভিং টুগেদারে’ আছেন, তাদের অবস্থা কী, তাদের নিয়ে কোনো গণমাধ‌্যমতো আগ্রহী হয় না। ‘তৃতীয়’ শব্দটাকে ‘পিন’ করে তাকে অনেকটাই অনাচার হিসেবে আখ‌্যায়িত করার যে এজেন্ডা এটাই ইয়েলো জার্নালিজম। বিপরীতে মূল সামাজিক অনাচারকে সহ‌্য বা আত্মস্থ করে নেবার প্রবণতা আরো বড় হলুদ সাংবাদিকতা।

সাধারণ ফেসবুক ইউজাররা নাক গলায় তখন, যখন তারা গণমাধ‌্যমের কাছ থেকে এমন আলাপ বা গসিপের উপকরণ পায়। সুতরাং জ্ঞানীকুল ফেসবুকের লোকজনকে না বলে গণমাধ‌্যমকে বলেন। তারা যেনো বুঝে-শুনে সামলিয়ে খবর প্রকাশ করেন। শমী কায়সার কারো ভালো না লাগার পাত্রী হতেই পারেন। নানা কারণে তার সাথে কোনো মাধ‌্যেমের খুনসুটি থাকতেই পারে। তাই বলে শমী কায়সারকে বিব্রত করতে গিয়ে পুরো নারী সমাজকে বিব্রত করার কোনো মানে হয় না। তবে আশ্চর্য হলাম এখানে নারীবাদীদের চুপ থাকতে দেখে। শমী কায়সার এবং তার মা পান্না কায়সারও নারীবাদের বড় মুখ। অথচ শমী কায়সারের সাথে যার বিয়ে হচ্ছে সেই পুরুষ মানুষটির কত নম্বর বিয়ে তা কিন্তু খবরের শিরোনাম হয়নি। হতে পারতো ‘তার’ অত নম্বর স্ত্রী হলেন শমী কায়সার। হয়নি! এই যে কিছু মিডিয়ার এমন শিরোনাম এবং আচরণ, এটা হলো পুরুষতান্ত্রিক।

পুরুষতান্ত্রিকতার মন্ত্র জপা নারীবাদীরা কিন্তু এ আচরণটিও ধরতে পারেননি। আমাদের নারীবাদীরা পুরুষতান্ত্রিক আচরণ ধরতে গিয়েও গুলিয়ে ফেলেন। অথচ এমন শিরোনামের প্রতিবাদ হওয়া উচিত ছিলো ফেমিনিস্টদের কাছ থেকেই। ধর্ষণের ব‌্যাপারে সিগন‌্যাল গ্রিন না থাকায় না হয় খোলসের ভেতরেই রইলেন, মাথা না বের করলেন। কিন্তু শমী কায়সার তো নিজেদের দলেরই লোক; তার ব‌্যাপারেও কেনো তারা চুপ রইলেন বুঝলাম না! আর কিছু কিছু জ্ঞানীজন কেনো ফেসবুক ইউজারদের উপর খেপে উঠলেন তাও বুঝলাম না।

ফেসবুক হলো সামাজিকমাধ‌্যম। আর সামাজিকমাধ‌্যমে সমাজে ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে আলাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। আর সে আলাপ করবে সাধারণ মানুষ। যারা দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে নেবার আগে একটু খোশগল্প করে নেন কিংবা রাতে ঘুমুবার আগে একটু আলাপে শান্তি খোঁজেন। সাধারণের এসব অতি সাধারণ ব‌্যাপারে বুদ্ধিজীবীদের নাক গলানোর কী দরকার। তারচেয়ে বুদ্ধিজীবীরা নাক গলান সমাজ আর রাষ্ট্রের আলাপে। কেনো সমাজ-সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে তা নিয়ে কথা বলুন। রাষ্ট্র ব‌্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নিয়ে আলাপ করুন। তা না করে সাধারণ মানুষের আলোচনা নিয়ে মাতলেন! যার বিষয় একজন অভিনেত্রীর বিয়ে! হাউ ফানি! বড়ই বিচিত্র আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীকুল। ফেমিনিস্টদের তো কথাই নেই।

You may also like...

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।