আঁধারের প্রসিদ্ধি

***আঁধারের প্রসিদ্ধি (পর্ব-১)***

ঘটনার শুরু দিনাজপুরে, ২০০১ সাল। রুধিরা তখন মাএ ৪ বছরের। খুব আগ্রহী আর খুশি, খালামনির বিয়ে হচ্ছে । ঘরের মুরুব্বিরা ঠিক করেছে বিয়ের পর সরাসরি দিনাজপুর যাবে , রুধিরাও বায়না ধরে সেও যাবে দিনাজপুর। আগে আগে বরের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে সে । হাজার হলেও তার ছোট আম্মুর বিয়ে হয়েছে । গাড়িতে করে দিনাজপুরের জন্যে রওনা দিল সবাই, নব-বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে বসল রুধিরা। সে খুব খুশি নতুন জায়গায় যাচ্ছে এই ভেবে।

শীতের সময় ছিল। সবাই দিনাজপুর পৌছালো খুব সকালে। ঘুরাঘুরি, নানান ধরনের উৎসব। রাতে খড়ে আগুন লাগিয়ে সবাই ঘেরাও করে বসে আড্ডা, খাওয়া, পিঠা উৎসব কত কিছুই না চলছিল । দিনগুলো ভালোই কাটছিল। একদিন সবাই মিলে ঠিক করে নব-দম্পতিদের কে নিয়ে ঘুরতে যাবে। সাথে রুধিরাও যাবে। খালামনিকে ছাড়া তার দিন যেন কাটেই না।

রুধিরাকে তার খালামনি লাল রঙের একটি জামা পরিয়ে দিলও। কপালে বড় করে চাঁদ এঁকে দিল যেন কারো নজর না লাগে। সে কি আর জানত, রুধিরার উপর কোনো মানুষের নজর পড়বে না।

অনেক ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরতে ফিরতে তখন মাগরিবের আযানের সময় হয়ে যায়। সবাই ভাবে আযানের পড়ে গেলে বকা দিবে তাই ঠিক করে শর্টকাট পথে যাবে । শর্টকাট পথটি ছিল ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে সরাসরি আমাদের বাসার পেছনের রাস্তায় উঠা যাবে। বাসার পেছনের রাস্তায় উঠার আগে একটি তাল গাছ ছিল । গাছটির সম্পর্কে অনেকে অনেক গল্প ছড়িয়েছে, তাই সবার ধারণা এই সময়ে জায়গাটি ভালো না এই কারণে সবাই প্রথমেই সতর্কবাণী দিয়ে দিয়েছে কেউ পথে যেন না থামে। সবাই যেন সাথে সাথে থাকে। সবাই খুব জলদি হাটা শুরু করলো, রুধিরা সবার পেছনে ছিল। সবাই যখন পথ শেষে তাল গাছ পেরিয়ে উঠে চলে যাচ্ছে, তখন রুধিরা খুব পেছনে পড়ে যায় । কিন্তু কেউ খেয়াল করল না। রুধিরা তখন পেছনেই পড়ে রইল আর সবাই বাসায় চলে গেছে।

সবাই ভাবছে রুধিরা হয়তোবা বাসায় চলে গেছে তাই আর খুঁজাখুঁজি করে লাভ নেই । যে যার মতো সময় কাটাতে লাগলো । রাতে যখন সবাই একসাথে খেতে বসবে এমন সময় খালামনি রুধিরাকে ডেকে কোন সাড়া পেল না। সবাই আতঙ্কে খাবার ছেড়ে বেরিয়ে গেল রুধিরাকে খুঁজতে । কেউ কেউ বলছে হইতবা রুধিরা ঘুমিয়ে আছে। তাই সবাই ঘরের মধ্যেই খুঁজাখুঁজি করছে।

কোন সাড়া না পেয়ে খালামনি, ভাইয়া, সবাই বাইরে খুঁজাখুঁজি শুরু করে রুধিরা কোথায়? । পাগলপারা হয়ে রাত ১০.৩০ টার দিকে খালামনির মনে পড়ে রুধিরা কি রাস্তায় নাকি এখনো ?

বড় নানু চিৎকার দিয়ে খালামনিকে বলে উঠে আমি আগেই বলেছিলাম দেরি হোক কিন্তু ওই ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে আসতে হবে না কিন্তু তোমরা আমার কথা যদি শুনতে তাহলে আর এমন কিছু হতো না। উনি আরো বলে ওদিক দিয়ে যখন এসেছ ভালো কথা, বলেছিলাম তো ওখানে কেও থামবে না, আর বাচ্চাটিকে রেখে এসেছ ধানক্ষেতে । তোমরা কি জানো না জায়গাটি কত খারাপ?!!!

উনার কথা শুনে সবাই দৌড় দিয়ে চলে যায় তাল গাছের কাছে বাড়ির পেছনে । সবাই গিয়ে যা দেখে তা হয়তোবা সত্যি ছিল না।

রুধিরা তাল গাছের নিচে দিব্যি দাড়িয়ে আছে। এক পা তাল গাছের গোঁড়ার সাথে যে গর্ত ছিল সেখানে ঢুকে আছে। সবাইকে দেখে রুধিরা বলে উঠে এতবার এতক্ষণ ধরে ডাকছিলাম কেউ কি শুনো নাই??

সবাই ওকে গর্ত থেকে উঠিয়ে ঘরে নিয়ে যায় এবং হাত মুখ পরিষ্কার করে দেয় । সব ঠিক ছিল, সবাই একসাথে খেতে বসেছে সাথে রুধিরাও রয়েছে। রুধিরার আচরণ খুব স্বাভাবিক ছিল কিন্তু বড় নানুর চোখে রুধিরা আর আগের মতো নেই ।

to be continued…………………………………

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।